‘কয়েকজনকে বড় করতে গিয়ে বাকিদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে’

aminul islam bulbul

আরও একটি নিউজিল্যান্ড সফরে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়েছে বেহাল দশা। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি দুই সিরিজেই হোয়াইটওয়াশড তো হতে হয়েছেই, দেখা যায়নি তেমন কোন লড়াই। এর আগে ঘরের মাঠে খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টেও একই পরিণতি দেখতে হয়েছে। দেশের ক্রিকেটের এই চূড়ান্ত খারাপ সময় অবধারিত ছিল বলে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তার ব্যাখ্যায় এসেছে দুই কারণ। 

তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ বিধ্বস্ত হওয়ার পর আমিনুল তার ফেসবুকে লেখেন , 'এটাই হবার কথা ছিলো। মূল কারণ সততার অভাব। ঘরোয়া ক্রিকেটকে গত কয়েক বছর যেভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে তাতে শুধু অপেক্ষায় ছিলাম ধসটা কখন হবে।'

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বসবার করা বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের অধিনায়ক দ্য ডেইলি স্টারকে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় মুঠোফোনে জানান, কেন তিনি মনে করেছেন এমনটা,  'আমাদের ক্রিকেট সিস্টেম (ক্লাব ক্রিকেট কাঠামো) শুরু হয় কোয়ালিফাই রাউন্ড থেকে। যেখান থেকে পরে প্রিমিয়ার লিগ। সেই জায়গাটায় পরিষ্কার কোন লিঙ্ক নেই। কোন সময়সূচী নেই। খবরের কাগজে অনেক খবর পাওয়া যায়। ঘরোয়া ক্রিকেটটা যেহেতু মুখ থুবড়ে আছে এইজন্য বলেছিলাম ধস অবধারিত ছিল।'

তারপরই আমিনুল ব্যাখ্যা করেন কী দুষ্টচক্রে আটকা আছে দেশের ক্রিকেট,  'এই যে খেলাগুলো হয় (প্রথম বিভাগ/দ্বিতীয় বিভাগ)। একটা খেলোয়াড়ের তো বিশ্বাস থাকতে হয় যে হ্যাঁ ভাল খেললে সামনে যাব। এই বিশ্বাসটা আমি দেখি না। শুনতে পাই বেশ কিছু ম্যাচ আগেই ক্লাবগুলো জিতে যায় (পাতানো)। কীভাবে আমার দল চ্যাম্পিয়ন হবে, কীভাবে আমি কাউন্সিলর বাড়াব (বিসিবি নির্বাচনে ক্লাব কাউন্সিলরা ভোট দিতে পারেন)। এই ধরণের বিষয়গুলো যখন ঢুকে যায় ক্রিকেটটা মূল পারফরম্যান্সের জায়গা থেকে সরে যায় আস্তে আস্তে।' এছাড়াও ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ নির্দিষ্ট ছকে, নির্ধারিত সময়ে না হাওয়ার আক্ষেপও তার।

বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক সমস্যা দেখেন আরেক জায়গায়। বাংলাদেশ দল হিসেবে খেলতে পারছে কিনা, সেই শঙ্কা দেখেন তিনি।  গোটা একটা দলের মধ্যে কেবল কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে বরাবরই মাতামাতি বেশি। সমর্থক থেকে গণমাধ্যম। চর্চাটা চলে এমনই। আমিনুল তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'দলের ভিতরে দল। পাঁচ পাণ্ডব বনাম বাকী খেলোয়াড়। সবার কথা বার্তায় দলের বাকী খেলোয়াড়দের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে হয়।'

তার মতে এতে করে বাংলাদেশ দলের হয়ে সম্মিলিত সমর্থনটা ব্যাহত হচ্ছে, কয়েকজনকে বড় করতে গিয়ে বাকিদের করা হচ্ছে অবমূল্যায়ন,  '১১ জন দলে খেলে। দলের সুপারস্টার বা নিউক্লিয়াস সবাই। তবে সব সময় দেখতে পাই বাংলাদেশ দলের জন্য একটা সম্মিলিত সমর্থন কমে যাচ্ছে। আমরা যখন বলি বাংলাদেশকে অমুকের দল, সেটা শুনতে খারাপ লাগে। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ই জাতীয় দলে যোগ্যতা নিয়ে আসে, সবাইকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। আমার কাছে মনে হয় মাঝে মাঝে অবমূল্যায়ন করা হয়।'

সাম্প্রতিক সময়ে দলের খারাপ পারফরম্যান্সের ক্রিকেটীয় কারণগুলো কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়ের অভিযোগ-অনুযোগে আড়ালে পড়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম কোন বড় জয়ের অধিনায়ক,   'সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ওয়ানডে জিতলে দুটো টেস্ট বাজেভাবে হেরেছি। নিউজিল্যান্ডে সব ম্যাচ বাজেভাবে হেরেছি। এতে দেখা যাচ্ছে আমরা ব্যস্ত কিছু তারকা খেলোয়াড়ের সাক্ষাতকার নিয়ে। কিছু তারকা খেলোয়াড়ের কি ঘটছে এইগুলো নিয়ে বেশি বেশি মাতোয়ারা হয়ে গিয়েছি। আমাদের উচিত ক্রিকেট নিয়ে কথা বলা। আমরা ক্রিকেটীয় ব্যাপারগুলোর ভেতরে আমরা ঢুকছি না। ক্রিকেটের যে মূল সমস্যা- টেম্পারমেন্টের সমস্যা, টেকনিকে সমস্যা, ফিটনেসে সমস্যা, অভিজ্ঞতায় সমস্যা তারপর ধরেন প্রয়োগে সমস্যা। এই যে ক্রিকেটীয় ব্যাপারগুলো ঢেকে দিয়ে বড় বড় তারকাদের জীবন, তাদের দর্শন ওইগুলা আমরা সামনে নিয়ে আসছি। ক্রিকেটীয় ব্যাপারগুলো আমাদের মিডিয়া মনে হয় একটু এড়িয়ে যাচ্ছে।'

'ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে আমরা যে হারলাম। আমার কাছে হারার কারণ মনে হয় আমাদের কোন এপ্লিকেশনই ছিল না। আমরা সঠিক খেলোয়াড়কে সঠিক জায়গায় খেলাইনি। আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে অনেক বেশি। আবার নিউজিল্যান্ডে গিয়ে কিন্তু আমরা, আমাদের কিছু খেলোয়াড় আছে নিউক্লিয়াসের মতো তাদের সব ফরম্যাটে খেলাচ্ছি। তাতে মনে হয় খেলোয়াড়ের আধিক্য নেই আমাদের। নিউজিল্যান্ডে দেখলাম ফিটনেস সমস্যা আছে। ফিটনেসের কারণে পাওয়ার হিটিং, ফিল্ডিংয়ে প্রভাব হচ্ছে। এই ব্যাপারগুলো গণমাধ্যম সামনে আনতে পারে। কেবল কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়দের অভিযোগ না।'

তবে খেলোয়াড়দের ভালো সময়ের সঙ্গে খারাপ সময়েও যেন বোর্ড পাশে থাকে সেই কামনা তার,  'খেলোয়াড়রা যখন খারাপ খেলে তাদের পাশে আমাদের থাকা উচিত। যারা জাতীয় দলে খেলে নিজেদের যোগ্যতায় খেলে। শুধু ভাল খেলার সময় না খারাপ খেলার সময়ও যেন বোর্ড পাশে থাকে।'  

Comments

The Daily Star  | English

Child victims of July uprising: Of abandoned toys and unlived tomorrows

They were readers of fairy tales, keepers of marbles, chasers of kites across twilight skies. Some still asked to sleep in their mother’s arms. Others, on the cusp of adolescence, had just begun to dream in the language of futures -- of stethoscopes, classrooms, galaxies. They were children, dreamers of careers, cartoons, and cricket.

10h ago