চিকিৎসক-নার্সরা ১০ মাসেও পাননি কোয়ারেন্টিন ভাতা

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিতদের কোয়ারেন্টিন ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি ঘোষণার ১০ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো ডাক্তার, নার্স কিংবা চিকিৎসাকর্মী এই টাকা পাননি।
ছবি: আমরান হোসেন

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিতদের কোয়ারেন্টিন ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি ঘোষণার ১০ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো ডাক্তার, নার্স কিংবা চিকিৎসাকর্মী এই টাকা পাননি।

যেসব চিকিৎসাকর্মী কোয়ারেন্টিন সময়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় না থেকে নিজ আবাসস্থলে থেকেছেন সরকারি পরিপত্রে তাদের গত বছরের ১ জুলাই থেকে ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। রাজধানীতে কর্মরত একজন চিকিৎসক মাসে ১৫ দিন দৈনিক দুই হাজার টাকা করে ভাতা পাওয়ার কথা ছিল। অন্যদের পদ অনুযায়ী কোয়ারেন্টিন ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সমর্থক ডাক্তারদের সংগঠন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটি সরকারের চরম উদাসীনতার একটি নিদর্শন এবং তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার এবং চিকিৎসাকর্মীদের মাঝে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় যে চিকিৎসাকর্মীদের সব দায়িত্ব নিজেদের ঘাড়ে নিতে হবে, এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছুই করবে না।’

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ডা. আর্সলান আরও বলেন, সরকারের উচিত ছিল অন্তত চিকিৎসাকর্মীদের জন্য কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা। এ ব্যবস্থা না নিলে একজনের মাধ্যমে আরেকজনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

পরিপত্রে বলা হয়েছিল, করোনা রোগীদের চিকিৎসকেরা রাজধানীতে মাসে ১৫ দিন দৈনিক দুই হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। একজন নার্সের দৈনিক ভাতা এক হাজার ২০০ টাকা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ভাতা দৈনিক ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। রাজধানীর বাইরের ডাক্তার এক হাজার ৮০০, নার্স এক হাজার এবং হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীর জন্য দৈনিক ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

কোভিড-১৯ চিকিৎসা নীতিমালা অনুযায়ী, চিকিৎসায় জড়িত সবাই মাসে ১৫ দিন চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর পরবর্তী ১৫ দিন বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনা মহামারি আঘাত হানার পর অনেক সরকারি ডাক্তার ও চিকিৎসা কর্মী হোটেলে থেকে কোয়ারেন্টিনের সময়টা পার করেছেন।

তবে সরকার নির্ধারিত হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত বিল এবং সেবার মান নিয়ে শুরু থেকেই অভিযোগ উঠতে শুরু করে। পরে ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) এর মতো বেশ কয়েকটি ট্রেনিং একাডেমিকে আবাসনের জন্য ঠিক করা হয়।

তবে এরই মধ্যে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মীরা গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশেষ সম্মানী পেতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে গত ৯ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। বিশেষ সম্মানী হিসেবে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালের কর্মীদের দুই মাসের মূল বেতনের সমান অর্থ পাবেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (বাজেট-১ ও ২ অধিশাখা) ড. মো. এনামুল হক গতকাল বলেন যে, তারা ১৪টি হাসপাতালের এক হাজার ৮০০ জন চিকিৎসা কর্মীকে সম্মানী দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করেছেন।

‘বাকিদের সম্মানী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, এবং তা খুব দ্রুতই দেওয়া হবে’, বলেন তিনি।

কোয়ারেন্টিন ভাতার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে হোটেলের বকেয়া বিল সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা চেয়েছি। এই বিষয়টির নিষ্পত্তি হবার পর আমরা দৈনিক কোয়ারেন্টিন ভাতা নিয়ে কাজ শুরু করব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা দৈনিক কোয়ারেন্টিন ভাতা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago