চেন্নাইর মাঠে এবার নাটকীয় রঙ বদলে হার সানরাইজার্সের
শেষ ২৪ বলে দরকার ছিল ৩৫ রান, হাতে ৮ উইকেট। এমনিতে টি-টোয়েন্টিতে সহজ সমীকরণ। কিন্তু মন্থর আর অসমান বাউন্সের উইকেটে কাজটা যে কত কঠিন ফের দেখা গেল। আগের দিন চেন্নাইর মাঠে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে রান তাড়ায় যে অবস্থায় হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে এবার সেই একই মাঠে সমান অভিজ্ঞতা হলো সানরাইজার্স হায়দরাবাদের।
বুধবার আইপিএলে জেতার মতো অবস্থা থেকে আচমকা পা হড়কে ৬ রানে হেরেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সানরাজার্সকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে এটি বেঙ্গালুরুর টানা দ্বিতীয় জয়।
কঠিন উইকেটে আগে ব্যাট করে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ফিফটিতে ১৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়েছিল বেঙ্গালুরু। অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের ফিফটি আর মানিষ পান্ডের ৩৮ রানের পর আচমকা ধসে সানরাইজার্স থেমেছে ১৪৩ রানে।
শেষ ৪ ওভারে ৩৫ রানের সমীকরণের সময় বল হাতে পান বাঁহাতি স্পিনার শাহবাজ আহমেদ। ওই ওভারেই মূলত ঘুরে যায় ম্যাচের চাকা। প্রথম বলেই শাহবাজকে স্লগ সুইপ মারতে গিয়ে আকাশে উঠিয়ে দেন জনি বেয়ারস্টো। ওয়ার্নার আউট হওয়ার ক্রিজে এসে বেয়ারস্টো ফেরেন ১২ রান করে। বড় সর্বনাশ হয়ে যায় ঠিক পরের বলেই। বেয়ারস্টোর আউটের সময় ক্রসিং করে স্ট্রাইক নেওয়া মানিষও চালাতে যান শাহবাজকে। বল ব্যাটের কানায় লেগে যায় ক্যাচ যায় শর্ট থার্ড ম্যানে। হ্যাটট্রিক না হলেও ওভারের শেষ বলে ফের শাহবাজের ভেল্কি। বিস্ফোরক আব্দুল সামাদের জন্য উইকেটটা আদর্শ ছিল না। মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে তিনিও সোজা ক্যাচ উঠিয়ে দেন বোলারের হাতে।
৩ উইকেট হারানোর ওভারে মাত্র ১ রান নিতে পারে সানরাইজার্স। এরপর খেলা ঘুরাতে পারতেন বিজয় শঙ্কর আর জেসন হোল্ডার। তারা ৩ আর ৪ রান করে বিদায় নিলে আশা শেষ হয়ে যায় তাদের। তবে দারুণ এক ক্যামিওতে ফের নিভু নিভু আশা জাগিয়েছিলেন রশিদ খান। শেষ ওভারে ১৬ রানের সমীকরণে নিয়ে এসেছিলেন ম্যাচ।
হার্শার প্যাটেল প্রথম তিন বলে নো বলসহ ৯ রান দিয়ে দিলে ফের নাটকীয়তা তৈরি হয়েছিল। যদিও রশিদ পরে আর মেলাতে পারেননি তা।
চেন্নাইর উইকেটের ধরণ সেই আগের দিনের মতই। বল ব্যাটে আসছিল ধীরে, মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছিল অসমান বাউন্স। দ্রুত রান করা ছিল মুশকিল।
এই উইকেটে ১৫০ রান বেশ ভালো লক্ষ্যই। ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা শুরুতে ফিরলেও দ্বিতীয় উইকেটে ওয়ার্নার-মানিষ মিলে দলকে রেখেছিলেন অনায়াসে জেতার পথে। দুজনের ব্যাটিং ইঙ্গিত দিচ্ছিল একটি একপেশে ম্যাচেরই।
কিন্তু ১৪তম ওভারে ৮৩ রানের এই জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বদলে যায় ম্যাচের ছবি। থিতু ব্যাটসম্যানদের এই উইকেটে রান বের করা সহজ, কিন্তু নতুন কেউ এলেই বাড়ছিল ডট বলের চাপ। বেয়ারস্টো সেই চাপেই হয়েছেন কাবু। বলা যায়, ওয়ার্নার ৩৭ বলে ৫৪ করে ফেরার পরই আসলে ম্যাচের মোড় ভিন্ন দিকে চলে যাওয়ার পথ খুলে যায়।
দলকে ঠিকপথে রাখতে পারতেন থিতু থাকা আরেক ব্যাটসম্যান মানিষ। তিনিও বাজে শটে ফেরায় বাকিদের পক্ষে ক্রমশ কাজ হয়ে যায় ভীষণ কঠিন। রানরেটের চাপও বাড়তে থাকে দ্রুত।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দেবদূত পাডিকালকে দ্রুত হারায় বেঙ্গালুরু। তবে দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক বিরাট কোহলি আর শাহবাজ আহমেদ সরান চাপ। আনেন ২৮ রানের জুটি। ১৪ করে শাহবাজ ফিরে যাওয়ার পর ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি পান বেঙ্গালুরু অধিনায়ক। এতেই তাদের জুতসই ভিত গড়ার পথ হয়ে যায়।
২৯ বলে ৩৩ করে কোহলি ফেরার পর বেঙ্গালুরুর বাকি পথের নায়ক ম্যাক্সওয়েল। ইনিংসের একদম শেষ বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করেছেন ৪১ বলে ৫৯। ৩ ছক্কা আর ৫ চারের এই ইনিংসটাই মূলত বেঙ্গালুরুর জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: ২০ ওভারে ১৪৯/৮ (কোহলি ৩৩, পাডিকাল ১১, শাহবাজ ১৪, ম্যাক্সওয়েল ৫৯, ডি ভিলিয়ার্স ১, সুন্দর ৮, ক্রিস্টিয়ান ১, জেমিসন ১২, হার্শাল ০; ভুবনেশ্বর ১/৩০, হোল্ডার ৩/৩০, নাদীম ১/৩৬, নটরাজন ১/৩২, রশিদ ২/১৮)
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: ২০ ওভারে ১৪৩/৯ (ঋদ্ধিমান ১, ওয়ার্নার ৫৪, মানিষ ৩৮, বেয়ারস্টো ১২, সামাদ ০, বিজয় ৩, হোল্ডার ৪, রশিদ ১৮, ভুবনেশ্বর ২*, শাহবাজ ০, নটরাজন ০* ; সিরাজ ২/২৫, জেমিসন ১/৩০, সুন্দর ০/১৪ , চাহাল ০/২৯, প্যাটেল ২/২৫, ক্রিস্টিয়ান ০/৭, শাহবাজ ৩/৭)
ফল: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
Comments