জিকে সেচ পাম্প এখনো বন্ধ, বাড়ছে কৃষকের উদ্বেগ

পদ্মা নদীতে পানি কমায় বন্ধ হয়ে যাওয়া কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের দুটি প্রধান পাম্প মেশিন চালু হতে সময় লাগবে আরও অন্তত চার থেকে পাঁচ দিন। এতে করে প্রকল্পের আওতায় থাকা বোরো চাষিদের উদ্বেগ বেড়েছে। দ্রুত সেচের ব্যবস্থা না হলে ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জিকের ইনটেক চ্যানেলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাম্প বন্ধ রাখতে হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা নদীতে পানি কমায় বন্ধ হয়ে যাওয়া কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের দুটি প্রধান পাম্প মেশিন চালু হতে সময় লাগবে আরও অন্তত চার থেকে পাঁচ দিন। এতে করে প্রকল্পের আওতায় থাকা বোরো চাষিদের উদ্বেগ বেড়েছে। দ্রুত সেচের ব্যবস্থা না হলে ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে ফারাক্কা চুক্তির আলোকে শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানির হিস্যা বণ্টনের প্রতি ১০ দিনের সাইকেল ৩১ মার্চ থেকে বাংলাদেশের অনুকূলে এলেও পদ্মায় তা পৌঁছাতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

সেচ প্রকল্পের পাম্প হাউস সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যার পর থেকে হাউসের দুটি মূল সরবরাহ (ডিসচার্জ) পাম্প বন্ধ হয়ে যায়।

পাম্প হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘পানির প্রয়োজনীয় প্রবাহ না থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যায় পাম্প দুটি। একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় আরও ১২টি বিভিন্ন ধরনের স্বয়ংক্রিয় সম্পূরক মেশিন।’

তিনি জানান, ২৩ মার্চ থেকেই পদ্মায় পানির স্তর কমে আসে। ওই সময় জিকের ইনটেক চ্যানেলে পানি পাওয়া যায় চার দশমিক এক থেকে চার দশমিক ১৮ মিটার, যা রিডিউসড লেভেল (আরএল)।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘পানি সরবরাহ চার দশমিক পাঁচ মিটার আরএলের নিচে নামলেই পাম্প মেশিনে পানি উত্তোলন করা যায় না।’

তিনি আরও জানান, ১৯৫৪ সালে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম এই সেচ প্রকল্পটি পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল। পদ্মায় পানির প্রাপ্যতা সাপেক্ষে চলে আসছে প্রকল্পটি।

পাম্প যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন পদ্মায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল মাত্র ২৩ হাজার কিউসেক। জিকে সেচ চালু রাখতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ প্রয়োজন অন্তত ৩৪ হাজার কিউসেক।

প্রতিবছর জানুয়ারির মধ্যভাগ থেকে শুরু হয় জিকে প্রকল্পে পানি সরবরাহ। এ বছর ১৫ জানুয়ারি সেচ পাম্প চালু করা হয়েছিল এবং অব্যাহত ছিল পানি সরবরাহ। চালুর পর থেকে পাম্প দুটি ১০ মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানোর কথা ছিল।

দুটি মৌসুমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার এক লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এই প্রকল্পের আওতায় সেচ কার্যক্রম চলে। এই চার জেলার মোট ১৩টি উপজেলায় এই সেচ কার্যক্রম বিস্তৃত।

জিকে প্রকল্পের হাইড্রোলজি বিভাগের সূত্রে জানা যায়, গঙ্গার পানি চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য পানি নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের প্রতিনিধি দল ফারাক্কা পয়েন্ট ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে। গত জানুয়ারি থেকে দুই দেশের যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রতি ১০ দিন অন্তর পানির পরিমাণ পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জানুয়ারিতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে প্রায় ৮০ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ ছিল। যা চুক্তির চেয়ে ২২ থেকে ২৩ হাজার কিউসেক কম।’

পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ১০ দিনের হিসাবের ভিত্তিতে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বণ্টন করা হয়। প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানির প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে। দ্বিতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে এবং অবশিষ্ট পানি পাবে ভারত। তৃতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি পানি প্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ফারাক্কায় পানি প্রবাহ ছিল ৫৯ হাজার ৫২২ কিউসেক এবং বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৩৬ হাজার ৩৯৩ কিউসেক। কিন্তু, ২০ মার্চ থেকে শুরু হয় ভারতের হিস্যা। যার ফলে ভারত গঙ্গা থেকে পানি সরিয়ে নেয়, যা শেষ হয় ৩১ মার্চ।

জিকে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জিকে পাম্পে পানি আনতে পদ্মা নদী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের একটি ইনটেক চ্যানেলের সহায়তা নিতে হয় বলে পানির সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে একটু সমস্যা হয়।’

তিনি জানান, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের অনুকূলে পানি ছাড়া হলেও তা পদ্মায় আসতে চার থেকে পাঁচ দিন লেগে যেতে পারে।

কৃষকরা ইতোমধ্যে বোরো রোপণ সম্পন্ন করেছেন। এখন ধান গাছের পরিচর্যা চলছে। এই সময়ে প্রচুর পানি প্রয়োজন। হঠাৎ পানি সরবরাহ না পেয়ে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

প্রকল্পের মূল পয়েন্ট কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পানি সংরক্ষণ খাল থেকে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুরে পানি সরবরাহের শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত ১৯৪ কিলোমিটার প্রধান খালে সেচযোগ্য পানি নেই।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাঁধ বাজার এলাকার কৃষক তরুণ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পানি না থাকায় ধানের পরিচর্যা করতে পারছি না। মুঠো-ডোবা পানিতে এখন ধানে সার প্রয়োগের সময়। কিন্তু, সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে পানি সরবরাহ না এলে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।’

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পানির প্রবাহ কমে গেছে পদ্মা নদীতে। এই প্রবাহ গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই প্রবাহের পরিমাণ মাত্র ২৩ হাজার কিউসেক।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ১ এপ্রিল থেকে ১০ দিন ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে।

আরও পড়ুন: পদ্মায় পানি কম, জিকে সেচ পাম্প বন্ধ

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

11h ago