হুমায়ূন আহমেদের হারিয়ে যাওয়া চিত্রকর্ম কুমিল্লায় প্রদর্শনের অভিযোগ
২০১২ সালে নিউইয়র্ক থেকে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া নন্দিত লেখক, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের আঁকা একটি চিত্রকর্ম কুমিল্লার এক প্রদর্শনীতে প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে।
প্রয়াত লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন অভিযোগ করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আয়োজক কর্তৃপক্ষ বৈধভাবে চিত্রকর্মটি নেননি। এটি জনপ্রিয় সাহিত্যিকের নিউইয়র্ক থেকে চুরি যাওয়া পাঁচটি চিত্রকর্মের একটি।’
জলরঙে আঁকা চিত্রকর্মটিতে একটি যুবক একটি গাছের ছায়াতলে দাঁড়িয়ে আছে বলে তিনি জানান।
দ্য ডেইলি স্টারকে শাওন বলেন, ‘কুমিল্লায় প্রদর্শিত চিত্রকর্মটি ২০১২ সালে নিউইয়র্ক বইমেলায় প্রদর্শিত ২৫টি চিত্রকর্মের একটি।’
সে সময় নিউইয়র্কে অবস্থানকারী রুমা চৌধুরী (রুমা সাহা) হুমায়ূন আহমেদের পাঁচটি চিত্রকর্ম বিনা অনুমতিতে রেখে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন শাওন।
এই মুহূর্তে রুমা তার বর্তমান স্বামী মঞ্জুরুল আজিম পলাশের সঙ্গে কুমিল্লাতে আছেন। পলাশ কুমিল্লায় আয়োজিত প্রদর্শনীর আয়োজক। ২০১২ সালে নিউইয়র্কে আয়োজিত বইমেলার আয়োজক ছিলেন রুমার সাবেক স্বামী বিশ্বজিৎ সাহা। যিনি আমেরিকায় বাংলা বইয়ের পাইকারি সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময়ে বিশ্বজিৎ সাহা তার একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
কুমিল্লায় ১০ দিনব্যাপী প্রদর্শিত ‘বাংলাদেশ ভারতের ১০০ শিল্পীর আঁকা নির্বাচিত চিত্র প্রদর্শনী’র আয়োজক লিংক বাংলার কর্ণধার মঞ্জুরুল আজিম পলাশ ফেসবুক প্রচারণায় অন্য কোনো শিল্পীর নাম উল্লেখ না করে হুমায়ূন আহমেদের আঁকা চিত্র প্রদর্শনীর কথা উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে জানতে রুমা চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কুমিল্লায় প্রদর্শিত ছবিটি আসল নয়। এটি একটি কপি।’
কেন তারা হুমায়ূন আহমেদের চিত্রকর্ম বলে প্রচারণা চালিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান এবং দাবি করেন নিউইয়র্ক বইমেলায় প্রদর্শিত মূল ছবিটি হারিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কে চিকিৎসার সময়ে হুমায়ূন আহমেদ ও তার পরিবারের সঙ্গে আমার আসা-যাওয়া ছিল। আমি হুমায়ূন আহমেদকে আঁকাআঁকিতে উৎসাহিত করতাম। এতে তার পরিবারের অবদান ছিল না।’
দ্য ডেইলি স্টারকে রুমা বলেন, ‘আমি হুমায়ূন আহমেদকে চিত্র প্রদর্শনীতে উৎসাহিত করি। তিনি আমাকে দেশে দেশে তার চিত্র প্রদর্শনীর করতে মনোনীত করেছিলেন।’
২০১২ সালের ২৯ জুন নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের আঁকা ২১টি চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয় বলে তিনি জানান।
নিউইয়র্কে প্রদর্শনীর কোনো তালিকা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তার কাছে কোনো তালিকা নেই।
রুমা বলেন, ‘প্রদর্শনী থেকে হুমায়ূন আহমেদের একটি চিত্রকর্ম হারিয়ে গেলে সেখানকার স্থানীয় পুলিশে কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কুমিল্লায় প্রদর্শিত চিত্রকর্মটি নিউইয়র্কে হারিয়ে যাওয়া চিত্রকর্মের একটি কপি।’
নিউইয়র্কে প্রদর্শিত ২১টি চিত্রকর্মের মধ্যে ২০টি হুমায়ূন আহমেদের মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল বলে জানান রুমা।
তবে, হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া চিত্রকর্মের অবস্থান নিয়ে তারা কিছুই জানেন না বা রুমাও তাদেরকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি।’
নিউইয়র্কে হারিয়ে যাওয়া চিত্রকর্মের সংখ্যা পাঁচটি বলে পুনরায় উল্লেখ করেন শাওন। একইসঙ্গে প্রদর্শিত চিত্রকর্মটি আসল না কপি তা পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাইয়ের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে কুমিল্লার ঐতিহ্যের গবেষক ও লেখক আহসানুল কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিনা অনুমতিতে কারো কোনো শিল্পকর্ম বা চিত্র প্রদর্শন অনৈতিক।’
একই কথা বলেন লেখক কুলদা রায়। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টির যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য খুঁজে বের করার আহবান জানান।
Comments