গুড়ের উপাদান আখের রস নয়, ময়দা ও চিটাগুড়, আ. লীগ নেতার ১ মাসের জেল

একেবারে ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত এক আওয়ামী লীগ নেতার ভেজাল গুড়ের কারখানা। কোনো আইনের তোয়াক্কা করতেন না তিনি। লোক-সমাজ, জনস্বাস্থ্য নিয়ে তার মাথা ব্যথা ছিল না।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

একেবারে ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত এক আওয়ামী লীগ নেতার ভেজাল গুড়ের কারখানা। কোনো আইনের তোয়াক্কা করতেন না তিনি। লোক-সমাজ, জনস্বাস্থ্য নিয়ে তার মাথা ব্যথা ছিল না।

নিজের ইচ্ছে মতো চিটাগুড়, ফিটকিরি, চিনি, রঙ ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল আখের গুড় তৈরি করে আসছিলেন তিনি। প্রকাশ্য বলে বেড়াতেন তিনি ক্ষমতা নিয়ে চলেন ও সবাইকে ম্যানেজ করে এ সব করেন।

অবশেষে গতকাল শনিবার একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে ঐ আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ভাইকে এক মাসের করে জেল দেওয়া হয়। জরিমানা করা হয়েছে এক লাখ টাকা।

কুষ্টিয়ার খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বিশ্বাসের ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা। ছবি: স্টার

ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা হলেন দিলীপ বিশ্বাস। তিনি খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তার সব কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার ভিত্তি ও উৎস খোকসা তথা কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা।

গতকাল বিকেলে দিলীপ ট্রেডার্স নামের ওই ভেজাল আখের গুড় তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেন খোকসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসাহক আলী। তবে বিকেলে সেখানে প্রবেশ করলেও তিনি বিভিন্নভাবে বাধাপ্রাপ্ত হতে থাকায় কাজ শেষ করতে সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। রাতেই বসানো হয় আদালত। জরিমানা করা হয় এক লাখ টাকা। এছাড়াও, এক মাস করে জেলা দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা দিলীপ বিশ্বাস ও তার ছোটভাই রাজকুমার বিশ্বাসকে। একই সঙ্গে কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে খোকসা থানায়।

অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসাহক আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানটিতে নকল গুড় উৎপাদন করে আসছিলেন দিলীপ। ভেজাল গুড় তৈরির জন্য সেখানে মজুদ বেশকিছু কেমিক্যাল উদ্ধার করা হয়েছে যা জনস্বাস্থ্যবিরোধী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঐ কারখানাতে অভিযানের পরপরই উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নানাভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। বাধা সৃষ্টি করে আদালতের কার্যক্রম বিলম্বিত করার চেষ্টাও করেন তারা।

অভিযান পরিচালনায় বাধাপ্রাপ্ত হন কিনা এমন প্রশ্নটি এড়িয়ে গেলেও তিনি আরও জানিয়েছেন, আইনের মধ্যে থাকলে কোনো বাধাই বাধা নয়।

যেভাবে ‘গুড়’ তৈরি হতো

ঐ কারখানাতে ‘আখের গুড়’ তৈরি করা হতো। আখের গুড় তৈরি করতে আখের রস লাগবেই। কিন্তু, এখানে আখের রসের কোনো বালাই নেই। সেখানে গুড় তৈরির প্রধান উপাদান চিটাগুড় ও ময়দা। নির্দিষ্ট মাত্রায় ময়দা ও চিটাগুড়ের সঙ্গে পানি ও চিনি মিশিয়ে চুলায় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জ্বালিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়।

ওই মিশ্রণের সঙ্গে কাপড়ে দেওয়া লাল রঙ (মিনা রঙ) ও নানা রাসায়নিক পদার্থ যার অন্যতম হলো হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় তৈরি হয়। পরে ওই গুড় মাটির গামলা ও চিটাগুড়ের বাক্সে ভরে ঠান্ডা করা হয়।

চিটাগুড় সাধারণতো কালচে লাল হয়ে থাকে। চিটাগুড় থেকে গুড় তৈরিতে রঙের ব্যবহার করা না হলে গুড়ের রঙ গুড়ের মতো হবে না। এই ক্ষতিকর রঙের ব্যবহার হয়ে থাকে শ্রমিকদের ইচ্ছে মতো। রঙের পর ব্যবহার করা হয় ফিটকিরি। যাতে করে গুড়ের রঙয়ে সাদাটে ভাব আসে।

ম্যাজিস্ট্রেট ইসাহক আলী জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়ার কোনো স্তরেই স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা নেই।

তিনি আরও জানিয়েছেন, কারখানাটিতে প্রতি সপ্তাহে কয়েক টন গুড় তৈরি হচ্ছিল। এই গুড়ের অন্যতম ক্রেতা ছিলেন সাভার, কেরানীগঞ্জ, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নরসিংদী, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা।

আসন্ন রোজা উপলক্ষে কারখানায় উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এ জন্যে চট্টগ্রাম থেকে ২০০ টিন চিটাগুড় আমদানি করা হয়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam sons: They used fake pay orders even to legalise black money

Ashraful Alam and Asadul Alam Mahir, two sons of controversial businessman Mohammed Saiful Alam, deprived the state of Tk 75 crore in taxes by legalising Tk 500 crore in undisclosed income, documents obtained by The Daily Star have revealed.

1h ago