পুড়ে গেছে পৌর ভবন, খোলা আকাশের নিচে দায়িত্ব গ্রহণ
হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে গত ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা ভবন ও ভবন লাগোয়া পৌর মিলনায়তন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুনে সব পুড়ে যাওয়ায় গত ২ এপ্রিল পৌরসভার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় খোলা আকাশের নিচে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং পৌর পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দেড়শ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় বসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলররা নিজেদের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। পৌর ভবনের সামনের সড়কে দুটি তাঁবু টানিয়ে অস্থায়ী কার্যালয় তৈরি করে কাজ শুরু করেছেন তারা।
পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত নারী মেয়র নায়ার কবীর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো বিজয়ী হয়ে নতুন মেয়াদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
এর আগে গত ২৩ মার্চ মেয়রসহ ১২ ওয়ার্ডের ১২ জন কাউন্সিলর ও চারটি সংরক্ষিত আসনে চার জন নির্বাচিত নারী কাউন্সিলর চট্টগ্রামে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে শপথ গ্রহণ করেন।
দায়িত্বভার গ্রহণকালে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হয়ে মেয়র নায়ার কবীর বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠান আনন্দের হলেও এটি নস্যাৎ করে দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম নামে ধর্ম ব্যবসায়ীরা। তারা গান পাউডারের মাধ্যমে অগ্নিসংযোগ করে ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভাটিকে প্রাণহীন ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। সব নথিপত্র, রেকর্ড ও দেড়শ বছরের ঐতিহ্যকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পৌর ভবনের মতো একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে এভাবে ভস্মীভূত করে দেবে এটা কখনও ভাবা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে চার তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গান পাউডার ব্যবহারের কারণে এর দেয়াল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যেকোনো সময় এটি ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এই পরিস্থিতিতে পৌর নাগরিকরা সব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পৌর সচিব মো. শামছুদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী নিকাশ চন্দ্র মিত্র, সহকারী প্রকৌশলী মো. কাউসার আহমেদ, উপসহকারী প্রকৌশলী ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম কাউসার, বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মুখলেছুর রহমান প্রমুখ।
১৮৫৮ সালের ২ আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত উপমহাদেশে ‘সুশান আইন’ প্রবর্তনের পর ১৮৬০ থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত বাংলায় মিউনিসিপালটি প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। সে সময় ১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মিউনিসিপালটি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মিউনিসিপালটির পরিবর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নামকরণ করা হয়। সাড়ে পাঁচ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই পৌরসভার বর্তমান আয়তন প্রায় ১৮ বর্গকিলোমিটার।
আরও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব: ৪৫ মামলায় ৩৩ হাজার আসামি, নাম নেই হেফাজতের কারো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব: ৭ মামলায় হেফাজতের কারও নাম নেই
হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা
‘হেফাজতের তাণ্ডব ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব: ১১ মামলা, ১০ হাজারের বেশি আসামি, গ্রেপ্তার ২১
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ, রেলস্টেশন ভাঙচুর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবের ঘটনায় মামলা ৩, আসামি ৬৫০০
ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহত আশিকের
সরাইলে ফাঁড়িতে হামলা, ১৫ পুলিশ সদস্য আহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূমি অফিস, গণগ্রন্থাগার, আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে আগুন
Comments