করোনাভাইরাসের গ্রাম ভ্রমণ!

পরিবারসহ ট্রাকে করে গ্রামে যাচ্ছেন ইটভাটার শ্রমিকরা। ছবিটি গতকাল শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকা থেকে তুলেছেন সাজ্জাদ হোসেন।

সরকারি আমলাদের হাঁস পালন, মুরগি পালন, পুকুর খননসহ আরও বহুবিধ বিষয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণের খবর সংবাদমাধ্যম মারফত জানতে পারি। এসব সংবাদ থেকে এটা বোঝা যায় যে, বিদেশ সফরে যেয়ে জ্ঞান অর্জনে কতটা আগ্রহী আমাদের আমলাতন্ত্র। গত এক বছরে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সফর নেই বললেই চলে। তবে, এই সময়ে হতে পারত সবচেয়ে কার্যকরী ও সময়োপযোগী একটা প্রশিক্ষণ সফর। লকডাউন পদ্ধতি ও এর কার্যকারিতা। ইউরোপের কোনো দেশ বা এশিয়ার উন্নত কোনো দেশে যেয়ে হাতে-কলমে শিখে আসতে পারতেন কীভাবে লকডাউন দিতে হয় আর কীভাবে তা শিথিল করতে হয়।

কারণ, লকডাউনের নামে বাংলাদেশে গত দুই সপ্তাহ ধরে যা চলছে, তা হাসির পর্যায়ে চলে গেছে। যদিও সরকার কাগজে-কলমে ‘লকডাউন’ বলছে না, কিন্তু মুখে ঠিকই সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন ‘লকডাউন’। গত বছরের ৬৬ দিনের লকডাউন যে আমলাদের কিছুই শেখাতে পারেনি, তাই সরকারের ঘোষিত ‘চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা’ বা ‘চলাচল সীমিত’ ঘোষণার মাধ্যমে পরিষ্কার।

সব বন্ধ, তবে বইমেলা চলবে। কারণ, এটা জাতির জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে কলকারখানা খোলা, তারপর গণপরিবহন, তারপর শপিংমল, তারপর একে একে সব। কাজের কাজ যেটা হলো— করোনাভাইরাসে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও শনাক্ত।

এরপর ঘোষণা এলো ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনের। প্রথমেই ঘোষণা দিলো কলকারখানা চলবে, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, আর ব্যাংক বন্ধ। পরে ঘোষণা আসলো ব্যাংক চলবে সীমিত পরিসরে। গণপরিবহন চলবে না, তবে চলবে কলকারখানা ও ব্যাংক।

যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই সপ্তাহের জন্যে পরিপূর্ণ লকডাউন না হলে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞায় কোনো কাজ হবে না। তারা একইসঙ্গে এটাও বলেছেন যে, লকডাউন দিতে হবে তাৎক্ষণিক। কারণ সময় দিলে সব ছুটবে গ্রামের দিকে। হয়েছেও তাই। সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পরে সব যেন গ্রামমুখী। করোনা এবার শহর থেকে গ্রামে!

এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের হার বেশি মূলত শহরে। যদিও গ্রামের দিকে পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা কম, গ্রামের মানুষের আগ্রহও কম। তবে, দেশে যেহেতু যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলের স্ট্রেইন পাওয়া গেছে, যা অতি দ্রুত সংক্রমণে ছড়ায়, তাই বলাই যায় করোনাভাইরাসের গ্রাম ভ্রমণ হয়তো নতুন করে সংক্রমণের দিক উন্মোচিত করবে।

করোনাভাইরাস কোনো দেশ চেনে না, কোনো সীমানা চেনে না, জানে না আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তার কোনো মুভমেন্ট পাসও লাগে না। তাই বৈশাখী আনন্দে মানুষকে ঘরবন্দি করে করোনাভাইরাসের গ্রাম দর্শন নতুন শঙ্কা তৈরি করছে। একদিকে বাংলার রূপ, রস, গন্ধ, আস্বাদনে ব্যস্ত করোনাভাইরাস আর অপর দিকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে মানুষ একটু বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টায় হাঁপিয়ে উঠছে। একদিকে চোখের সামনে শ্বাস বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে, আর অন্যদিকে করোনা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে শহর থেকে গ্রামে। গ্রাম থেকে গহীন গ্রামে।

Comments

The Daily Star  | English

BTRC directs telcos to provide 1GB free internet on July 18

The internet regulator has directed all mobile phone operators to offer 1GB of free internet to users on July 18, marking “Free Internet Day” as part of a government initiative to commemorate the July Uprising.

54m ago