শহীদ মিনারে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ‘মাইক বাজানো’ নিয়ে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মাইকে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় গ্রুপের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আজ শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কর্মীকে ‘ফ্লাইং কিক’ দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদি থেকে নীচে ফেলে দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার পর ছাত্রলীগের এই দুই ইউনিটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় নিজের পাঁচ কর্মী আহত হন বলে জানান সাদ্দাম।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে জুবায়ের দাবি করছেন, কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।
উল্টো ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে জুবায়ের জানান, তার মুখের বাম পাশে আঘাত পেয়ে রক্ত ঝরেছে। এ ঘটনায় তারও ৪-৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় অতিথিদের স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই কর্মসূচির আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এতে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এসময় দুই মহানগর থেকে প্রায় এক হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহীদ মিনারে সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ এবং চালু রাখা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। সাউন্ড সিস্টেমের দায়িত্বে ছিলেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের কিছু কর্মী। মাইকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়েসহ আরও দেশাত্মবোধক কিছু গান বাজছিল। পাশ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। সাউন্ড সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ স্থলে ছিলেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সৈয়দ সাব্বির হোসেন জয়। মাইকের গানের জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের স্লোগানে সমস্যা সৃষ্টি হলে সাউন্ড সিস্টেমের কাছে এসে তা বন্ধ রাখার কথা জানায় মহানগরের কিছু নেতা-কর্মী। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ কর্মী সাব্বির তা বন্ধ করেননি। এক পর্যায়ে ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হোসেনের নেতৃত্বে তার নেতা-কর্মীরা এসে সাব্বিরকে ধাক্কা দিলে তিনি শহীদ মিনারের বেদিতে পড়ে যান।
দ্য ডেইলি স্টারকে সাব্বির বলেন, ‘আমাকে ফ্লাইং কিক দিতে দিতে শহীদ মিনারের বেদি থেকে নিচে নামান জুবায়ের ও তার নেতা-কর্মীরা। এসময় তারা একযোগে হামলা চালিয়ে সাউন্ড সিস্টেমগুলো ভেঙে তছনছ করে দেন।’
সংঘর্ষে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের আহতর হলেন- স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নাবিল হায়দার, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সাফওয়ান চৌধুরী, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাকিবুর রহমান সায়েম ও স্যার এ এফ রহমান হলের ইবনুল হাসান।
জুবায়ের হোসেনের আহত নেতা-কর্মীদের নাম জানা যায়নি।
ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সুশৃঙ্খল কর্মসূচিতে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সাউন্ড সিস্টেম নষ্ট করেছে এবং আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ওই রকম মারামারি হয়েছে তাও না, আবার একবারে হয়নি তাও বলব না। সাদ্দাম হোসেনের নেতা-কর্মীদের সাউন্ড সিস্টেম কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করি, কিন্তু তারা সে অনুরোধ রাখল না। এজন্য একটু কথা কাটাকাটি হয়, একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। সাদ্দাম হোসেনের নেতা-কর্মীদের দ্বারা আমি হামলার শিকার হয়েছি। তারা আমার মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা ভালোভাবে খোঁজ নিচ্ছি। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Comments