ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে ‘সন্ত্রাস’ রহস্য

২০২০ সালের জুলাইয়ে আগুন লাগার কারণে নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রের একটি ভবন পুড়ে যায়। ২০ জুলাই, ২০২০, ছবি: রয়টার্স

ইরানের নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে সংগঠিত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গতকাল রোববার এটিকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে অভিহিত করেছে দেশটির পারমাণবিক শক্তি সংস্থা।

ইরানের রেভ্যুলিউশন গার্ড করপসের (আইআরজিসি) টেলিগ্রাম চ্যানেলের বরাত দিয়ে আজ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আকবর সালেহি বলেছেন, ‘এই আক্রমণ প্রমাণ করে পরমাণু বিজ্ঞানে ইরানের অগ্রগতি ও অর্জনে শত্রুরা হতাশ, এমনকি পারমাণবিক আলোচনা নিয়েও। এ কারণে তারা নাতানজ (পারমাণবিক কেন্দ্র) পরমাণু প্রযুক্তির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।’

সালেহি আরও বলেন, ‘যারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, ইরান তাদের জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে।’

এর আগে, ইরান সরকার ভূগর্ভস্থ এই পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৫০টিরও বেশি নতুন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সেন্ট্রিফিউজ চালু করার কথা জানিয়েছিল। এর একদিন পর রোববার নাতানজ ওই ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেন ইরানের কর্মকর্তারা।

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দ বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। তবে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান চলছে এবং পরে আরও তথ্য জানানো হবে।’

স্থানীয় একটি সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য ইরানি কর্মকর্তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই কেন্দ্রটিতে হামলা হতে পারে। তাদের ধারণা, এই প্ল্যান্টটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। কারণ পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ইরান পশ্চিমা স্বাক্ষরকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিল।

ইরানের পার্লামেন্টের একজন সদস্য মালেক শরিয়তি নিয়াসার বলেছেন, ‘জাতীয় পারমাণবিক দিবসে নাতানজ ব্ল্যাকআউট সন্দেহজনক ও নাশকতার কারণে হতে পারে। কারণ ইরান পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চেষ্টা করছে।’

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার একজন মুখপাত্র রোববার ইমেইলের মাধ্যমে সিএনএনকে জানিয়েছেন, সংস্থাটি মিডিয়া রিপোর্ট সম্পর্কে অবগত ছিল।

তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’

শনিবার ইরানের জাতীয় পারমাণবিক প্রযুক্তি দিবসের ১৫তম বার্ষিকীতে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এই প্ল্যান্টে নতুন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সেন্ট্রিফিউজ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ‘শান্তিপূর্ণ ও নাগরিক উদ্দেশ্যে’ হলেও দেশটির পারমাণবিক ক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী।

গত বছরের জুলাইয়ে আগুন লাগার কারণে নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রের একটি ভবন পুড়ে যায়। ইরান সরকার তখন বলেছিল, এটি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আক্রমণ। ২০১০ সালে স্টক্সনেট সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে ছিল নাতানজ। দেশটির নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাইবার হামলাটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

চলতি সপ্তাহে ভিয়েনায় ইরান ও পারমাণবিক চুক্তির অন্যান্য স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আলোচনা শেষ হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারাও ভিয়েনায় ছিলেন এবং অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন— যারা এখনো এই চুক্তিতে আছেন। তবে, তারা সরাসরি ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেনি।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বের হয়ে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তাই ইরানের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ট্রাম্প যুগের সমস্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে এবং চুক্তি মেনে পুনরায় পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে আসতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Step up diplomacy as US tariff clock ticks away

Bangladesh must intensify trade diplomacy to protect garment exports from steep US tariffs as the clock runs down on a three-month reprieve, business leaders warned yesterday.

10h ago