হুজির শিশু জঙ্গি প্রশিক্ষণ ‘মাদ্রাসা’

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) মাদ্রাসা পরিচালনার নামে শিশুদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল বলে জানতে পেরেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) মাদ্রাসা পরিচালনার নামে শিশুদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল বলে জানতে পেরেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

এ কাজের জন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বান্দরবানের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় জমি ইজারা নিয়েছিল হুজি।

হুজির ‘অপারেশন উইং’ প্রধান মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম ওরফে মাহিন ওরফে মিঠু ওরফে হাসান এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সিটিটিসি ইউনিটের তদন্তকারীরা বলেছেন, ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিয়ে তিনি এই জমি ইজারা নিয়েছিলেন।

মাইনুল একটি গণমাধ্যমের পরিচয়পত্র জোগাড় করেছিলেন। তিনি এই মিথ্যে পরিচয় ব্যবহার করে হুজির লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন।

সিটিটিসি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, গত ৪ মার্চ রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে মাইনুল ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর তারা হুজি প্রশিক্ষণ শিবিরটির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হন এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারেন।

গ্রেপ্তার হওয়া অন্য দুইজন হলেন- শেখ সোহান স্বাদ ওরফে বড় আবদুল্লাহ ও মুরাদ হোসেন কবির।

এই তিন জনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। তাদের দুই দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে এবং তিন জনই এখন কারাগারে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে সিটিটিসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, তারা বান্দরবানের ‘মাদ্রাসা’টিতে অভিযান পরিচালনা করেছেন এবং সেখান থেকে আট থেকে ১২ বছর বয়সী ২৪ জন শিশুকে উদ্ধার করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, তারা ইতোমধ্যে এই শিশুদের তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই পার্বত্য এলাকায় শ্রমিকের কাজ করেন।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, তারা ‘মাদ্রাসা’র কয়েকটি নথি থেকে ৪০ জনের পরিচয় পেয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও তাদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ৪০ জনের মধ্যে কয়েকজন খুবই সম্প্রতি হুজিতে যোগ দিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন তহবিল প্রদান করেছেন।

সিটি তদন্ত শাখার ডেপুটি কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, তারা হুজির অপারেশন উইংয়ের প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘তবে এই ৪০ জনের জঙ্গি বা অপরাধমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের কাছে এখনও কোনো তথ্য নেই।’

সাইফুল ইসলাম জানান, এই ৪০ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সিটিটিসি কর্মকর্তাদের মতে, গ্রেপ্তারকৃত মাইনুল ‘মাদ্রাসা’র আশেপাশের স্থানীয়দের তার মতামত বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, মাইনুল একজন কুখ্যাত জঙ্গি। তিনি আরেক জঙ্গি আবু জাণ্ডালকে জেলখানা থেকে বের করে আনার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের আগেই ২০১৫ সালে র‍্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

কয়েক বছর আগে জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে মাইনুল আবার হুজির কার্যক্রম সংগঠিত করতে শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে জেলে আটক জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

মাইনুলকে হুজি কার্যক্রম পুনরায় সংগঠিত করা, একটি পূর্ণাঙ্গ শূরা কমিটি গঠন করা, বিনিয়োগকারী ও সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা, প্রচুর কর্মী নিয়োগ করা এবং গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তদন্তকারীরা।

সিটিটিসির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মাইনুল স্বীকার করেছেন যে তিনি গণমাধ্যমকর্মীর পরিচয়পত্রটি ব্যবহার করেছেন। কারণ এই পরিচয়পত্র অবাধে চলাফেরায় সাহায্য করত এবং এর মাধ্যমে তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় অনায়াসেই প্রবেশ করতে পারতেন।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা জানার চেষ্টা করছি মাইনুল হুজির অন্যান্য সদস্যদের জন্য সাংবাদিক পরিচয়পত্র জোগাড় করতে পেরেছিলেন কি না। যিনি মাইনুলকে পরিচয়পত্র দিয়েছিলেন তাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। পরিচয়পত্র দাতা একটি নাম করা সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য। আমরা এখন এটাই খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি যে তিনি সব জেনে মাইনুলকে কার্ড দিয়েছেন, নাকি অজান্তে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago