করোনা নয়, কাজ হারানোর ভয় বস্তিবাসীর

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে রাজধানীর বস্তিবাসীদের মধ্যেও তীব্র শঙ্কা শুরু হয়েছে। তবে, সেটি করোনার সংক্রমণ নিয়ে নয়। তাদের ভয় কাজ হারানো, আয় কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে।
রাজধানীর বস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা নেই। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে রাজধানীর বস্তিবাসীদের মধ্যেও তীব্র শঙ্কা শুরু হয়েছে। তবে, সেটি করোনার সংক্রমণ নিয়ে নয়। তাদের ভয় কাজ হারানো, আয় কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে।

স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে তাদের খুব একটা ভাবনা না থাকলেও, সম্প্রতি দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন বা সাধারণ ছুটির সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তিত তারা।

মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের গেট সংলগ্ন বাজারে গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে লোকজনের আনাগোনার কমতি নেই। বস্তিবাসীরা তাদের দৈনন্দিন কেনাকাটা করছেন। দিনমজুর, রিকশাচালকেরা ছোট-ছোট দোকানে গাদাগাদি করে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কোনো ধরনের সামাজিক দূরত্ব তো ছিলই না, এমনকি কারো মুখেই ছিল না মাস্ক।

তারা কেন মাস্ক পরেননি বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেননি বা তাদের মধ্যে করোনা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে কি না, জানতে চাইলে তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদেরও করোনা নিয়ে ভয় আছে। তবে, সেটি সংক্রমণের নয়, করোনার কারণে আয় কমে যাওয়া বা কাজ হারানোর ভয়।

বাজারে গিয়েও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বস্তিবাসীরা। ছবি: স্টার

সাততলা বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক মো. হারুন (৪০) গত বছর ড্রেজার-শ্রমিক ছিলেন। সে বছরের মার্চে দেশে সাধারণ ছুটি হলে তিনি চাকরি হারান। পরে, জুনের দিকে ঢাকায় এসে ওঠেন এই বস্তিতে।

তিনি বলেন, ‘গত বছর থেকে রিকশা চালাচ্ছি। এবারও করোনা বাড়ছে। লোকজনের বের হওয়া কমে যাওয়ায়, আয় কমতে শুরু করেছে। আর লকডাউন দিলে তো মনে হয় না খেয়ে মরতে হবে।’

‘করোনার ভয় আমাদেরও আছে। কিন্তু, তার চেয়ে বেশি ভয় কাজ হারানোর’, বলেন তিনি।

একই কথা জানান মহাখালীর কড়াইল, মিরপুরের চলন্তিকা, ভাষানটেক, পল্লবী বাউনিয়াবাদ, কল্যাণপুর পোড়া বস্তির বাসিন্দারা।

চলতি সপ্তাহে এসব বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে, বাসিন্দাদের কারো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে কোনো সচেতনতা নেই। স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মানা কিংবা মাস্ক পরতে দেখা যায়নি কাউকেই।

কড়াইল বস্তিতে মা-ছেলে হত্যার ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত সপ্তাহে দেখা যায়, শতাধিক বস্তিবাসী জড়ো হয়েছেন ঘটনাস্থলে। তাদের মধ্যে প্রায় সবাইকেই মাস্ক ছাড়া দেখা যায়।

ভিড় করা ও মাস্ক না পরা নিয়ে প্রশ্ন করলে তাদের মধ্যে কয়েকজনের দাবি, বস্তিতে করোনা নেই। বস্তিতে করোনা রোগী নেই বা করোনায় কেউ মারা যায়নি।

কয়েকজন জানান, গত বছরের করোনার কারণে তাদের বেশিরভাগই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এ বছর করোনার কারণে কাজ হারালে, আবারও তাদের উচ্চ সুদে ঋণ করে পরিবার চালাতে হবে বলে মনে করছেন।

স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন বস্তির কয়েকজন। ছবি: স্টার

গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে পূর্ব কাজীপাড়ার দুটি মহল্লায় নিম্ন আয়ের অন্তত শতাধিক নারী-পুরুষ পানির দাবিতে বিক্ষোভ করে রাস্তা অবরোধ করেন। সেখানেও দুই-একজন ছাড়া কারো মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি।

মাস্ক না পরার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, গত ২০ দিন ধরে তাদের ঘরে পানি নেই। বিভিন্ন উপায়ে কষ্ট করে দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

গৃহকর্মীর কাজ করেন বেদানা বেগম (৩০)। তিনি বলেন, ‘পানিই পাই না ২০ দিন। মাস্ক পরে কী হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর করোনার কারণে ছয় মাস কাজ ছিল না। এবারও যদি করোনা বাড়ে, তাহলেও তো কাজ থাকবে না। করোনা হয়ে মরে গেলেই তো বেঁচে যাব।’

শুধু স্বাস্থ্যবিধি নয়, বস্তিগুলোতে করোনার টিকা সম্পর্কেও সচেতনতা নেই। তারা জানেন না কীভাবে টিকা নিতে হয়। মিরপুর ১৪ নম্বরের আবুল বস্তির বাসিন্দা আবুল হোসেন (৫৫) ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের বস্তিতে প্রায় ২৫০ পরিবারের বসবাস। তাদের কেউ করোনার টিকা নেয়নি।

তিনি বলেন, ‘অনেকের আগ্রহ নাই টিকার বিষয়ে। কোথায়-কীভাবে টিকা নিতে হয় আমরা জানি না। তবে, যদি এখানে ক্যাম্প করে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে হয়তো অনেকেই টিকা নেবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বস্তিবাসীকে সচেতন না করলে, তারা কখনোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে না। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই। বস্তিতে করোনা ছড়ালে কী অবস্থা হবে তা এখনই ভাবার সময়।’

‘বস্তিবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সচেতন করার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Six killed in Cox’s Bazar landslides amid relentless rain

453mm of rain recorded in 24 hours as many areas of seaside town inundated

2h ago