আশার মেলা, হতাশার দোলাচলে!

ছবি: রবিউল কমল

আজ বৃহস্পতিবার বইমেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়। কিন্তু, বিকেল সাড়ে তিনটা বেজে গেলেও মেলার মাঠ একপ্রকার ফাঁকাই ছিল। একটু পর দেখা গেল দু’জন স্টল কর্মীকে। তারা জানান, এ সময়ে দর্শনার্থী খুব বেশি আসে না। দর্শনার্থীদের আসা শুরু হয় বিকেল চারটার পরে। এছাড়া, মেলার সময় কমে যাওয়ায় অনেকে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

বিকেল চারটা ১০ মিনিটের দিকে কথা হয় মাওলা ব্রাদার্সের প্যাভিলিয়নের থাকা এক বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় প্রকাশনা, তাই মেলায় প্যাভিলিয়ন নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এখনো বিক্রিতে ভালো সাড়া পাইনি। গত তিন বছর ধরে আমি মেলায় থাকি। এর আগে এমন অবস্থা কখনো দেখিনি।’

প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে বাংলা একাডেমি মেলার সময়সীমা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে। এখন থেকে মেলা বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়ে রাত নয়টার পরিবর্তে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শেষ করা হচ্ছে। সন্ধ্যা ৬টার পর নতুন কোনো দর্শনার্থীকে মেলায় ঢুকতে দেওয়া হয় না। অল্প সময়ের জন্য মানুষ সেভাবে আসে না বলে জানতে পেরেছি। এই বিষয়টি বাংলা একাডেমিকে অবহিত করেছে সমিতি। তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবে বলে জানিয়েছে।’

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বলব- স্বাস্থ্যবিধি মানলে মেলার সময় নিয়ে চিন্তা করা জরুরি। প্রয়োজনে ৩টায় শুরু না করে ৪টায় শুরু করুক, ৮টায় শেষ হোক। তাতে পাঠক আসবে, প্রকাশকও উপকৃত হবেন। অফিস শেষে মানুষ মেলায় আসার সুযোগ পাবেন,’ যোগ করেন তিনি।

আজ মেলার শিশুচত্বর ঘুর দেখা যায়, সেখানেও পাঠক উপস্থিতি খুবই কম।

ছোটদের প্রকাশনী শিলার প্রকাশক কাউসার আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এবার মেলায় এসে মনে হচ্ছে ধরা খেলাম। ৩ ইউনিটের স্টল নিয়ে প্রায় এক হাজার বই নিয়ে স্টল সাজিয়েছি। আজ মেলা শুরুর ২ ঘণ্টা হয়ে গেলেও ৫০০ টাকার বই বিক্রি করতে পারিনি। আমি দুই সমিতির সদস্য, তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই মেনে নেব।’

এ প্রসঙ্গে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনীর কর্ণধার  ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই মেলার সময় কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ বিকেলে আমরা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে বসেছি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মতামত জানানোর কথা বলেছেন।’

তবে, এ বিষয়ে জানতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও মেলা কমিটির আহ্বায়কের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

লিটলম্যাগ চত্বরে স্টলের কর্মীদের একা একা বসে থাকতে দেখা গেছে। দর্শক বা ক্রেতা চোখে পড়েনি। জলছবি ছোটকাগজের কর্মী মেজবাহ মুকুল জানান, এদিকে লোকসমাগম কম। তাছাড়া লিটলম্যাগ চত্বরে সব সময় নবীন লেখক সম্পাদকরা বেশি থাকে। আজ সেভাবে নেই।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা প্যাভিলিয়ন নিয়ে থাকি। কিন্ত, এবারে করোনার মধ্যে মেলায় অংশ নেওয়ার বিষয়টা ঝুঁকি মনে হওয়ায় অংশ নেইনি। মনে হয়েছে প্যাভিলিয়নে যে খরচ তা তোলা সম্ভব না এবার।’

চন্দ্রাবতী স্টলের বিক্রয়কর্মী সুমাইয়া মিতু বলেন, ‘করোনোর সংক্রমণ বাড়ছে, তবুও সবাই মেলা নিয়ে এখনো আশাবাদী। তবে, ইতিবাচক দিক হলো সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করছেন।’

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ দ্য ডেইলি স্টারকে মুঠোফোনে বলেন, ‘এবার মেলায় যাইনি, কিন্তু যারা আসছে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে বলে শুনেছি। পরিস্থিতির কারণে ভিন্ন সময়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তবে, পরিস্থিতি এখনো বদলায়নি। করোনোকালে বাসা ও অফিসে কীভাবে মেইনন্টেন করেছি তা নিয়ে এবার আমার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। বইটির নাম ‘করোনাকালে বহতা জীবন’। এটি অনেকটা আত্মজৈবনিক রচনা।’

এদিকে আজ মেলায় নতুন বই এসেছে ৭২টি। গল্পের বই ১৫টি, উপন্যাস দশটি, প্রবন্ধ ছয়টি, কবিতা ২২টি, শিশুসাহিত্য একটি, জীবনী দুইটি, মুক্তিযুদ্ধ একটি, বিজ্ঞান একটি, ইতিহাস তিনটি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক চারটি, রম্য/ধাঁধা একটি, অনুবাদ একটি, এবং অন্যান্য বই চারটি।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

8h ago