বাংলাদেশের এই মন্দিরেই কেন যাচ্ছেন মোদি?

দেশের দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রামের একটি স্বল্প পরিচিত মন্দির হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভ্রমণ তালিকায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের পবিত্র এই স্থানটি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই পুরো স্পটলাইট যেন এই মন্দিরের ওপরই।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালী মন্দির।

দেশের দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রামের একটি স্বল্প পরিচিত মন্দির হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভ্রমণ তালিকায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের পবিত্র এই স্থানটি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই পুরো স্পটলাইট যেন এই মন্দিরের ওপরই।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালী মন্দির একটি অতি প্রাচীন পবিত্র স্থান। সেখানে হিন্দু ধর্মের শক্তির দেবী সতীর দেহাবশেষ পড়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়।

জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুজিব বর্ষ’ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের জন্য আগামী ২৬ মার্চ দেশে আসার কথা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির।

তার দুই দিনের সফর পরিকল্পনা অনুসারে, ২৬ মার্চ তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন এবং জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভাষণ দেবেন। সেদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

পরের দিন ২৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন মোদি। সেই সঙ্গে তিনি সাতক্ষীরা ও ওড়াকান্দিতে দুটি মন্দির পরিদর্শন করবেন।

তার এই মন্দির পরিদর্শনের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। তার মধ্যে একটি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন এবং অপরটি প্রার্থনা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দিতে ‘মতুয়া’ সম্প্রদায়ের পবিত্র মন্দিরে যাবেন পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত মতুয়াদের মন জয় করতে।

কিন্তু, যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে কেন যাচ্ছেন তিনি? কারণ হতে পারে, এটি ভক্তদের কাছে ‘শক্তি দেবতা’র মন্দির।

সফরের শেষ দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঈশ্বরীপুর গ্রামে গিয়ে এই মন্দিরে পূজা দেবেন। ধারণা করা হয় দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আনারি নামে একজন ব্রাহ্মণ এই মন্দির নির্মিত করেছিলেন।

তিনি যশোরেশ্বরী পীঠের জন্য ১০০ দরজার মন্দির তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাজা লক্ষ্মণ সেন এটি সংস্কার করেন এবং সর্বশেষ রাজা প্রতাপাদিত্য ষোড়শ শতাব্দীতে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এই মন্দিরটি ৫১টি শক্তি পীঠের মধ্যে একটি। এই পীঠগুলো ভারত ও ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ছয়টি পীঠ।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ৫১টি পীঠের মধ্যে ঈশ্বরীপুরের মন্দিরটি হলো সেই স্থানে যেখানে দেবী সতীর হাতের তালু ও পায়ের পাতা এসে পড়েছিল।

শক্তিপীঠের পেছনের গল্পটি হলো- দেবী সতীর আত্মহননের পর, তার স্বামী শিব তার দেহাবশেষ নিয়ে ধ্বংস নৃত্য করেন।

বিষ্ণু এই ধ্বংস থামানোর চেষ্টাকালে সতীর মৃতদেহে সুদর্শন চক্র ব্যবহার করেন। ফলে তার দেহ ছিঁন্ন হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পড়েছিল। হিন্দু পুরাণ অনুসারে যেসব জায়গায় তার দেহের অংশ পড়েছিল সেগুলোর প্রতিটিকে বলা হয় শক্তি পীঠ।

সূত্রমতে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান সেখানেই কোনো মন্দিরে গিয়ে পূজা করেন। এবার বাংলাদেশ সফরে পূজার জন্য দুটি শক্তিপীঠে যাবেন তিনি। এর একটি বরিশালের শিকারপুরে ও অপরটি ঈশ্বরীপুরে। ধারণা করা হয়, শিকারপুর দেবী সতীর নাক এসে পড়েছিল।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা করেছিলেন মোদি।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের খবরে পুরো এলাকাটিই উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরের সেবায়েত (তত্ত্বাবধায়ক) জ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের মন্দিরে আসবেন জেনে আমরা অভিভূত। আমাকে জানানো হয়েছিল, মোদি এখানে শুধু পূজা দিতে আসছেন।’

আরও পড়ুন: মোদির দ্বৈত অভিযান

Comments

The Daily Star  | English

BB to rescue problem banks

The Bangladesh Bank is set to rescue problem banks including some Shariah-based banks controlled by S Alam Group by managing liquidity or merging a few.

1h ago