পাবনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের দুর্ভোগ

এক বছরেও চালু হয়নি আইসিইউ, নেই পিসিআর মেশিন-সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম
Pabna_General_Hospital.jpg
পাবনা জেনারেল হাসপাতাল | ছবি: স্টার

কয়েকদিন থেকে অসুস্থ বোধ করছিলেন মো. আব্দুস সালাম। গতকাল শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, এই রোগীর চিকিৎসা এখানে সম্ভব না।

তার ছেলে ফজলে রাব্বী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ধরনের রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। অবস্থার আরও অবনতি হলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। আপনারা অন্য কোথাও নিয়ে যান।’

আব্দুস সালাম বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন। গত এক বছরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রত্যাশিত উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফজলে রাব্বী।

কেবল ফজলে রাব্বী নন, করোনার নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে ভোগান্তি, শয্যা সংকট নিয়ে ক্ষুব্ধ করোনায় আক্রান্ত রোগীদের স্বজনরা।

অসন্তোষ রয়েছে চিকিৎসকদের ভেতরেও। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এর কিছু দিন পরে ১৬ এপ্রিল পাবনার চাটমোহর উপজেলায় প্রথম রোগী শনাক্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ১২ জন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কে এম আবু জাফর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাবনায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ১০ বার চিঠি পাঠানো হয়েছে। বারবার চেষ্টা করেও পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ল্যাব সুবিধা না থাকায় পাবনার রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে পাশের জেলা সিরাজগঞ্জ থেকে পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’

পাবনা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, পাবনায় এ পর্যন্ত ৪৯ হাজার ১৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করে দুই হাজার ৬৫ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জন মারা গেছেন। আক্রান্তের হার গত কয়েক সপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত এক সপ্তাহে প্রায় ১৯৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১০০ শয্যা নিয়ে করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছিল। রোগীর সংখ্যা কমে আসায় পরবর্তীতে শয্যা সংখ্যা কমিয়ে ৫০ করা হয়।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আইয়ুব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ বেশি থাকে। গত বছর করোনা রোগীর চাপ কম থাকায় করোনা ইউনিটের কিছু অংশ অন্য রোগীদের জন্য দেওয়া হয়েছিল। তবে সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে, প্রয়োজন হলেই করোনা রোগীদের জন্য আবারও শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে।’

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সালেহ মোহাম্মদ আলী বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত এক বছরে পাবনায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। রোগী শনাক্তকরণের জন্য পাবনায় কোনো পিসিআর ল্যাব নেই। এখনও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে, উপসর্গ দেখে রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হয়।’

সূত্র জানায়, হাসপাতালে এখনো সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম নেই। চার শয্যার আইসিইউ ইউনিট এখনো চালু হয়নি। যে কারণে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।

হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রুহুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম না থাকায় কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আইসিইউ ইউনিটও চালু করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া, আইসিইউ চালু করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আইয়ুব হোসেন আরও বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ দেওয়ার জন্য ঠিকাদার কাজ শুরু করেছিল। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় কাজ থেমে যায়। নতুন করে তাদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে আগামী দুই মাসের মধ্যে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ পাওয়া যাবে। তখন আইসিইউ চালু করা সম্ভব হবে। আইসিইউ চালু করার জন্য ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

BGMEA wants 3-month window from India to clear pending shipments

The association urges the interim government to send a letter to India seeking the opportunity

5h ago