আদালতে কাদের মির্জাসহ ১৬৪ জনের নামে মামলা
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সিএনজি চালক আলা উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জাসহ ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে।
আজ রবিবার দুপুর ১টার দিকে নিহত আলা উদ্দিনের ছোটভাই এমদাদ হোসেন রাজু বাদী হয়ে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আমলি আদালতের বিচারক মোসলে উদ্দিন মিজানের আদালতে মামলাটি করেন।
বিকেলে শুনানি শেষে আলা উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষে কোম্পানিগঞ্জ থানায় ইতোমধ্যে কোনো মামলা হয়েছে কিনা বা কোনো অভিযোগ করা হয়েছে কিনা তা জানাতে কোম্পানিগঞ্জ থানার ওসি মির জাহিদুল হক রনিতে ১৫ কার্যদিবস সময় দিয়েছেন আদালত।
বাদী পক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার আজ দুপুরে আদালতে মামলাটি উপস্থাপন করেন।
মামলায় আবদুল কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি, তার ছোটভাই শাহাদাত হোসেনকে দ্বিতীয় এবং কাদের মির্জার ছেলে মির্জা মাসরুর কাদের তাসিককে তৃতীয় আসামি করে ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নোয়াখালী কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক শওকত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার বসুরহাট পৌরভবন এলাকায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে চর ফকিরা ইউনিয়নের চরকালী গ্রামের সিএনজি চালক আলা উদ্দিন নিহত হন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহত আলা উদ্দিনের ভাই এমদাদ হোসেন রাজু বাদী হয়ে আবদুল কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি করে ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলার বাদী এমদাদ হোসেন রাজু অভিযোগ করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অভিযোগ জানানোর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মামলা নথিভুক্ত করেনি। তাই রবিবার দুপুরে আদালতে মামলা করেছি।’
এর আগে, গত শুক্রবার এমদাদ হোসেন রাজু সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পুলিশ কাদের মির্জার নাম বাদ দিয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু, তিনি কাদের মির্জার নাম বাদ দেবেন না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ভাইয়ের হত্যার বিচার চেয়ে তিনি আদালতের আশ্রয় নেবেন।
এ প্রসঙ্গে আবদুল কাদের মির্জা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাতে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পৌরসভা কার্যালয়ে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে, আমি প্রাণে বেঁচে গেলেও আমার ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। হামলাকারীরা নিহত সিএনজি চালক আলা উদ্দিনকে হত্যা করে মরদেহ রাতের বেলা পৌরসভার কার্যালয়ে চত্বরে রেখে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আমাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মমালা দিয়ে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছে প্রতিপক্ষ। মামলার বাদীকে একরামুল করিম চৌধুরী ও মিজানুর রহমান বাদল ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে এই হত্যা মামলা করতে বাধ্য করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলা উদ্দিন একজন সিএনজি চালক। তাকে বিনা কারণে বাদল ও তার লোকজন পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। ৩১ ডিসেম্বর থেকে আমি নোয়াখালী ও ফেনী আওয়ামী লীগের অপরাজনীতি, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি। আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি এসব অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেই যাব। কারণ, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি এবং তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতির রাজনীতি করি।’
আবদুল কাদের মির্জা অভিযোগ করেন, ‘যেদিন থেকে আমি সত্য কথা বলা শুরু করেছি সেদিন থেকেই একরাম ও নিজাম হাজারীর লোকজন আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। মৃত্যু আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু, আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। মঙ্গলবার রাতে আমার ওপর এবং আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর গুলি ও বোমা হামলা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।
তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতের গুলি হামলার পর আমার নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমি নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গুলি হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই আমি। আমি এই মামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
Comments