হেফাজতের হরতাল: নারায়ণগঞ্জে পুলিশের মামলায় আসামি বিএনপি ও জামায়াত

হেফাজতে ইসলামের হরতালে নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ছয় মামলায় বিএনপির সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ বিএনপি-জামায়াতের ১৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।
হরতালের দিন নারায়ণগঞ্জে সড়কে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের অবস্থান। ছবি: স্টার

হেফাজতে ইসলামের হরতালে নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ছয় মামলায় বিএনপির সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ বিএনপি-জামায়াতের ১৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।

সোমবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছয়টি ও রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ছয়টি মামলার বাদী পুলিশ এবং অন্য মামলাটির বাদী র‌্যাব-১১। পুলিশের মামলাগুলোতে ১৫৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২ হাজার ৩২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। র‌্যাবের করা মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ছবি: স্টার

পুলিশ ও বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, মামলায় পুলিশ উল্লেখ করেছে যে, হরতালে হেফাজতের ব্যানারে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, জামায়েত ইসলামী ও ছাত্র শিবিরসহ তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। তারাই মূলত সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়।

আসামিদের তালিকাতে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহবায়ক আবদুল হাই রাজু, মনিরুজ্জামান রবি, মহানগর যুবদল নেতা মন্তাজউদ্দিন মন্তু, টিএইচ তোফা, অকিলউদ্দিন ভূইয়া, জুয়েল প্রধান, লিয়াকত হোসেন লেকু, কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, সাদরিল হোসেন, বিএনপি নেতা আলী হোসেন প্রধান, ইমাম হোসেন বাদল, আইয়ুব আলী মুন্সী, মোশারফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম দেওয়ান, মুফতী রুবেল, শাহআলম মানিক, রিপন, সালাউদ্দিন, আকরাম, মালেক ওরফে গাট্টা মালেক, মান্নান ডাক্তার, গোলাম কিবরিয়া, তৈয়্যব হোসেন, কামাল হোসেন, মনির হোসেন, মো. সোহেল, মো. জুয়েল, ফয়সাল, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রওশন আলী, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু, ছাত্রদল নেতা সাগর, জামায়াত নেতা বশিরউল্লাহ, মাসুম বিল্লাহ, শিবির নেতা রাসেল প্রমুখ।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি পুলিশ বাদী হয়ে করেছে আর একটি র‌্যাব বাদী হয়ে করেছে। এর মধ্যে ছয়টি মামলা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ও একটি রূপগঞ্জ থানায় হয়েছে। এই সাত মামলায় ১৫৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আছে আরও প্রায় চার হাজার।’

ছবি: স্টার

কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রূপগঞ্জের মামলায় বিএনপির চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের মামলাতেও চার জন গ্রেপ্তার হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

হেফাজতের হরতালে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের কেন আসামি করা হয়েছে, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওইদিন যারা উপস্থিত ছিল তাদের আসামি করা হয়েছে। হেফাজতের কিছু কর্মী, বিএনপি ও জামায়াতের কিছু লোকজন ছিল, আমরা যাদের দেখেছি তাদের নাম এজাহারে আছে। যারা ওখানে ছিল এবং ইন্ধন দিয়েছে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের নামে মামলা করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক পরিচয় দেখিনি, আমরা দেখেছি কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের আসামি করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ, মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য ও ছবির উপর ভিত্তি করে মামলা হয়েছে।’

কর্মসূচি হেফাজতের হলেও তাদের কোনো নেতার নামে কেন মামলা নেই? জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা (হেফাজত) বের হয়নি। ৫০০ থেকে ৭০০ জনের মতো তারা কেন্দ্রীয় মসজিদে ছিলেন। তারা আমাদের কথা দিয়েছিলেন বের হবে না। প্রত্যেকটা থানা এলাকায় যারা বের হয়েছে, আমরা কথা বলেছি তারা ঠিকই ১০-১১টার মধ্যে মোনাজাত করে চলে গেছে। কিন্তু ভাঙচুর হয়েছে ১২টার পরে। সেখানে দুই-একজন পাবেন যারা হয়তো হেফাজতের সঙ্গে জড়িত। আর বেশির ভাগই প্যান্ট-শার্ট পরা, তারা হেফজতের লোক না। সুতরাং যারা করেনি হামলা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার তো কোন কারণ নাই। তারা কথা দিয়েছিলেন, কথা রেখেছেন। নারায়ণগঞ্জের যিনি আমির (হেফাজত) তিনি বের হননি। তিনি সব জায়গায় ফোনে বলে দিয়েছেন, “ভাই তোমরা মুনাজাত করে চলে যাও।” উনারা অহিংস, নারায়ণগঞ্জে তার প্রমাণ দিয়েছেন।’

বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটা সরকারের একটি সাজানো নাটক। সরকার নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপিকে হয়রানি করার জন্য এ নাটক করা হয়েছে। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী সেদিন উপস্থিত ছিল না। হরতালের ব্যাপারে বিএনপির কোনো নির্দেশনা ছিল না। মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সরকার ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়ার জন্য এগুলো করছে। বিএনপিকে হয়রানী করার জন্য এগুলো করছে।’

Comments