শীতে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর বাতাসে ১০ গুণ বেশি দূষণ

shaheed_suhrawardy_medical_college_0.jpg
ছবি: স্টার

নতুন এক গবেষণায় ঢাকার প্রধান দুটি সরকারি হাসপাতালে শীতকালে সহনশীল মাত্রার চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষতিকারক বায়ু দূষণকারী উপকরণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

আর বর্ষার প্রাক্কালে হাসপাতালগুলোর অভ্যন্তরীণ বাতাসের গুণগত মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড (এনএএকিউএস) স্বীকৃত সহনশীল মাত্রার থেকে দুই গুণেরও বেশি খারাপ ছিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা কমপ্লেক্সের বাতাসের মানের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

গত ১৫ মার্চ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ও পলিউশন রিসার্চ (পরিবেশ বিজ্ঞান ও দূষণ গবেষণা) জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়ে ওই তিন হাসপাতালের ১৬টি জায়গায় বাতাসের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।

‘অভ্যন্তরীণ বাতাসের মানের সূচক ও ঢাকার হাসপাতালগুলোর পরিবেশে বিষাক্ততার সম্ভাব্যতা’ শীর্ষক গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, ‘বাহ্যিক বাতাসের মান হাসপাতালগুলোর অভ্যন্তরীণ বাতাসের মানের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখে।’

বুধবার প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাতাসের গুণগত মান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এবং রাজধানী ঢাকা সবচেয়ে বেশি দূষিত বাতাসের শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়।

শীত ও বর্ষার প্রাক্কাল— এই দুই মৌসুমে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদরা ওই তিন হাসপাতালের ওপর গবেষণাটি চালিয়েছিলেন।

গবেষণায় বর্ষার প্রাক্কালে হাসপাতালগুলোর অভ্যন্তরীণ বাতাসের গুণগত মান ডব্লিউএইচও ও এনএএকিউএস স্বীকৃত সহনশীর মাত্রা থেকে দুই গুণেরও বেশি খারাপ ছিল বলে জানা গেছে।

গবেষণায় জানা গেছে, এই দুই মৌসুমে বাতাসের গুণগত মান সবচেয়ে বেশি খারাপ থাকে। যেমন: বর্ষার প্রাক্কালে ওই তিন হাসপাতালে পিএম দুই দশমিক পাঁচ এর গড় ঘনত্ব ছিল ৫২ দশমিক ২৮ মিউজি/এম-থ্রি, যা এনএএকিউএস’র অনুমোদিত সীমার চেয়ে দুই গুণ বেশি।

অন্যদিকে, শীতকালে পিএম দুই দশমিক পাঁচ এর গড় ঘনত্ব ছিল ২২২.৫৩ মিউজি/এম থ্রি, যা অনুমোদিত সীমার চেয়ে প্রায় আট গুণ বেশি।

ডব্লিউএইচও অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটির অনুমোদিত মাত্রা হচ্ছে ২৫ মিউজি/এম থ্রি। এনএএকিউএস’র ক্ষেত্রে এটি হলো ৫৫ মিউজি/এম থ্রি।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে গবেষণাপত্রটির মূল লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে অভ্যন্তরীণ বাতাসের গুণগত মান খারাপ হয়। এটি হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকেই ইঙ্গিত করে।’

তিনি আরও জানান, সরকারি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বাতাসের মানের উন্নতি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সামগ্রিক স্বাস্থ্যবিধি পরিস্থিতির দিকে মনোযোগী হওয়া এবং হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে আসা আত্মীয়-স্বজনদের ভিড় কমানোর চেষ্টা করা।

দেশের হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বাতাসের মানের ওপর এটাই প্রথম গবেষণা। এতে আরও বলা হয়েছে, ওই তিনটি হাসপাতালে টক্সিসিটি পটেনশিয়ালের (টিপি) মান স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছিল। অর্থাৎ সেখানকার পরিবেশ রোগীদের স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে খারাপ করতে পারে। টিপি দিয়ে কোনো জায়গার সামগ্রিক পরিবেশকে বোঝা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘টিপির মান অনেক বেশি থাকলে তা হাসপাতালের ভেতরে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢামেক হাসপাতালের শিশুদের অস্ত্রোপচার ওয়ার্ডে হাসপাতালের অন্যান্য জায়গার তুলনায় পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে। হাসপাতালের সমস্ত জায়গার মাঝে

ওই ওয়ার্ডটি সবচেয়ে বেশি নোংরা ছিল। সেখানে তূলনামূলকভাবে মানুষের ভিড়ও ছিল অনেক বেশি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও মানুষের অবাধ চলাচলের কারণে হাসপাতালের ভেতরে বাতাসে আউটডোর পার্টিকুলেট কনসার্নটেশন বেড়ে যায়।

অধ্যাপক সালাম জানান, সঠিকভাবে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করা হলে হাসপাতালের ভেতরে বাতাসের মান উন্নত হবে। পাশাপাশি, ওয়ার্ডগুলোর ভেতরে রান্না করা বন্ধ করা উচিত।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের মানোন্নয়নের জন্যে কাজ চলছে।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে মানুষের ভিড় ও চলাচল অনেক বেশি। আমরা আমাদের হাসপাতালকে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সব সময় তা সম্ভব হয় না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ জানান, একটি হাসপাতালের অভ্যন্তরে বাতাসের গুণগত মান খারাপ থাকা এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, সেখানে রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটি বিপজ্জনক।

তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ধূলিকণার উৎস খুঁজে বের করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ব্যাপক অভাব রয়েছে। হাসপাতালগুলোকে পরিষ্কার রাখার জন্য আমাদেরকে আরও অনেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিতে হবে।’

আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার কথাও জানান তিনি।

‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০১৯’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সকল ধরনের বায়ু দূষণের কারণে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এক লাখ ২৩ হাজার মানুষ মারা গেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণের সংস্পর্শে থাকার কারণে ২০১৭ সালে স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ফুসফুসের ক্যানসার ও দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh RMG sector

RMG sector on edge as tariff talks make no headway

The diverging outcomes threaten to create a multi-tiered tariff landscape in Asia, placing nations like Bangladesh at a serious disadvantage in the US market.

11h ago