খাস জমিতে ভবন নির্মাণ করছেন ইউএনও অফিসের ড্রাইভার
খাস জমি লিজ নিয়ে ও খাস জমিতে থাকা সরকারি ঘর ভাড়া নিয়ে প্রায় ২৫ বছর ব্যবহারের পর এখন সেই জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন পাবনার ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের গাড়িচালক মুকুল উদ্দিন।
স্থানীয়রা বলছেন, নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে পৌর এলাকার প্রধান সড়কের পাশের খাস জমিতে গত চার মাস ধরে ভবন নির্মাণের কাজ করছেন মুকুল। কিন্তু, সরকারি অফিসের চালক হওয়ায় কেউ তাকে বাধা দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গত সপ্তাহে ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারী নগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বনওয়ারী নগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে দুই ইউনিট বিশিষ্ট পাঁচতলা এই ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। পাঁচতলা বিশিষ্ট দুটি ইউনিটের ভবনের বেসওয়ার্ক ও গ্রাউন্ড ফ্লোরের পিলার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।
বনওয়ারী নগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউল হক বলেন, ‘সরকারি অফিসের চালক হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে দিনে দিনে খাস জমির পুরনো বাড়ির অবকাঠামো ও গাছপালা কেটে বিক্রি করে এখন অবৈধভাবে পাঁচতলা ভবনও নির্মাণ শুরু করেছেন মুকুল। যখন তিনি পুরনো কাঠামো ভেঙে সরকারি জমি থেকে গাছ বিক্রি করছিলেন, তখন আমরা পাবনার জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই এখন তিনি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন।’
বনওয়ারী নগর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কেএম হাবিবুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মুকুলের দখলে থাকা পৌর এলাকার খালিশাদহ মৌজায় ১২ শতাংশ আয়তনের সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে এক সময় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাদের সরকারি বাসভবন ছিল। পরিত্যক্ত পড়ে থাকায় ১৯৯৬ সালে মাসিক দুই শ টাকা ভাড়া চুক্তিতে বাড়িটি স্ত্রী রাশিদা বেগমের নামে নামে ইজারা নেন মুকুল উদ্দিন। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি সেখানে বসবাস শুরু করেন।
‘এটি খাস জমি। সরকারি সম্পত্তি হওয়ায় সেখানে স্থায়ীভাবে কংক্রিটের পাকা স্থাপনা নির্মাণের কোনো অধিকার মুকুলের নেই’, বলেন তিনি।
খাস জমিতে ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে মুকুল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জমি বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। যেহেতু আমার পরিবার গত ২৫ বছর ধরে এখানে বসবাস করছে, সেহেতু সরকারি নিয়ম অনুসারে জমিটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাওয়ার অধিকার আমাদের আছে। আমার স্ত্রীর নামে পৌরসভা হোল্ডিং ট্যাক্স ও বৈদ্যুতিক বিলও হালনাগাদ রয়েছে।’
‘আমার বসবাসের ঘর নষ্ট হয়ে পড়ায় বাড়ির কাজ শুরু করেছি। স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু জায়গাটি দখল করার অপচেষ্টায় আমাকে উচ্ছেদ করতে চাইছে’, বলেন মুকুল।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের ইউএনও আহমেদ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইজারা নেওয়া সরকারি জমিতে পাকা স্থাপনা গড়ার সুযোগ নেই। এ ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
‘তবে, যারা অভিযোগ করেছেন তারাও অবৈধ দখলদার। খালিশাদহ মৌজায় প্রায় এক দশমিক ৩৬ একর সরকারি জমি বেদখলে রয়েছে। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে’, যোগ করেন ইউএনও।
Comments