জোয়ারে তরমুজ খেত প্লাবিত, ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক কৃষক

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বেরিবাঁধের বাইরে পক্ষিয়া ও চরখালী এলাকার তরমুজ খেত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পূর্ণিমার প্রভাবে গত ৪ দিন ধরে ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমির তরমুজ খেত নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। এতে শতাধিক কৃষকের প্রায় দেড় কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বেরিবাঁধের বাইরে জোয়ারের পানিতে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির তরমুজ খেত প্লাবিত হয়েছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বেরিবাঁধের বাইরে পক্ষিয়া ও চরখালী এলাকার তরমুজ খেত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পূর্ণিমার প্রভাবে গত ৪ দিন ধরে ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমির তরমুজ খেত নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। এতে শতাধিক কৃষকের প্রায় দেড় কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গলাচিপা উপজেলার গলাচিপা ইউনিয়নের পক্ষিয়া গ্রামের তরমুজ চাষী নুর জামাল মাতব্বর বলেন, 'এ বছর আড়াই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর ফলন ভালো, দামও ভালো। কিন্তু গত বুধবার হঠাৎ করেই বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর স্ফীত জোয়ারের পানিতে তরমুজ খেত তলিয়ে যায়। কিছু তরমুজ তুলে আনতে পারলেও বাকি তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে।'

উত্তর চরখালী গ্রামের চাষী আব্দুল জলির হাওলাদারের তরমুজ খেতের ছবি তুলতে গেলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ‘আমার সব কিছু শেষ’, আক্ষেপ করে বলেন তিনি।

তরমুজের খেতে নেমে পানির মধ্যে হেঁটে হেঁটে ডুবে যাওয়া তরমুজগুলো নাড়াচাড়া করছেন আর আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, ‘আড়াই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। খরচ হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ টাকা। এনজিও থেকে ঋণ আর ধারদেনা করে খরচ যুগিয়েছি। বুধবার দুপুরে জোয়ারের পানিতে তরমুজ খেত তলিয়ে গেলে সব তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়। আগামি সপ্তাহে তরমুজগুলো বিক্রি করতে পারতাম। এখন দেনা কীভাবে শোধ করব সেই দুশ্চিন্তায় আছি।'

তবে বেরিবাঁধের ভেতরের জমিতে তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। চিকনিকান্দি ইউনিয়নের কৃষক হাসেম গাজী বলেন, 'আমি ৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে তিন লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বুধবার পর্যন্ত বিক্রি করেছি ৮ লাখ টাকার তরমুজ।'

যশোরের রূপদিয়া এলাকার তরমুজের পাইকারী ক্রেতা আব্দুল কাদের খান বলেন, ‘নয় বছর ধরে গলাচিপা থেকে তরমুজ কিনে যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছি। এবছর তরমুজের ফলন ও দাম  দুইটাই ভালো। বড় সাইজের প্রতিটি তরমুজ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মাঝারি সাইজের তরমুজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা আর ছোট সাইজের তরমুজ ১০ থেকে ২০ টাকায় পাইকারি বেচাকেনা হচ্ছে। ভালো দামে কৃষকরাও খুশি। গলাচিপার তরমুজ ঢাকা, নাটোর, বগুড়া, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া টাইঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়।

গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ বলেন, এবছর গলাচিপা উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। সব কিছু অনুকুলে থাকলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে এ উপজেলায়। সম্প্রতি স্ফীত জোয়ারের পানিতে বেরিবাঁধের বাইরের প্রায় ১০০ হেক্টর জমির তরমুজ খেত পানিতে ডুবে গেছে। যা টাকার মূল্যে দেড় কোটি টাকার মতো হবে।

এ বছর পটুয়াখালী জেলায় ২৪ হাজার ৭০৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত।

Comments

The Daily Star  | English

Singapore’s Financial Intelligence Unit seeks info on S Alam Group

The overseas assets of S Alam Group, including those in Singapore, came under scrutiny following recent media reports.

2h ago