দেশে প্রথমবারের মতো কিনোয়া চাষ

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ৩টি প্লটে আশানুরূপ ফলন
লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের তিনটি প্লটে কিনোয়ার চাষ করা হয়েছে। ছবি: স্টার

দেশে প্রথমবারের মতো উত্তর আমেরিকার ফসল কিনোয়ার চাষাবাদ শুরু হয়েছে। শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের গবেষণা শেষে মাঠ পর্যায়ে পাঁচটি প্লটে নতুন ফসলটির চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাটে দুটি, কুড়িগ্রামে একটি ও পটুয়াখালীতে দুটি প্লট আছে। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের তিনটি প্লটে জমি আছে ৭০ শতাংশ। তিনটি প্লটেই আশানুরূপ উৎপাদন হয়েছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চিনিপাড়া গ্রামের কৃষক ইসরাইল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি কিনোয়া ফসল সম্পর্কে জানতাম না। একটি বেসরকারি কোম্পানির কৃষিবিদ ইকবাল হাসানের পরামর্শে ২৫ শতাংশ জমিতে কিনোয়া চাষ করেছি। কিনোয়া চাষ করতে আমার খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। আশা করছি ২৫ শতাংশ জমি থেকে ৮০-৯০ কেজি ফলন পাব।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়ুয়া গ্রামের কৃষক মুকুল কুমার রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমিও ইকবাল হাসানের পরামর্শে ২৫ শতাংশ জমিতে কিয়ানা চাষ করেছি। তার কাছ থেকে বীজ সহায়তা পেয়েছি এবং তিনি এই ফসলের চাষ পদ্ধতি দেখিয়ে দিয়েছেন। কোনো রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছাড়াই জৈব সার ব্যবহার করে এই ফসলের চাষ করেছি। ফলন আশানুরূপ হয়েছে। মার্কেট সুবিধা পেলে আগামীতে বেশি জমিতে এ ফসল চাষ করব।’

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের তিনটি প্লটে জমি আছে ৭০ শতাংশ। ছবি: স্টার

বেসরকারি কোম্পানির কৃষিবিদ ইকবাল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতি শতাংশ জমিতে কিনোয়া চাষ করতে খরচ হয় ৫০০-৬০০ টাকা আর উৎপাদন হতে পারে ৪-৬ কেজি। আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনজন কৃষককে দিয়ে কিনোয়া চাষ করেছি পাইলটিং হিসেবে। ফলাফল খুবই সন্তোষজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কিনোয়ার ব্যাপক চাহিদা আছে। তবে, বাংলাদেশে এখনো সেভাবে মার্কেট গড়ে ওঠেনি। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে কিনোয়ার চাহিদা আছে। বাংলাদেশে ভোক্তাদের অগ্রিম চাহিদা দিয়ে আমদানিকৃত প্রতি কেজি কিনোয়া কিনতে হচ্ছে ১৬০০ টাকা দরে।’

ঢাকা শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রোনমির প্রফেসর ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কিনোয়া হলো হাউ প্রোটিন সম্পন্ন খাবার। এটিকে সুপার ফুডও বলা হয়। কিনোয়া অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে এবং লাইসিন সমৃদ্ধ, যা সারা শরীর জুড়ে স্বাস্থ্যকর টিস্যু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কিনোয়া আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ই, পটাসিয়াম এবং ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। রান্না করা হলে এর দানাগুলো আকারে চারগুণ হয়ে যায় এবং প্রায় স্বচ্ছ হয়ে যায়।’

খরা প্রবণ ও লবণাক্ত দুই ধরনের জমিতেই কিনোয়া চাষ সম্ভব। ছবি: স্টার

প্রফেসর ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস আরও বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর গবেষণার পর পাইলটিং করতে মাঠ পর্যায়ে কিনোয়া চাষ শুরু করেছি। ফলাফলও আশানুরূপ। আমার আবেদনের পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে কিনোয়া চাষের অনুমোদন দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। খরা প্রবণ ও লবণাক্ত দুই ধরনের জমিতেই কিনোয়া চাষ সম্ভব। নভেম্বরের মাঝামাঝি এ ফসল চাষ করে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঝামাঝি সময় ফলন ঘরে তোলা যায়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কিনোয়ার মার্কেট তৈরি হলে আমাদের কৃষক কিনোয়া চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। দেশে কিনোয়ার মার্কেট তৈরিতে কাজ চলছে। উৎপাদিত কিনোয়া বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে।’

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ, ‘লালমনিরহাটে কিনোয়ার চাষ শুরু হওয়ার বিষয়টা আমরা জানতে পেরেছি। শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এটি নিয়ে গবেষণা করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Israel welcomes 'all help' in striking Iran

Israel hits nuclear sites, Iran strikes hospital as conflict escalates

1d ago