কোয়ার্টারে বাদ পড়ার বৃত্ত ভেঙে সেমিফাইনালে ম্যান সিটি
ম্যাচের শুরুর দিকে এগিয়ে গেল বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। আরও একবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কা জাগল ম্যানচেস্টার সিটির। তবে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা উপহার দিলো উজ্জীবিত পারফরম্যান্স। ঘুরে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত জয়ে তারা পা রাখল ইউরোপের সেরা ক্লাব আসরের সেমিফাইনালে।
বুধবার রাতে শেষ আটের ফিরতি লেগে ডর্টমুন্ডকে তাদের মাঠ সিনিয়াল ইদুনা পার্কে ২-১ গোলে হারিয়েছে ম্যান সিটি। আগের লেগে নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে একই ব্যবধানে জিতেছিল তারা। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলের অগ্রগামিতায় ইংলিশ ক্লাবটি পেয়েছে সেমির টিকিট।
প্রথমার্ধে জুড বেলিংহামের গোলে এগিয়ে যায় জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ড। বিরতির পর পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন ১-১ করেন রিয়াদ মাহরেজ। পরে সিটির হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন ফিল ফোডেন।
দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে উঠেছে ম্যান সিটি। ২০১৫-১৬ মৌসুমে তৎকালীন কোচ মানুয়েল পেলিগ্রিনির অধীনে তারা এই স্বাদ প্রথমবার পেয়েছিল। গত তিন আসরে দলটি বিদায় নিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। এবার সেই বৃত্ত ভেঙে নিজের কোচিংয়ে প্রথমবার সিটিকে সেমিতে নিয়েছেন তারকা স্প্যানিশ কোচ গার্দিওলা। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ ফরাসি লিগ ওয়ানের শিরোপাধারী পিএসজি।
সপ্তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগটি পায় ডর্টমুন্ড। মাহমুদ দাহুদের ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট সহজেই লুফে নেন ম্যান সিটির গোলরক্ষক এদারসন। ১৫তম মিনিটে অবশ্য তিনি পারেননি গোলপোস্ট অক্ষত রাখতে। পাল্টা আক্রমণে বেলিংহামের গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো বল নিয়ে সিটির ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এর্লিং হালান্ড। শারীরিক শক্তিতে বল নিয়ন্ত্রণে রেখে তিনি দেখান পায়ের কারিকুরি। কয়েক পা ঘুরে এরপর বল পেয়ে যান বেলিংহাম। ১৭ বছর বয়সী এই ইংলিশ মিডফিল্ডার ডান পায়ের শটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজের প্রথম গোলটি করেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত ছোঁয়ালেও বল আটকাতে পারেননি এদারসন।
চার মিনিট পর বাড়তে পারত ব্যবধান। কর্নার থেকে মানুয়েল আকাঞ্জির সরাসরি হেড গ্লাভসবন্দি করেন ব্রাজিলিয়ান এদারসন। বল দখলে আধিপত্য করা সিটি এরপর ধীরে ধীরে আক্রমণেও প্রাধান্য দেখাতে শুরু করে। ২৬তম মিনিটে সমতায় প্রায় ফিরেই গিয়েছিল তারা। কেভিন ডি ব্রুইনের শটে পরাস্তও হয়েছিলেন ডর্টমুন্ডের গোলরক্ষক মারভিন হিটজ। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বল বাধা পায় ক্রসবারে।
৩২তম মিনিটে ফোডেন একাগ্রতার পরিচয় নিয়ে বল মাঠে রেখে ফ্লিক করেন ডি-বক্সে। মাহরেজের শট জালের দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পা বাড়িয়ে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দেন বেলিংহাম। ছয় মিনিট পর ওলেক্সান্দার জিনচেঙ্কোর হেড লাফিয়ে হাতে জমান হিটজ।
প্রথমার্ধে সবমিলিয়ে ছয়টি শট নেয় ডর্টমুন্ড। এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল তিনটি। বিপরীতে, সিটির নয়টি শটের মাত্র একটি থাকে লক্ষ্যে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই একই ধাঁচে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থেকে সিটিজেনরা। ৫০তম মিনিটে জিনচেঙ্কোর শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন হিটজ। পাঁচ মিনিট পর গোল পেয়ে যায় সফরকারীরা। এমরে চানের হাতে বল লাগার বল ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট-কিকে বাম পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন আলজেরিয়ান ফরোয়ার্ড মাহরেজ।
চার মিনিট পর ফের ক্রসবার হতাশ করে সিটিকে। জন স্টোন্সের হেড পরে হিটজের হাতে লাগলেও কর্নার পায়নি তারা। ৬৫তম মিনিটে মাহরেজের পাসে ইলকাই গুন্দোগানের শট লক্ষ্যে থাকেনি।
৬৯তম মিনিটে সিটির রক্ষণে ভীতি ছড়ায় ডর্টমুন্ড। মার্কো রয়িসের ফ্রি-কিকে ম্যাটস হামেলসের হেড ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে চলে যায়। ৭৪তম মিনিটে একক নৈপুণ্যে বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ডি ব্রুইন ঢুকে পড়েন ডি-বক্সে। তার মাটি কামড়ানো শট ঝাঁপিয়ে সেভ করেন হিটজ।
পরের মিনিটে বার্নার্দো সিলভার পাসে সিটিকে লিড পাইয়ে দেন ফোডেন। তরুণ এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড ডি-বক্সের বাইরে থেকে কাছের পোস্টে বল পাঠান। তার বুলেট গতির শট ডর্টমুন্ডের গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে পোস্টে লেগে গোললাইন অতিক্রম করে।
এরপর ম্যাচে আর কোনো গোল হয়নি। ৮০তম মিনিটে উড়িয়ে মেরে সুযোগ হাতছাড়া করেন নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার হালান্ড। দুই মিনিট পর ইউক্রেনের ডিফেন্ডার জিনচেঙ্কোও পারেননি ব্যবধান বাড়াতে।
Comments