বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় এখন ফেরিওয়ালা

‘মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করেছি, আমার জীবনের সংগ্রাম এখনো থামেনি’
বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায়। ছবি: স্টার

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় ১৮ বছর বয়সে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেম। লড়াই করেছিলেন স্বাধীনতার জন্য। দেশের জন্য সংগ্রামে করে স্বাধীনতা আনতে পারলেও এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এখন সংগ্রাম করছেন নিজের জীবনের সঙ্গে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় (৬৮) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখনো কাঁদছি, সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু, প্রতিশ্রুতি মিললেও মিলছে না কোনো ফল।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করেছি। কিন্তু, আমার জীবনের সংগ্রাম এখনো থামেনি। প্রতিটি মুহূর্ত সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের কাজীরচওড়া গ্রামের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন ফেরিওয়ালা হয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মসলা বিক্রি করেন। এভাবেই তিনি জীবিকার যোগান দিচ্ছেন। প্রতিদিন সকালে বাইসাইকেল চড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরেন, ফেরেন সন্ধ্যায়। মসলা বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে চলছে সংসার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায়। ছবি: স্টার

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় অসুস্থ স্ত্রী বিমালা রানীকে (৫৮) নিয়ে একটি একচালা টিনের ঘরে বসবাস করছেন। ঘরটি মেরামতের সামর্থ্যও নেই তার। মসলা বিক্রি করে যা হয় তার অর্ধেক চলে যায় স্ত্রীর চিকিৎসায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় একজন সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তার নাম আছে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এবং তার ক্রমিক নাম্বার হলো ২০৫৯৪৪। তালিকায় না থাকা সত্ত্বেও তিনি সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

তার এই ক্রমিক নাম্বার ব্যবহার করে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার একই নামের আরেক ব্যক্তি দীর্ঘদিন থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। কিন্তু, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে মসলা বিক্রেতা প্রতাপ চন্দ্র রায়ের কাগজপত্র চূড়ান্ত হয়। তবে, সেই যাচাই-বাছাইয়ের ফল এখনো তিনি পাননি।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দিনমজুরি করে আয় করতে আমি দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছি। তাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকার কোনো খোঁজখবর রাখতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার সব ধরনের কাগজপত্র আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছিলাম।’

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন ফেরিওয়ালা হয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মসলা বিক্রি করেন। ছবি: স্টার

এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায়ের সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। শিগগির ফলাফল চলে আসবে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক আরও বলেন, ‘অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন। রংপুরের অপর ব্যক্তির সরকারি ভাতা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েছে। বিধি মোতাবেক সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

Comments

The Daily Star  | English

Trump calls for Iran's 'unconditional surrender' as Israel-Iran air war rages on

Israel and Iran attacked each other for a sixth straight day on Wednesday, and Israeli air power reigns over Iran, but needs US for deeper impact

6h ago