লিচু বাগানে মধু চাষ
গাজীপুরের লিচু বাগানগুলো এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে। আর গাছের নিচে শোভা পাচ্ছে সারি সারি মৌ-বক্স। স্থানীয় চাষিরা এখন লিচু বাগানে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এই মৌসুমে লিচুর ফুল থেকে তিনবার মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালরা। ইতোমধ্যে দুইবার মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। মধু সংগ্রহ লাভজনক হওয়ায় চাষির সংখ্যা বাড়ছে। প্রাকৃতিক এ মধু সংগ্রহ করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন বাগান মালিক ও চাষিরা।
কিন্তু, চাষিদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে প্রশিক্ষণ দরকার বলে জানিয়েছেন মৌ চাষিরা।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গাজীপুর জেলায় লিচু আবাদের পরিমাণ ১ হাজার চারশ ৪৬ হেক্টর। বেশ কয়েকটি জাতের লিচু চাষ হয় গাজীপুরে। জেলায় সবচেয়ে বেশি লিচু চাষ হয় শ্রীপুরে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুয়ীদ উল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শ্রীপুর উপজেলায় সাতশ ২৭ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়। ওই উপজেলায় চলতি বছর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার আটশ ৯০ মেট্রিকটন। এবার উপজেলার বিভিন্ন লিচু বাগানে আট শতাধিক মৌ-বক্স বসানো হয়েছে।’
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের মৌ চাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শ্রীপুরে যে পরিমাণ লিচু বাগান আছে তাতে বসন্তকালে বাগানে বক্স স্থাপন করা হলে শত শত টন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘বসন্তের আবহাওয়া বৃষ্টি ও ঠাণ্ডামুক্ত থাকলে প্রতি একশ বক্সের বিপরীতে আট থেকে সাড়ে আটশ মধু সংগ্রহ করা যায়। চলতি বছর বসন্তের প্রথম দিকে কিছুটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া ছিল। এর মধ্যে একদিন বৃষ্টিও হয়েছে। এতে মৌমাছি সূর্যোদয়ের পরিবর্তে দুপুরে মধু সংগ্রহে বের হয়। ফলে, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় মধুর উৎপাদন কিছুটা কম।’
মৌয়াল জসীম উদ্দিন বলেন, ‘দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। চাক থেকে মেশিনে মধু নিষ্কাশন, বাক্স থেকে ফ্রেম বের করে মধু ছেঁকে আবার বসাতে হয়। অপ্রশিক্ষিত লোকের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ ও পরিচর্যা করতে গেলে মৌমাছির ক্ষতি হয়। চাকে মধু থেকে যায়, লার্ভা নষ্ট হয়ে মৌ মাছি মারা যায়।’
শ্রীপুর উপজেলা মৌ চাষি সমবায় সমিতির অধীনে ৩৫ জন সদস্য আছেন। চাষের সঙ্গে ২৫ জন সরাসরি জড়িত। কিছু সদস্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বেশিরভাগের প্রশিক্ষণ নেই। দুই বছর যাবত কোনো প্রশিক্ষণ হয় না। প্রশিক্ষিত চাষিরা সহজেই মধু সংগ্রহ ও পরিচর্যা করতে পারেন।
পিরুজালী গ্রামের মৌ চাষি মো. সজীব বলেন, ‘আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক অবস্থায় ২৫ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। মৌ-বক্স তৈরিতে এ অর্থ একেবারেই সামান্য। এ টাকায় মাত্র পাঁচটি বাক্স তৈরি করা যায়। পরে অবশ্য চাষে সফলতার ওপর ভিত্তি করে ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয়।’
কেওয়া গ্রামের লিচু বাগান মালিক মো. নূরুল আলম মাস্টার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর যাবত লিচু গাছে ফুল ফোটার পর কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। কৃষি অফিসের পরামর্শে ফুল বের হওয়ার সময় ও ফুল ঝরার পর লিচুর গুটি হলে কীটনাশক দেওয়া হয়। এতে মৌ চাষিদের মধু সংগ্রহে সুবিধা হয়।’
অপর লিচু বাগান মালিক ফরিদ হুসেন আকন্দ বলেন, ‘বাগানে মধু চাষিরা মৌ মাছির বাক্স স্থাপন করায় পরাগায়ন বেশি হয়। ফলে, লিচুর উৎপাদন কমপক্ষে ২৫ ভাগ বেশি হয়।’
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের গাজীপুরের উপ ব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, করোনা মহামারির আগ মুহূর্তে মৌ চাষে জড়িত ৯০জন চাষিকে ছয়টি ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরে মহামারির কারণে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তারপরও ইতোমধ্যে দুটি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও একটি প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি আছে।’
Comments