পুলিশকে সন্ত্রাসীদের তথ্য দিয়ে হামলার শিকার

নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে আসাদুলের

কুষ্টিয়ায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে সন্ত্রাসীদের তথ্য দিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়া আসাদুল হকের বিপদ যেন আরও বেড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। আসাদুলের হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি, এর বিপরীতে আদালত থেকে জামিন নিয়ে তাকে ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন আসামিরা। তাই জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডিও করেছেন আসাদুল। তবুও, শঙ্কা কাটছে না তার।
হামলায় আহত আসাদুল। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে সন্ত্রাসীদের তথ্য দিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়া আসাদুল হকের বিপদ যেন আরও বেড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। আসাদুলের হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি, এর বিপরীতে আদালত থেকে জামিন নিয়ে তাকে ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন আসামিরা। তাই জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডিও করেছেন আসাদুল। তবুও, শঙ্কা কাটছে না তার।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, যে কোনো হামলার শিকার হতে পারেন বলে একধরনের আতঙ্ক কাজ করছে তার মধ্যে। এ কারণে বাইরেও বের হন না তিনি। ফলে, তার ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ আছ এবং ধীরে ধীরে দুর্বিষহ জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

তবে, পুলিশ জানিয়েছে- তারা ওই ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাপুর গ্রামের আসাদুল হক। গত ১২ মার্চ সকালে তার বাড়ির পাশে পদ্মা নদীতে তিনটি গুলির শুনতে পান। বিষয়টি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে জানান। পরে ওই সেবা থেকে তার সঙ্গে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার (ডিউটি অফিসার) সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল ছিল ভেড়ামারা থানার কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্পের আওতায়। পরে ওই ক্যাম্পের ইনচার্জ পুলিশের উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে তাকে যোগায়োগ করিয়ে দেয়া হয়। তিনি পুরো ঘটনা তাকে জানান।

এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর দুপুর একটার দিকে এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন আসাদুলকে ফোন দেন এবং বলেন ‘তুই ফাজলামি করিস, আমি খবর নিয়ে দেখেছি এলাকায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ এর কয়েক মিনিটের মধ্যে আট জন যুবক তার বাসায় প্রবেশ করে। তারপর তাকে ‘পুলিশকে খবর দিয়েছিস’ বলে গালাগালি করে রামদা দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপায়। আসাদুলের চিৎকারে আশপাশের মানুষ তাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে পরদিন ১৩ মার্চ ঘটনার বিবরণসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ভেড়ামারা থানা ওই অভিযোগটি মামলা (নং ১৭/৬২) হিসেবে নথিভুক্ত করে। একইসঙ্গে অভিযুক্ত এসআই জাহাঙ্গীর হোসেনকে কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে প্রত্যাহার করে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।

ভেড়ামারা থানার ওসি শাহাজালাল জানান, এ ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মামলার আট আসামি বিভিন্ন সময়ে কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

আসাদুল জানান,  দুর্বৃত্তরা জামিন পেয়েই এলাকায় এসেছে। তাকে ফোনে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। তার ভাই সিএনজি চালক বকুল শিকদারকে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ফোনে হুমকির পর গত ২৫ মার্চ ভেড়ামারা থানায় জিডি (১১৭২ নং) করেন আসাদুল। পুলিশ তদন্ত করতে এসেছিল বলে জানান তিনি।

‘পুলিশ সাক্ষী চায়। টেলিফোনে দেওয়া হুমকির কী সাক্ষী হয়, তারপরও মায়ের নাম দিয়েছি,’ বলেন আসাদুল।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঘটনার দিন হামলাকারীদের হাতে রিভলবার ছিল। যা পুলিশ মামলায় উল্লেখ করেনি। এই আসামিদের রিমান্ডে নিলে অস্ত্র উদ্ধার করতে পারত পুলিশ। কিন্তু, তা করা হয়নি।’

পুলিশের ভাষ্য

এ ঘটনার পর জেলা পুলিশ অভিযুক্ত এসআই জাহাঙ্গীর হোসেনকে কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে প্রত্যাহার করে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে রাখা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন খাঁনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- ভেড়ামারা সার্কেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত, মিরপুর সার্কেলের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আজমল হোসেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিভাগীয় তদন্ত চলছে, শেষ না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

আসাদুলের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভেড়ামারা থানার উপপরিদর্শক প্রকাশ রায় বলেন, ‘আসামিদের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মামলার তদন্ত শেষের দিকে। দু’এক সপ্তাহের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসামিরা নিজেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে পরে জামিন পেয়েছেন।’

রিমান্ডে নেওয়ার প্রসঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘আত্মসমর্পণ করলে সাধারণত রিমান্ডের আদেশ দেন না বিচারক।’

জামিনে বাঁধা দেওয়া যেত কিনা জানতে চাইল তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।

কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে ক্লোজ রাখা হয়েছে। তার আর ওই ক্যাম্পে ফেরত যাওয়ার সুযোগ নেই। তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন:

পুলিশকে সন্ত্রাসীদের তথ্য দিয়ে হামলার শিকার, ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সন্ত্রাসীদের কাছে তথ্য পাচারের অভিযোগে কুষ্টিয়ার সেই এসআই প্রত্যাহার

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago