কোহলি-রোহিতের ঝড়ো ফিফটিতে সিরিজ ভারতের
রোহিত শর্মার সঙ্গে ওপেনিংয়ের নেমে চমকে দিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তাদের জোড়া হাফসেঞ্চুরিতে রানের পাহাড়ে চড়ল ভারত। গড়ল নিজেদের মাটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডকে পথে রাখলেন জস বাটলার ও ডাভিড মালান। এই জুটির ইতি টেনে ঘুরে দাঁড়াল স্বাগতিক বোলাররা। দারুণ জয়ে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিজেদের করে নিল রবি শাস্ত্রীর শিষ্যরা।
আহমেদাবাদে শনিবার সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচে ৩৬ রানে জিতেছে ভারত। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২ উইকেটে ২২৪ রান তোলে তারা। পরে ওয়েন মরগ্যানরা ৮ উইকেটে ১৮৮ থামেন রানে। এতে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয় কোহলির দলের।
এই নিয়ে টানা ছয়টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল ভারত। সবমিলিয়ে তারা অপরাজিত আটটি সিরিজে। এই সংস্করণে শেষবার তারা সিরিজ হেরেছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তাদের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। রোহিত ও অনিয়মিত ওপেনার কোহলি পাওয়ার প্লেতে দেখান ব্যাটের কারুকাজ। ইংলিশ বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে তারা তুলে নেন ৬০ রান।
কোহলি ধীরেসুস্থে শুরু করলেও রোহিত ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। অষ্টম ওভারে মাত্র ৩০ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। শাফল করে পেসার স্যাম কারানকে ছক্কা হাঁকান ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে।
নবম ওভারে আক্রমণে এসে এই জুটি ভাঙেন বেন স্টোকস। শেষ ডেলিভারিতে লেগ কাটারে বোল্ড হন রোহিত। তার সংগ্রহ ৬৪ রান। ৩৪ বলের ইনিংসে ৪ চার ও ৫ ছক্কা মারেন তিনি।
৯৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেও স্বস্তি পায়নি ইংল্যান্ড। রোহিত যেখানে শেষ করে যান, সেখান থেকেই শুরু করেন সূর্যকুমার যাদব। দশম ওভারে আদিল রশিদকে টানা ২ ছক্কা মেরে দলের সংগ্রহ একশ পার করেন তিনি।
ছন্দে থাকা সূর্যকুমারকে ঠেকাতে অসাধারণ কিছুর দরকার ছিল। হলোও সেটাই। যদিও ক্যাচে লেখা থাকবে জেসন রয়ের নাম, মূল কৃতিত্ব আসলে লং-অনে ফিল্ডিং করা ক্রিস জর্ডানের।
অনেকটা দৌড়ে সীমানার ঠিক ভেতরে বল হাতে জমান জর্ডান। শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারবেন না বুঝে সীমানার বাইরে পা ফেলার ঠিক আগে বল ছুঁড়ে দেন রয়ের উদ্দেশ্যে। তিনি অনায়াসে তা লুফে নেন।
১৭ বলে ৩২ করে ফেরেন সূর্যকুমার। তার ইনিংসে ছিল ৩ চার ও ২ ছক্কা। তার বিদায়ে ভাঙে ২৬ বলে ৪৯ রানের জুটি। তবে থামেনি ভারত। পরের ৪০ বলে ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়া।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মাত্র অষ্টমবার ওপেনিংয়ে নামা কোহলি ইনিংসের পরের অংশে স্বরূপে আবির্ভূত হন। সূর্যকুমারের বিদায়ের সময় তার সংগ্রহ ছিল ২৯ বলে ৩৯ রান। পরের ৪১ রান তিনি নেন ২৩ বলে।
১৬তম ওভারে ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৫২ বলে ৮০ রানে। তার ইনিংসে ছিল ৭ চার ও ২ ছয়। সঙ্গী হার্দিক ৩৯ করেন ১৭ বলে।
রশিদ ও স্টোকস বাদে ইংল্যান্ডের বাকি সব বোলার ছিলেন বেজায় খরুচে। ৪ ওভারের কোটা সম্পূর্ণ করে জোফরা আর্চার, মার্ক উড ও জর্ডান যথাক্রমে ৪৩, ৫৩ ও ৫৭ রান দেন। কারানের একমাত্র ওভারে আসে ১১।
জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় বলেই জেসন রয়কে হারায় ইংলিশরা। ডাউন দ্য উইকেটে ভুবনেশ্বর কুমারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তখনও দলীয় সংগ্রহ শূন্য।
অভিজ্ঞ পেসার ভুবনেশ্বর ছাড়া বাকিরা চেপে ধরতে পারেননি। বাটলার ও তিনে নামা মালানের ব্যাট হয়ে ওঠে তরবারি। কচুকাটা হতে থাকেন হার্দিক, ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুররা।
৬ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৬২। পাওয়ার প্লের পরও একই তালে এগোতে থাকে তাদের দুই ব্যাটার। মালান ১১তম ওভারে হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন, পরের ওভারে বাটলার।
ম্যাচে তখন টানটান উত্তেজনা। স্টোকস, মরগ্যানরা পাইপলাইনে থাকায় ইংল্যান্ডের দিকে পাল্লা ভারী। কিন্তু ত্রয়োদশ ওভারে আক্রমণে ফিরে হিসাবনিকাশ পাল্টে দেন ভুবনেশ্বর।
বাটলার-মালানের ৮২ বলে ১৩০ রানের জুটি ভাঙার পর তছনছ হয়ে যায় ইংলিশদের শক্তিশালী ব্যাটিং অর্ডার। ১৭ বলে ১২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে যায় তারা।
ভুবনেশ্বরের বলে লং-অফে হার্দিকের হাতে ক্যাচ দেন বাটলার। ৩৪ বলে ২ চার ও ৪ ছয়ে তিনি করেন ৫২ রান। ১৫তম ওভারে জোড়া শিকার ধরেন শার্দুল। জনি বেয়ারস্টকে বিদায় করার ২ বল পর মালানের স্টাম্প উপড়ে নেন তিনি।
টি-টোয়েন্টির শীর্ষ ব্যাটসম্যান মালান দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন। এই বাঁহাতির ৪৬ বলের ইনিংসে ছিল ৯ চার ও ২ ছক্কা। পরের ওভারে মরগ্যানকে আউট করেন হার্দিক।
স্টোকস, জর্ডান, কারানের ছোট ছোট ইনিংসে হারের ব্যবধান কমায় অতিথিরা। শার্দুল ৩ উইকেট নেন ৪৫ রানে। ম্যাচসেরা ভুবনেশ্বর ২ উইকেট নিতে খরচ করেন মোটে ১৫ রান। সিরিজ সেরার পুরস্কার পান কোহলি।
Comments