চোখ ধাঁধানো ওই পাসের জন্য ক্রুসের প্রতি ভিনিসিয়ুসের কৃতজ্ঞতা
ম্যাচের ২৭তম মিনিটের খেলা চলছে। নিজেদের রক্ষণে বল পায়ে রিয়াল মাদ্রিদের টনি ক্রুস। জার্মানির এই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার হঠাৎ খেয়াল করেন, প্রতিপক্ষ লিভারপুলের রক্ষণভাগ বেশ সামনে এগিয়ে আছে। দ্রুত একটি চিন্তা খেলে যায় তার মাথায়। উঁচু করে বাড়ান বল। একেবারে নিখুঁত যাকে বলে! গতিশীল ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়র দেন ক্রুসের ভাবনার পূর্ণতা। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে ধরে ফেলেন পাস। বুক দিয়ে বল নামিয়ে ডান পায়ের নিচু শটে এই তরুণ ব্রাজিলিয়ান খুঁজে নেন জালের ঠিকানা।
চলতি মৌসুমটা ক্রুসের কাটছে দুর্দান্ত। আরও একবার নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ তিনি রাখেন মঙ্গলবার রাতে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটের প্রথম লেগে লিভারপুলের বিপক্ষে দেন চোখ ধাঁধানো ওই পাস। দূরত্বের হিসাবে যা প্রায় ৬০ গজ! তা ভিনিসিয়ুস কাজে লাগানোয় এগিয়ে যায় রিয়াল। দলের দ্বিতীয় গোলেও ছিল ক্রুসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। শেষ পর্যন্ত আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে ম্যাচটা ৩-১ গোলে জিতে নেয় স্বাগতিকরা। ফলে সেমিফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সফলতম ক্লাবটি।
দাপুটে জয়ের পর স্প্যানিশ গণমাধ্যম মোভিস্তারের কাছে ক্রুসের বন্দনায় মাতেন ভিনিসিয়ুস, ‘টনি দুর্দান্ত একজন খেলোয়াড়। অসাধারণ। সে এই ক্লাবের একজন কিংবদন্তি। আর যখন সে (সেরা ছন্দে) খেলে, তখন সে এমন উচ্চমানে থাকে, যা আর কারও নেই। ওই পাসের জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।’
ছোট্ট ক্যারিয়ারেই গোল করতে না পারা নিয়ে বদনাম জুটেছে ভিনিসিয়ুসের। তবে সমালোচনার জবাব দিতেই যেন লিভারপুলের বিপক্ষে নেমেছিলেন তিনি! ৬৫তম মিনিটে লুকা মদ্রিচের পাসে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি। রিয়ালের জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১০৬ ম্যাচে এটাই তার প্রথম জোড়া গোলের ঘটনা।
সমালোচকদের নিয়ে ভিনিসিয়ুসের ভাষ্য, ‘মানুষ বাইরে থেকে অনেক কথাই বলে। কিন্তু আমি পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমার সতীর্থরা আমাকে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে (পোস্টের কাছাকাছি) পৌঁছানোর ও প্রয়োজনীয় গোলগুলো করার জন্য দরকারি শক্তির যোগান দেয়।’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে রিয়ালের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতাও হয়ে গেছেন ভিনিসিয়ুস (২০ বছর ২৬৮ দিন)। তালিকার শীর্ষে আছেন সাবেক তারকা রাউল গঞ্জালেজ। তাছাড়া, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে জোড়া গোল করা সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যেও দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন ভিনিসিয়ুস। তার উপরে আছেন কেবল কিলিয়ান এমবাপে।
ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরে রেকর্ড ১৩টি শিরোপা জেতা রিয়ালের প্রতি নিজের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও ঘটান ভিনিসিয়ুস, ‘এভাবে (ছন্দে) ফিরে আসতে পারাটা চমৎকার। এই জার্সিকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আর এর জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি। জয়টা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ৩-১ ভালো একটি ফল।’
দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে কোচ জিনেদিন জিদানের প্রশংসা মিলেছে ভিনিসিয়ুসের। তিনিও গুরুকে দেন কৃতিত্ব, ‘আমাদেরকে এভাবে চালিয়ে যেতে হবে। আমরা কঠোর অনুশীলন করছি যেন উল্টোটা ঘটে না। কোচ আমাদের মানসিক প্রশান্তি দেন এবং তিনি আমাদের কাছে যা কিছু চেয়েছিলেন, আমরা তা ভালোভাবে করতে পেরেছি।’
Comments