গ্যাস সংকটে ক্ষতির মুখে তিনশরও বেশি কারখানা
কাঁচপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ৩০০টিরও বেশি কারখানা বিশেষ করে টেক্সটাইল, স্পিনিং ও পোশাক শিল্প কারখানায় গত ১৩ মার্চ থেকে গ্যাস সংকটে পড়েছে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় কারখানাগুলোর প্রতিদিনের উত্পাদন কমে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে। স্টিল মিল ও গ্লাসওয়্যার কারখানাগুলোও লোকসান গুনছে।
কারখানা মালিকদের আশঙ্কা, গ্যাস সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক রিটেইলার ও ব্র্যান্ডগুলো অর্ডার বাতিল করতে পারে অথবা ব্যয়বহুল এয়ার শিপমেন্ট দাবি করতে পারে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মিথিলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আজাহার খান বলেন, ‘যখন গ্যাসের পূর্ণ চাপ থাকে তখন আমি প্রতিদিন দুই লাখ গজ কাপড় উত্পাদন করতে পারি। এখন বিকল্প উপায়ে মাত্র ২০ শতাংশ উত্পাদন করতে পারছি। এটা আমার পক্ষে খুবই ব্যয়বহুল।’
ভুলতার এনজেড টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সালেউদ জামান খান জানান, গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় গত ১৩ মার্চ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। কারখানাটির দৈনিক ১০০ টন সুতা উত্পাদন করার সক্ষমতা আছে। কারখানাটিতে প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
জামান খান বলেন, ‘এখন অর্ধেক কর্মী অলস বসে আছেন।’
উত্পাদন কমে যাওয়ায়, তারা প্রতিশ্রুত সময়সীমার মধ্যে পণ্য সরবরাহ নিয়ে চাপে আছেন।
জামান বলেন, ‘বায়াররা যেন সময়মতো পণ্য হাতে পায়, সেজন্য এয়ার শিপমেন্ট দাবি করছে।’
ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারাই মূলত সময়মতো পণ্য সরবরাহের জন্য এয়ার শিপমেন্ট দাবি করছেন। তিনি জানান, যে কোনও রপ্তানিকারকের জন্যই এয়ার শিপমেন্ট অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ছাড়া, মহামারির কারণে পশ্চিমা বাজারগুলোতে চাহিদা কম হওয়ায় উৎপাদনকারীর জন্যও এটি একটি অতিরিক্ত বোঝা।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মনসুর আহমেদ জানান, দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই শিল্পাঞ্চলের অন্তত ৪০টি বড় টেক্সটাইল মিলসহ ৩০০টিরও বেশি কারখানার উত্পাদন গত ১৩ মার্চ থেকে কমে গেছে।
সাধারণত টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিলগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের মান ধরে রাখতে গ্যাসের বেশি চাপের প্রয়োজন হয়।
মনসুর আহমেদ বলেন, বেশিরভাগ কারখানাই আসন্ন ঈদের বাজার ধরতে এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত ছিল। তারা যদি সময়মতো পণ্য উত্পাদন করতে না পারে তবে শত শত কারখানা সমস্যায় পড়বে। পহেলা বৈশাখ ও ঈদের বাজার ধরতে পারবে না।
আহমেদ জানান, গত ১৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকার হরিপুর পয়েন্টে গ্যাস লাইনে ছিদ্র হয়। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) সমস্যাটি সমাধানের আশ্বাস দিলেও ছিদ্রটি এখনও মেরামত হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে টিজিটিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে হরিপুরে গ্যাস সরবরাহের সমস্যা সমাধান করেছি।’
তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু তিনি জানাননি।
Comments