মুখ ও মুখোশের মেলা!

মাস্ক পরেই সবাই প্রবেশ করছেন বইমেলায়।

যত মুখ তত মুখোশ। করোনার কারণে আমাদের মুখ মুখোশে ঢাকা। কেউ কেউ একটি মাস্কে বিশ্বাস না করে একাধিকও ব্যবহার করছে। তা ছাড়া, এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলায় প্রবেশ বাধ্যতামূলক।

দায়িত্বরতরা মাস্ক ছাড়া কাউকেই মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। অভিযোগ আছে, মেলায় ঢোকার পর অনেকেই মাস্ক খুলে ফেলছে।

মেলার মাঠে গিয়েও দেখা গেলো এমন দৃশ্য। কেউ কেউ মাস্ক মুখ থেকে নামিয়ে ফেলছেন। মাস্ক নামিয়ে কথা বলছেন, ছবি তুলছেন। হাসি-ঠাট্টা করছেন। ভুলে যাচ্ছেন মহামারির কথা। তথ্যকেন্দ্র থেকে বারবার এ ব্যাপারে সতর্ক করলেও তা মানছেন না অনেকেই। এমন একজনের কাছে মাস্ক খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেক গরম। দম বন্ধ হয়ে আসে। মাস্ক পরতে অভ্যস্তও না। তা ছাড়া, মেলার প্রাঙ্গণ অনেক বড়, কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায়?’

এবার মেলার প্রাঙ্গণ অনেক বড়। গতবার যেখানে আট লাখ বর্গফুট জায়গায় মেলা করা হয়েছিল, এবার সেখানে নেওয়া হয়েছে ১৫ লাখ বর্গফুট। ‘মেলায় প্রবেশের পর মাস্ক পরছে কি না, তা আরও কঠোরভাবে দেখা জরুরি। দরকার হলে তদারকি করতে হবে’, বলছিলেন প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার।

মেলায় কথা হয় কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসক মোহিত কামালের সঙ্গে। বইমেলা ও মানুষের চলাচল নিয়ে প্রশ্ন করতেই বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির জন্য মেলা হওয়া খুব জরুরি। কিন্তু, সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতনভাবে চলতে হবে। তাহলে মেলাটা সুন্দরভাবে মেইন্টেন করা সম্ভব।’

ডেইলি স্টার বুকস স্টলে দেখা হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসেনের সঙ্গে। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘মেলায় আসি, ভালো লাগে। এখনো কেনা শুরু করিনি। আমার প্রিয় লেখকের বই এখনো বের হয়নি। তালিকা করে রেখেছি, খোঁজ নিচ্ছি, এলে কিনব।’

মেলার অবস্থা ও বিক্রি কেমন?, জানতে চাইলে চারুলিপি প্রকাশক হুমায়ুন কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বড় জায়গায় মেলা, বিক্রি মোটামুটি চলছে। প্রত্যাশিত না। তা ছাড়া, আমাদের নতুন বইগুলো এখনো আসেনি। মাত্র চারটি এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনক আমার নেতা আমার; নুরুল ইসলাম নাহিদ ও পিয়াস মজিদের সম্পাদিত জয় বাংলা (সাক্ষাৎকার ১৯৭০-১৯৭৫) শেখ মুজিবুর রহমান; হায়াত মাহমুদের কাহিনী কথন’ সুদীপ্ত সালামের আলোকচিত্রপুর।’

গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩৯টি।

মেলার নতুন বই

বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩৯টি। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ ২০টি, উপন্যাস ২৮টি, প্রবন্ধ ১৩টি, কবিতা ৫০টি, গবেষণাবিষয়ক দুইটি, ছড়ার বই তিনটি, শিশুসাহিত্য দুইটি, জীবনী তিনটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চারটি, নাটক দুইটি, বিজ্ঞানবিষয়ক একটি, ইতিহাসবিষয়ক দুইটি, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক চারটি, ধর্মীয় বই একটি ও অন্যান্য বই চারটি। এর মধ্যে শহীদুল্লা কায়সারের ‘জেল থেকে লেখা পত্রাবলি’ (জার্নিম্যান); শামসুজ্জামান খানের ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ (কথাপ্রকাশ); ওয়াসি আহমেদের অনুবাদে ‘পাওলো কোয়েলহোর দি আর্চার’ (অবসর); আবু সাঈদ খানের ‘ধ্বনি প্রতিধ্বনি : সমকালীন সমাজ ও রাজনীতি’ (পাঠক সমাবেশ); নাসির আলী মামুনের ‘পূর্বদেশের মনীষী’ (আদর্শ); মোহিত কামালের ‘আত্মার বিলাপ’ (বিদ্যাপ্রকাশ) উল্লেখযোগ্য।

বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : মুক্তিযুদ্ধ ও নারী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মনিরুজ্জামান শাহীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহাম্মদ জাকীর হোসেন এবং একেএম জসীমউদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেলিনা হোসেন।

প্রাবন্ধিক বলেন, সাধারণত মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকাকে দেখা হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হিসেবে। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশে নারীসমাজের রয়েছে অসাধারণ ভূমিকা। দেশমাতৃকার টানে জীবন বাজি রেখে তাদের অনেকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ ও রণাঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সংগঠকের দায়িত্ব পালন, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দান, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে থাকা, শত্রুশিবিরের তথ্য সংগ্রহ করা, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখাসহ বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেন। নারীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ সহজ ছিল না।

শিখা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী প্রকাশক নজরুল ইসলাম বাহার।

প্রকাশনী আছে প্রকাশক নেই!

প্রকাশনী আছে প্রকাশক নেই! এবার যেন কথাটি বাস্তব। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন শিখা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী প্রকাশক নজরুল ইসলাম বাহার। মারা গেছেন আরও তিন জন প্রকাশক। তারা হলেন— সন্দেশ প্রকাশনীর লুৎফর রহমান চৌধুরী, সুবর্ণ প্রকাশের আহমেদ মাহফুজুল হক ও সর্বশেষ বইমেলা চতুর্থদিনে চলে গেলেন বইয়ের মানুষ মোহাম্মদ লিয়াকতউল্লাহ। প্রাচীন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘স্টুডেন্ট ওয়েজ’র প্রকাশক; প্রকাশনা-জগতের সকলের প্রিয় ‘লিয়াকত ভাই’।

শিখা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী প্রকাশক নজরুল ইসলাম বাহারের ছেলে কাজী নাফিছুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাবা মেলার সব কাজ প্রায় করে গেছেন। খুব সচেতন ও বই পাগল মানুষ ছিলেন। আমি একটা প্রাইভেট ব্যাংকে কাজ করতাম। বাবার অনুপস্থিতিতে হাল ধরলাম। এই মেলার প্রায় ২৪টি বই চূড়ান্ত করে গেছেন। আমি ও আমার ছোট বোন বাবার স্মৃতি ধরে আছি। মেলায় প্রতিদিন আসি। আশা রাখি লেখক-পাঠক সবার ভালোবাসা পেলে বাবার স্বপ্ন, প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নিতে পারব।’

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

7h ago