মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ, সাংবাদিকদের হুঁশিয়ারি

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও সেনাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এদিকে, সেনাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা দেশটিতে অশান্তি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার।
মিয়ানমারের মান্দালয়ে সেনা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের ছবিটি গতকাল তোলা। ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও সেনাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এদিকে, সেনাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা দেশটিতে অশান্তি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার। 

এছাড়াও সংবাদমাধ্যমকে ‘ফেইক নিউজ’ প্রচারের জন্য দোষারোপ করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার রয়টার্স জানায়, রাজধানী নেপিডোয় এক সংবাদ সম্মেলনে জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন জানান, সহিংসতায় ১৬৪ জন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন।

তাদের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তারাও এ দেশের নাগরিক।‘

তবে, দ্য অ্যাসিস্টেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) জানিয়েছে, দেশটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে কমপক্ষে ২৬১ জন নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, গতকাল সোমবার মিয়ানমারের মান্দালে শহরে আরও তিন জন নিহত হন।

মিজিমা নিউজ সার্ভিস জানায়, গতকাল সোমবার রাতে ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনী আবারও অভিযান চালায়। গুলিতে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৪ নভেম্বর মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে অং সান সু চি’র দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জয় পায়। গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর ওই নির্বাচনে জালিয়াতির কথা উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন সেনা সরকার। তবে ওই অভিযোগ নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান করেছে। সামরিক নেতারা নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো তারিখ ঘোষণা করেননি।

দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হলেও প্রতিদিনই সেনাবিরোধী আন্দোলনকারীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন।

জাও মিন তুন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ করে জানান, তারা নিরাপত্তা বাহিনীর নয় সদস্যকে হত্যা করেছে।

কারখানায় আগুনের একটি ভিডিও দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কি এদেরকে এই “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী” বলতে পারি? কোন দেশ বা সংস্থা এই সহিংসতাকে “শান্তিপূর্ণ” হিসেবে বিবেচনা করবে?’

তিনি আরও জানান ধর্মঘটের কারণে হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম পুরোপুরি চলছে না। কোভিড-১৯ সহ অন্যান্য গুরুতর রোগে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রতিবাদকারীদের ‘কর্তব্যবিমুখ’ ও ‘নীতিবোধহীন’ বলে উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি সু চি সরকার নির্বাচনে জালিয়াতি করেছে দাবি করে কারচুপির কয়েকটি ভিডিও দেখান। সেখানে কয়েকজনকে অর্থের বিনিময়ে ভোট দেওয়া ও অতিরিক্ত ব্যালট বাক্স নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়।

এছাড়াও সংবাদমাধ্যমকে ‘ফেইক নিউজ’ প্রচারের জন্য দোষারোপ করেন তিনি। তিনি জানান, দেশটিতে চলমান অস্থিতিশীলতায় সংবাদমাধ্যমগুলো ভুয়া খবর প্রচার করছে।

‘কমিটি ফর রিপ্রেজেন্টিং পিডাংসু হাল্টাও’ (সিআরপিএইচ) এর সঙ্গে কোনো সাংবাদিকের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত হওয়া একদল আইনপ্রণেতা ও রাজনীতিক সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিপ্লব’ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিআরপিএইচ নামে একটি দল গঠন করেন। দলটি মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজেদেরকে ‘ন্যায়সঙ্গত সরকার’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পারোয়ানা জারি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন-

মিয়ানমারে বিবিসির সংবাদকর্মী আটক

মিয়ানমারে গতকাল নিহত ৩৯, দুই জেলায় সামরিক আইন জারি

মিয়ানমারে এক দিনে নিহত ১৩, সেনাশাসনের বিরুদ্ধে ‘বিপ্লবের ডাক’

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দায় বিশ্ব সম্প্রদায়

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমারের ৭০ হাসপাতালে কর্মবিরতি

মিয়ানমারে ফেসবুক বন্ধ

মিয়ানমারে সেনাবিরোধী ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ

মিয়ানমারে এবার ইন্টারনেট বন্ধ

অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ, সু চির মুক্তির দাবিতে মিয়ানমারে বিক্ষোভ

মিয়ানমারে বিক্ষোভ দমনে জলকামান, গ্রেপ্তার

Comments

The Daily Star  | English
economic challenges for interim government

The steep economic challenges that the interim government faces

It is crucial for the interim government to focus on setting a strong foundation for future changes.

9h ago