করোনায় প্রাণহীন বইমেলা, ক্ষতিপূরণ চান প্রকাশকরা

Book Fair.jpg
বইমেলায় বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বই রোদে শুকানো হচ্ছে। ছবি: স্টার

একুশে বইমেলার চিরায়ত দৃশ্য- ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীরা লাইন ধরে মেলায় ঢুকছেন কিংবা শেষ দিনগুলোতে ক্রেতারা তালিকা ধরে বই কিনছেন। এবারের প্রাণের মেলার সেই দৃশ্যে ছেদ ঘটেছে। শুক্র-শনিবারেও জমেনি বইমেলা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল না স্টল, প্যাভিলিয়নে নেই ছুটোছুটি। স্টল কর্মীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কর্মহীন বসে থাকতে দেখা গেছে।

একই দৃশ্য বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও। সেখানেও দর্শনার্থীদের একেবারেই আনাগোনা নেই বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থার স্টল কর্মী রাকিব।

কারণ হিসেবে তিনি জানান, এখানে আসার সরাসরি পথ খোলা নেই, মেট্রোরেলের কারণে বন্ধ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা দোয়েল চত্বর হয়ে আসতে হয়। তাছাড়া বাংলা একাডেমিতে যে কিছু স্টল আছে, এটাও অনেকে জানেন না। তারা উদ্যান ঘুরে চলে যান।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে মেলায় আসা বিক্রেতারা মলিন মুখে বসে আছেন। মেলায় যারা আসছেন, তাদের অনেকেই ঘোরাফেরা আর ছবি তোলায় ব্যস্ত। স্টলের ধারেকাছেও নেই অনেকে। খুব কম সংখ্যক দর্শনার্থীকে বইয়ের স্টলে দেখা গেছে। তবে প্রথমা, তাম্রলিপি, ইউপিএল, কথা প্রকাশ ও পাঠক সমাবেশে ক্রেতাদের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। টিএসসি ও রমনার গেটের দিকের কয়েকটি স্টলেও এমন ভিড় দেখা গেছে।

এমন প্রাণহীন বইমেলা আগে কখনো দেখেননি বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। করোনা পরিস্থিতিতে বইমেলার এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) কর্ণধার মাহরুখ মহিউদ্দীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যে আন্তরিকতা আর প্রস্তুতি নিয়ে মেলায় এসেছি, তার ফল পাইনি। বিশেষ করে সময়ের বিভ্রান্তি খুব ভুগিয়েছে। এমনিতেই এ বছরের বিক্রি নিয়ে খুব উচ্চাশা ছিল না, কিন্তু  লকডাউনে অযৌক্তিকভাবে সময় সীমিত করায় ভাবনাতীত ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা আশা করব সবার কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে প্রকাশকদের ন্যায্যতার বিষয়গুলো যৌক্তিকভাবে ভাববেন। মেলার উদ্দেশ্য ছিল প্রকাশকদের একটা সম্ভাব্য বাণিজ্যিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। তার ঠিক উল্টোটা হতে যাচ্ছে এমন আশঙ্কা করছি।

ঐতিহ্যের প্রকাশক আরিফুর রহমান নাইম বলেন, ‘বেশিরভাগ প্রকাশক ক্ষতির মধ্যেই বইমেলায় অংশ নিয়েছেন। অনেকে এসেছেন গুদামজাতকৃত বইয়ের কিছুটা হলেও বিক্রি করে ক্যাশ-ক্যাপিটাল বৃদ্ধি করতে। কিন্তু তা আর হলো না। বরং বইমেলায় লগ্নিকৃত টাকাও তুলতে ব্যর্থ হতে চলেছে সিংহভাগ প্রকাশনীর। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন প্রণোদনার। প্রকাশকদের জন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসতে পারে।’

পাঠক সমাবেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম বিজু বলেন, ‘বইমেলায় সবার অবস্থা যেমন, আমারও তেমন। তবে ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকি এসব বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। প্রকাশক সমিতি, একাডেমি যা ভালো মনে করে, তাই করবে। পাঠক সমাবেশ সবসময় পাঠকের আগ্রহ ও রুচি দেখে বই প্রকাশ করে। সারা বছর বই বিক্রির জন্য আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হয়। আমরাও সেই দিক বিবেচনা করে কার্যক্রম হাতে নেই।’

বাতিঘরের সত্ত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ বলেন, ‘একটি বিশেষ সময়ে মেলা করছি। আর প্রতি বছর শেষ দিকের ১০ দিন মেলা জমে ওঠে। কিন্তু এবার শেষ দিকে লকডাউন ও দুই দিন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতির কারণে। অভিজ্ঞতা বলে- সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ চাইলে হয়তো পাব না। তবে সরকার চাইলে বই কেনার বাজেট বাড়াতে পারে। এতে করে কিছুটা হলেও আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে আনা যাবে। বিশেষ করে ছোট ছোট প্রকাশনাগুলো টিকে থাকবে।’

প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কেবল স্টলে যা লগ্নি করেছি, তাও উঠবে না এবার। প্রায় ৭০টি নতুন বই, ৩০ জন কর্মী নিয়ে আমাদের প্যাভিলিয়ন। ২০ লাখ টাকার ওপর খরচ। কিন্তু এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করব?’

‘আমরা আশা করব যে, বাংলা একাডেমি প্রকাশক সমিতির সঙ্গে আলাপ করে প্রকাশকদের জন্য কিছুটা ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেবে। কারণ প্রকাশকরা গত বছরও লস দিয়েছে, এ বছর ঝুঁকি নিয়ে মেলায় এসেছিল, আশা পূরণ হয়নি। ভর্তুকি না পেলে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে প্রকাশনা ব্যবসা,’ বলেন তিনি।

জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নতুন সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বসব, এখনো বসিনি। আলাপ-আলোচনা করে কীভাবে একটা সমাধান করা যায় দেখব। মেলার মধ্যে সমাধান সম্ভব না, মেলা শেষ হোক, সবার সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলা একাডেমির মাধ্যমে সরকারকে প্রস্তাব দেব।’

এ বিষয়ে জানতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও মেলা কমিটির আহ্বায়কের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

এখন বইমেলা শুরু হয় দুপুর ১২টায় এবং চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ১০৮টি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আগামী ১২ এপ্রিল শেষ হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

3h ago