ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমগুলোকে অবশ্যই দুর্যোগের মধ্যে টিকে থাকতে শিখতে হবে: ড. ইউনূস

পৃথিবীর ৪২টি দেশে গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলে ১৩২টি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ থেকে শুরু করে গরিব দেশেও এর কার্যক্রম বিস্তৃত। ১৯৭৪ সালে নিজের পকেটের অর্থ দিয়ে এই ক্ষুদ্রঋণ ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকও পেয়েছে নোবেল পুরস্কারের সম্মান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: গোলাম মোর্তোজা

পৃথিবীর ৪২টি দেশে গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলে ১৩২টি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ থেকে শুরু করে গরিব দেশেও এর কার্যক্রম বিস্তৃত। ১৯৭৪ সালে নিজের পকেটের অর্থ দিয়ে এই ক্ষুদ্রঋণ ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকও পেয়েছে নোবেল পুরস্কারের সম্মান।

সম্প্রতি ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভারতের ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সাংবাদিক কুমার শর্মাকে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইংরেজিতে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারের ভাষান্তর।

ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করছেন এমন অনেকেরই প্রশ্ন, এই মহামারি যা একটি বিধ্বস্ত নতুন যুগের সূচনা করেছে তাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? ক্ষুদ্রঋণের ঋণ গ্রহীতাদের গ্রুপ মিটিংয়ে জমায়েত হওয়া আবশ্যক। এই নতুন পরিবেশে এটা নিরাপদ ও সহায়ক না হওয়ায় এই সামাজিক জামানতটিকে কীভাবে বহাল রাখা যায় সে বিষয়ে আপনি কী কিছু ভাবছেন?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: এই নতুন মহামারি দরিদ্র মানুষদের জীবনের নড়বড়ে অবলম্বন থেকে তাদের ব্যাপক হারে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে। তাদের অনেকেই ভঙ্গুর পেশা ও কর্মস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এটা ভিন্নভাবেও দেখা যায়। মনে রাখতে হবে যে, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জন্য এটি প্রথম দুর্যোগ নয়। এমনিতেই বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন পরিস্থিতি দিন দিন বাংলাদেশকে আরও খারাপ অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বন্যার কারণে প্রতি বছর দেশের কিছু অংশ প্লাবিত হয়। এছাড়া নিয়মিত বিরতিতে সারা দেশে বড় ধরনের বন্যার প্রকোপ তো রয়েছেই। কখনো কখনো ঘরের ছাদ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। একটি বন্যায় খোদ ঢাকা নগরীতে নৌকা ও স্টিমারকে বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এগুলো নিয়মিত এবং এই মহামারির চেয়েও গুরুতর। এসব দুর্যোগে বাড়ি, পশুপাখি, বিষয়-সম্পদ, জীবন- কিছুই রক্ষা পায় না।

ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা গত ৪০ বছর ধরে এসব দুর্যোগের মধ্য দিয়েই টিকে থাকতে শিখেছে এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিকভাবে সফলতার সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে শিখেছে। এসব সমস্যার মোকাবিলা করতে না পারলে ক্ষুদ্রঋণ বহু আগেই বিলুপ্ত হয়ে যেত। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ক্ষুদ্রঋণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আপনি এসব কর্মসূচিগুলোকে নিজেদের এবং তাদের ঋণগ্রহীতাদের আস্থার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মপদ্ধতিগুলো প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের মধ্যে দেখতে পাবেন। মহামারি আসার আগেই তাদের এটা মোকাবিলা করার কৌশল জানা ছিল।

ক্ষুদ্রঋণের মডেলটির একটি অন্যতম ভিত্তি ঋণ গ্রহীতাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বা মাসিক গ্রুপ মিটিং। যেখানে নগদ টাকা আদায় ও বিনিময় করা হয়, গ্রুপ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হয়। অধিকাংশ ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে সবাইকে একত্রিত করে কিস্তি সংগ্রহ আর্থিকভাবে অনেক সাশ্রয়ী। মহামারির প্রেক্ষিতে এই মডেলটিতে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন কি? যেমন ধরুন, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে গ্রুপ মিটিংয়ের পরিবর্তে প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার কাছে আলাদা আলাদাভাবে যেতে হলে তা কি বেশী ব্যয়বহুল হয়ে যাবে না?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: এগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতেই থাকবে। ক্ষুদ্রঋণের বয়স যত বাড়বে পুরনো পদ্ধতিগুলোতে অবশ্যই নানা সংস্কার আসবে। প্রাথমিক যুগের পদ্ধতিগুলো যুগ যুগ ধরে একই রকম থেকে যাবে তা কেউ প্রত্যাশা করে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত গ্রামীণ আমেরিকা এমন কিছু করেছে, যা আগে কেউ চিন্তাও করেনি। করোনা মহামারির মোকাবিলা করতে তারা ভার্চুয়াল কেন্দ্র মিটিং ও ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা করেছে। ১৪টি বড় শহরে গ্রামীণ আমেরিকার ২৪টি শাখা রয়েছে, যার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান বছরে ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) ডলারের বেশি ঋণ দিয়ে থাকে। এই শাখাগুলোর অধীনে ঋণগ্রহীতাদের তিন হাজারের বেশি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক দশক ধরে এখানে একত্র হয়ে ঋণগ্রহীতারা সাপ্তাহিক কিস্তি দেওয়াতে অভ্যস্ত হয়েছে। এখন মহামারির কারণে সব কিছু বদলে গেছে। ব্যক্তিগত উপস্থিতি বাতিল করে এখন কেন্দ্র মিটিং ভার্চুয়ালি হচ্ছে। সবাই খুব খুশি। তারপর নগদ টাকার লেনদেন সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে আর নগদ টাকায় কোনো লেনদেনই হয় না। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঋণও হাতের কাছে আসছে, সাপ্তাহিক কিস্তিও দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ আমেরিকার সঙ্গে লেনদেন করতে কাউকে সশরীরে কোথাও উপস্থিত হতে হয় না। ঋণগ্রহীতারা নিজেদের রান্নাঘর, বাজার, গাড়িতে বসে, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে- অর্থাৎ যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই কেন্দ্র মিটিংয়ে ভার্চুয়ালি যোগদান করছেন। গ্রামীণ আমেরিকার স্টাফদেরকে তিন হাজার কেন্দ্র মিটিংয়ে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে না। প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা কিংবা শাখা ব্যবস্থাপক যেকোনো কেন্দ্র মিটিংয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়ে ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় যোগ দিতে পারছেন। এসব পরিবর্তনের ফলে আদায় হার ৯৯ শতাংশে ফিরে এসেছে। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব শুরু হলে প্রথম ছয় মাসে গ্রামীণ আমেরিকার ৫২ জন ঋণগ্রহীতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর ফলে ঋণ বিতরণ ও আদায়ে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এখন সব কিছুই মহামারি-পূর্ব অবস্থায় ফিরে এসেছে। এখন গ্রামীণ আমেরিকা তাদের কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

মহামারির মধ্যেও গ্রামীণ আমেরিকা শিকাগোতে একটি নতুন শাখা খুলেছে, যা এই নগরীতে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম শাখা। মহামারির কারণে তারা একটি সাহসী উদ্যোগ নেয়। তারা এই শাখাকে পুরোপুরি একটি ভার্চুয়াল শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এমনকি তারা শাখাটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটিও ভার্চুয়ালি আয়োজন করে। যারা গ্রুপ করতে আগ্রহী তাদের সঙ্গে গ্রামীণ আমেরিকার কোনো স্টাফ কখনো সরাসরি সাক্ষাৎ করেননি। সকল আলাপ-আলোচনা, প্রশিক্ষণ এবং কেন্দ্র ও গ্রুপ মিটিং ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিকাগোর এই ভার্চুয়াল শাখাটি প্রত্যক্ষ দেখা-সাক্ষাতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত শাখাগুলোর মতোই দক্ষভাবে পরিচালিত হবে বলে তারা নিশ্চিত। প্রয়োগকৌশলগতভাবে, এই ভার্চুয়াল শাখা পরিচালনার জন্য এর কোনো স্টাফকে শিকাগোতেই থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকেই এটি পরিচালনা করা যেতে পারে। গ্রামীণ আমেরিকা এখন তার সকল শাখার ফিজিক্যাল অফিসগুলো বিলুপ্ত করার কথা ভাবছে। ফিজিক্যাল অফিসের আর কোনো প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করছে না। তারা নিশ্চিত যে মহামারির পরেও তারা এ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখবে।

ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে আগের মতো সরাসরি দেখা-সাক্ষাতের বিষয়টি না থাকলে, অর্থাৎ নিয়মিত গ্রুপ মিটিং ও গ্রুপের চাপ না থাকলে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো কি তাদের বর্তমান প্রায় শতভাগ আদায় হার ধরে রাখতে পারবে? এতে ঋণ আদায় হার কি অন্য সব ঋণ ব্যবসার মতো, যারা পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ পুঁজি হারিয়ে থাকে, তাদের মতো হয়ে যাবে না?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতির প্রথম ও মৌলিক শিক্ষা হলো, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিগুলোকে যেকোনো দুর্যোগে টিকে থাকতে শিখতে হবে। হাল ছেড়ে দেওয়া ক্ষুদ্রঋণের জন্য কোনো সমাধান হতে পারে না। এটা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করতে হবে। এজন্য তাদেরকে উদ্ভাবনশীল হতে হবে। কর্মসূচির ব্যর্থতার জন্য এটা-ওটার ওপর দোষারোপ করে নিজেদের গা বাঁচানোর কোনো সুযোগ এই কর্মসূচির নেই।

সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগের জন্য সরকার ছাড়া আর কোনো ধরনের বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে পুঁজি সংগ্রহ করা যেতে পারে?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: সরকারের অর্থ সাহায্যের ওপর ভরসা করলে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি মোটেই এগুতে পারতো না। সরকার নতুন আইন কাঠামো তৈরি করে এর স্বীকৃতি দিলেই সবচাইতে বড় উপকার হবে। একটি সম্পূর্ণ নতুন সামাজিক ব্যবসা ভিত্তিক আর্থিক পদ্ধতি সৃষ্টির জন্য আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। সরকার সামাজিক ব্যবসা ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক, সামাজিক ব্যবসা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড, সামাজিক ব্যবসা বিনিয়োগ তহবিল, সামাজিক ব্যবসা ইন্স্যুরেন্স ফান্ড ইত্যাদি গঠন করার জন্য আইন প্রণয়ন করে দিলেই এগুলো গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানি থেকে কোনো লভ্যাংশ পাবেন না। সেক্ষেত্রে কারা এগুলোতে বিনিয়োগ করবেন?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: যারা কোনো ফাউন্ডেশন বা ট্রাস্ট গঠন করতে চান তাদের জন্য এগুলো বিনিয়োগের ভালো জায়গা হতে পারে। তারা বেকার ছেলে-মেয়েদের উদ্যোক্তায় পরিণত করতে সামাজিক ব্যবসা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড সৃষ্টি করতে পারেন। অথবা দরিদ্র নারীদের ঋণ দিতে সামাজিক ব্যবসা ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক তৈরি করতে পারেন। তারা এখন এগুলোতে বিনিয়োগ করছেন না, কেননা এ ধরনের সুযোগ তাদের সামনে নেই। ব্যাংকিংয়ের আইন কাঠামো ধনীদের ব্যাংক গড়ার উদ্দেশ্যে আগের আদলে রয়ে গেছে। গরীবদের ব্যাংক দরকার আছে- এটা এখনো বিশ্বের আইনপ্রণেতাদের দৃষ্টিতে আসছে না।

বিনিয়োগকারী মুনাফা অর্জন করতে না-পারলে সামাজিক ব্যবসা টিকে থাকার কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাবে কী?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: সহজ জবাবটি হলো- সামাজিক ব্যবসা টিকে থাকবে ও সম্প্রসারিত হবে যদি মানুষ এটা চায়। মানুষ সামাজিক ব্যবসা না চাইলে সামাজিক ব্যবসা টিকে থাকতে পারবে না। সামাজিক ব্যবসা একটা বিকল্প। জোর করে চাপানো কোনো পদ্ধতি নয়। মানুষ সমস্যা সমাধানের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। সমাধান চাইলে সামাজিক ব্যবসার কাঠামোটি পরীক্ষা করার কথা মনে পড়বে। যতই সমাধান এবং সামাজিক ব্যবসা সমার্থক হয়ে উঠবে ততই সামাজিক ব্যবসা আমাদের ভবিষ্যৎ হয়ে দাঁড়াবে।

আমি সামাজিক ব্যবসার ধারণাটি নিয়ে যখন কথা বলি তখন মানুষ এটা পছন্দ করে। কিন্তু এটা করার আয়োজন তাদের সামনে নেই। কারণ প্রচলিত ব্যবসার জন্য আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কখনোই তাদের সামনে এই আয়োজন হাজির করেনি। মানুষকে সামাজিক ব্যবসা করার প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন করে দেওয়া হলে এই ব্যবসা দিন দিন বাড়তে থাকবে। আমি নিশ্চিত, মানুষের চিন্তায় ও মনে এর অস্তিত্ব আছে। কারণ মানুষ সমাধান চায়।

পৃথিবীতে খয়রাতি সাহায্যের পেছনে প্রতি বছর শত লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়। এর ভগ্নাংশও বিনিয়োগ ও ঋণ হিসেবে সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা গেলে এই ব্যবসায়ে বিনিয়োগ উপচে পড়বে। পুঁজির অভাবের বিষয়টি এক্ষেত্রে উত্থাপিত হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। সামাজিক ব্যবসাকে প্রমাণ করতে হবে যে, এটা সমাধান দিতে পারে।

অবশ্যই সরকারগুলো সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে পারে যদি সরকার মনে করে যে, এই খাতে জনগণের টাকা ব্যয় করলে এটা অন্য কোনো ব্যবসায়ের চাইতে ভালো ফল দেবে। সরকার অনেক কর্মসূচির দায়িত্বই সামাজিক ব্যবসাকে দিতে পারে। মানুষ যে কারণে সামাজিক ব্যবসাকে বেছে নেবে ঠিক একই কারণে সরকারও সামাজিক ব্যবসাকে বেছে নেবে। যখন সরকারের লক্ষ্য হবে সমস্যার সমাধান, মুনাফা নয়, তাদের কাছে সামাজিক ব্যবসাই উত্তম বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।

কখনো কখনো মুনাফা প্রত্যাশী ব্যবসাগুলোকে তাদের নিজস্ব ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করতে দেখা যায়। তারা কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) টাকা দান করার জন্য আলাদা করে রাখে। এখন তাদের সামনে আরেকটি বিকল্প আসলো- তারা ফাউন্ডেশনের পরিবর্তে, অথবা ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টি করতে পারে এবং তাদের সিএসআর ফান্ডের টাকা সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে পারে।

সামাজিক ব্যবসা বাজার থেকেও প্রচলিত নিয়ম ও শর্তে ঋণ সংগ্রহ করতে পারে। আমার ব্যবসা সামাজিক ব্যবসা হলে আমি বাজার থেকে ঋণ নিতে পারবো না এমন কোনো কথা নেই। আমি যদি সামাজিক ব্যবসায়ী হই তার মানে এই না যে, আমি কোনো মুনাফা প্রত্যাশী ব্যবসার সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবো না। আমি তাদের পণ্য কিনতে পারি, তাদের কাছ থেকে সেবা ক্রয় করতে পারি, তাদের কাছে আমার নিজের পণ্য বিক্রি করতে পারি এবং তাদের সঙ্গে সকল ধরনের ব্যবসা করতে পারি। শুধু একটি বিষয় আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, আমার ব্যবসার উদ্দেশ্য  সমাজের কোনো নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করা এবং আমি, ব্যবসাটির মালিক, ব্যক্তিগতভাবে এই ব্যবসা থেকে কোনো মুনাফা নেব না।

সামাজিক ব্যবসা নিয়ে যতই আলোচনা হবে এটা পরীক্ষা করে দেখার একটা আগ্রহ সৃষ্টি হবে। সেই পরীক্ষায় টিকে গেলেই সামাজিক ব্যবসার ভিত্তি রচনা হবে।

 

গত ৫ মার্চ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটির বাংলা অনুবাদ করেছেন কাজী নজরুল হক। ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো ভাষান্তরটি হুবহু দেওয়া হলো।

আরও পড়ুন:

রোহিঙ্গা ট্র্যাজেডি: সংকটের অবনতি না অবসান

করোনা মহামারি: সময় দ্রুত হারিয়ে ফেলছি

অর্থনীতির নতুন পথ সন্ধানের এখনই সময়

ভবিষ্যতের যানবাহন

মানুষের জীবনের বিনিময়ে মুনাফা নয়

তুমি আমাদের চিরসাথী

হাঁটতে হবে নতুন পথে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

‘মহামারি-পূর্ব পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া হবে আত্মহত্যার শামিল’

পুরোনো পথ আমাদের শুধু পুরোনো গন্তব্যেই নিয়ে যেতে পারে- ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে ড. ইউনূস

‘বাংলাদেশকে বুঝতে হলে আবেদকে বুঝতে হবে’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago