নিউজিল্যান্ডে গিয়ে সেই বেহাল দশা, প্রথম ওয়ানডেতে বিধ্বস্ত তামিমরা

এক ইনিংস শেষ হতেই খেলার ফল একদম পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডে খেলতে গেলে বরাবর যেমনটা হয় আসলে। এবার অবশ্য বারবার করে ভিন্ন কিছর আশা দিচ্ছিলেন কোচ-অধিনায়ক। প্রথম ম্যাচে মিলল না তার কিছুই।

এক ইনিংস শেষ হতেই খেলার ফল একদম পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডে খেলতে গেলে বরাবর যেমনটা হয় আসলে। এবার অবশ্য ভিন্ন কিছর আশা দিচ্ছিলেন কোচ-অধিনায়ক। প্রথম ম্যাচে মিলল না তার কিছুই। সেদেশে আরও একবার লড়াইবিহীন করুণ দশা দেখিয়েছেন ক্রিকেটাররা।  ট্রেন্ট বোল্টদের স্যুয়িং-বাউন্সে খাবি খেয়ে দেড়শো রানের কাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। মার্টিন গাপটিল-হেনরি নিকোলসদের ব্যাটে ওই রান পেরুতে ২২ ওভারও লাগেনি নিউজিল্যান্ডের।

শনিবার ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভাল মাঠে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে চিরায়ত ধুঁকতে থাকার ছবি দেখিয়ে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৩১ রানে। ওই রান ১৭২ বল আগেই তুলে  তামিম ইকবালের দলকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিকদের জয়ের নায়ক বোল্ট ২৭ রানে পেয়েছেন ৪ উইকেট।

অল্প রান তুলতে মাত্র ১৯ বলে ৩৮ করেন গাপটিল। নিকোলস অপরাজিত ছিলেন ৫৩ বলে ৪৯ রানে।

মাত্র ১৩২ রান তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই ঝড় তুলেন গাপটিল। মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ওভারেই চার-ছক্কায় উড়ান। হাসান মাহমুদকে পেয়ে করতে থাকেন তুলোধুনো। রান আসতে থাকে টি-টোয়েন্টি গতিতে। পঞ্চম ওভারেই ফিফটি পেরিয়ে যায় কিউইরা।

৬ষ্ঠ ওভারে বল হাতে পেয়ে তাসকিন আহমেদ দেখান ঝাঁজ। গতি আর স্যুয়িংয়ের সঙ্গে বাড়তি বাউন্স যোগ করে গাপটিকে করেন কাবু। দারুণ ইনস্যুয়িঙ্গারে পরাস্ত হওয়ার পরের বলে তেঁড়েফুড়ে বেরিয়ে মারতে চেয়েছিলেন গাপটিল। এবারও গতি-বাউন্সে পরাস্ত হন, তার আগে গাপটিলের ব্যাট ছুঁয়ে যায় বল। প্রথম সাফল্য বাংলাদেশের।

আরেক পাশে হেনরি নিকোলসও উড়ন্ত শুরু পেয়েছিলেন। গাপটিল ফেরার পর অভিষিক্ত ডেবন কনওয়েকে নিয়ে তিনি নেন দায়িত্ব। খুব বেশি তাড়াহুড়ো করতে হয়নি তাদের। এত অল্প রান নিয়ে রানেভরা মাঠে তেমন কিছুও আসলে করার ছিল না বোলারদের।

প্রথম স্পেলে ভীষণ খরুচে হাসান পরের স্পেলে ফিরেও মার খায়েছেন। তবে ব্যতিক্রম হলো এবার তিনি পেয়ে যান একটি উইকেটও। দ্রুত খেলে শেষ করে ফেলার তাড়ায় তাকে পেটাতে গিয়ে আউট হন ২৭ করা কনওয়ে। আরেক অভিষিক্ত উইল ইয়ং নেমে দুই বাউন্ডারিতে দ্রুত কাজ সারতে রাখেন ভূমিকা।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে বাংলাদেশের দশা হয় বেহাল।  ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম বলেই মিলেছিল আভাস। আউটস্যুয়িং ইয়র্কারে কোন রকমে পার পেয়ে যান তামিম।  তৃতীয় বলে ছক্কায় উড়িয়েছিলেন। অধিনায়কের জন্মদিনের অর্জন বলতে এটাই। বোল্টের স্যুয়িংয়ের যন্ত্রণায় ভুগে সোজা বলেই হন পরাস্ত। পঞ্চম ওভারে এলবিডব্লিউতে তামিমকে হারানোর পরই ধসের শুরু।

নিউজিল্যান্ডে এসব পরিস্থিতিতে দলকে আত্মবিশ্বাস যোগাত সৌম্য সরকারের ব্যাট। টপ অর্ডারে জায়গা ফিরে পাওয়াটা উদযাপন করতে পারলেন না বাজে শটে। বোল্টের বাউন্সারের গতি বুঝতে পারলেন না, নিজের জোনেও ছিল না বল। শাফল করে ৩০ গজ পার করতে গিয়ে ধরা খান ডেবন কনওয়ের হাতে।

লিটন দাস পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ধরে খেলছিলেন। টিকে গিয়ে থিতুও মনে হচ্ছিল তাকে। কাইল জেমিসনের বলে মেরেছিলেন আত্মবিশ্বাসী বাউন্ডারি। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে ২৩ আসার পর তিনি ফিরলেন জিমি নিশামের গতি বুঝতে না পেরে। লেগ স্টাম্পে ঠেলে দিয়ে প্রান্ত বদলের চিন্তা ছিল। কিন্তু মন্থর গতির বল সফট হ্যান্ডে খেলতেন গিয়ে ৩৬ বলে ১৯ করে উঠিয়ে দেন লোপ্পা ক্যাচ।

মুশফিকের অ্যাপ্রোচও ছিল লিটনের মতই। টিকে থাকার চেষ্টা ছিল। বারবার স্যুয়িং-বাউন্সে পরাস্ত হচ্ছিলেন। প্রচণ্ড চাপ ছেড়ে বেরুতে বেরুতেই সমাপ্তি। তাকেও ছেঁটেছেন নিশাম। অফ স্টাম্পের বাইরে লেন্থ ডেলিভারিতে কাট করে ক্যাচ দিয়েছেন মার্টিন গাপটিলের হাতে, চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ৪৯ বলে ২৩ করে ফিরে যাওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে ২১ ওভার। স্কোর বোর্ডে রান কেবল ৬৯!

মোহাম্মদ মিঠুনও ধুঁকছিলেনই। তবে তাকে কিছুটা দুর্ভাগ্যের শিকারও বলা যায়। নিশামের বলে মাহমুদউল্লাহর স্ট্রেট ড্রাইভ ক্যাচের মতো উঠেছিল। তা ধরতে লাফিয়ে পড়ে সফল না হলেও মিঠুনের উইকেট পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। তখন যে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন তিনি, নিশামের হাত স্পর্শ করে বলও ভেঙ্গে দিয়েছে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প।

মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে লড়াই করে প্রতিরোধ আনতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। মিচেল স্যান্টনারের স্পিনে বোল্ড হলেন অদ্ভুতভাবে। লেগ স্টাম্পের উপর থাকা বল না বুঝেই ঘুরালেন। ফিরলেন ১০ বলে ১ রান করে।

অভিষিক্ত শেখ মেহেদী নেমেই স্যান্টনারকে ছক্কায় নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক রান করেন। কিন্তু মিরপুরের মাঠের মতো ওদেশে খেলাটা যে এত সহজ নয় টের পেয়েছেন খানিক বাদেই। বোল্টকে পেয়ে কাঁপাকাঁপি করেছেন। সেই চাপ সরাতে ফের স্ট্যান্টনারকে উড়াতে গিয়ে এবার আর টাইমিং হয়নি। ২০ বলে ১৪ রানে থামে তার দৌঁড়। ৯৮ রানেই তখন ৭ উইকেট শেষ বাংলাদেশের।

টেল এন্ডারদের নিয়ে দলকে একটা ভদ্রস্থ জায়গায় নিতে একা টিকে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাসকিন আহমেদ সঙ্গও দিলেন তাকে। ৮ম উইকেটে এলো ২৭ রান। অনেক ওভার বাকি থাকায় মাহমুদউল্লাহর একারই রান বাড়ানোর দায় ছিল। তা করতে গিয়েই এক পর্যায়ে থামতে হয় তাকে। শুরু থেকে দারুণ বল হেনরি শেষে এসে পান উইকেট। পুল করে তার বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন সর্বোচ্চ ২৭ করা মাহমুদউল্লাহ। এরপর বাকি দুই উইকেট উপড়ে ফেলতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় নেন বোল্ট। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪১.৫ ওভারে ১৩১  (তামিম ১৩, লিটন ১৯, সৌম্য ০, মুশফিক ২৩, মিঠুন ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মিরাজ ১, শেখ মেহেদী ১৪ , তাসকিন ১০, হাসান ১ ,  মোস্তাফিজ ১*; বোল্ট ৪/২৭, হেনরি ১/২৬, জেমিসন ০/২৫, নিশাম ২/২৭, স্যান্টনার ২/২৩) 

নিউজিল্যান্ড:  ২১.২ ওভারে ১৩২/২ (গাপটিল ৩৮ , নিকোলস ৪৯* , কনওয়ে ২৭,  ইয়ং ১১* ; মোস্তাফিজ ০/২৬, হাসান ১/৪৯, তাসকিন ১/২৩, শেখ মেহেদি ০/১৭ , মিরাজ ০/৯, সৌম্য ০/৫)

ফল: নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: ট্রেন্ট বোল্ট।

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ১-০ তে এগিয়ে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago