মেসির জোড়া গোল, বিলবাওকে উড়িয়ে শিরোপা খরা ঘুচল বার্সার
গোল পেতে পেতেও পাচ্ছিল না বার্সেলোনা। একের পর এক সুযোগ পর্যবসিত হচ্ছিল ব্যর্থতায়। কিন্তু বিরতির পর বার্সেলোনাকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি অ্যাথলেতিক বিলবাও। মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে চার গোল আদায় করে নিল রোনাল্ড কোমানের দল। খরা ঘুচিয়ে কোপা দেল রেতে চ্যাম্পিয়ন হলো লিওনেল মেসিবাহিনী।
শনিবার রাতে সেভিয়াতে প্রতিযোগিতার একপেশে ফাইনালে ৪-০ গোলের বিশাল জয় পেয়েছে বার্সা। জোড়া গোল আসে আরেকটি অনবদ্য পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া মেসির পা থেকে। গোল উৎসবের শুরুটা করেন আঁতোয়ান গ্রিজমান। ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং গোল করার পাশাপাশি করেন জোড়া অ্যাসিস্ট। দুটি গোলের যোগান দেন জর্দি আলবাও।
কোপা দেল রেতে বার্সার এটি রেকর্ড ৩১তম শিরোপা। প্রায় দুই বছর পর কোনো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ নিল তারা। সবশেষ ২০১৮-১৯ মৌসুমের স্প্যানিশ লা লিগার মুকুট উঠেছিল তাদের মাথায়।
পাশাপাশি মধুর একটি প্রতিশোধও নেওয়া হয়ে গেল মেসি ও বার্সেলোনার। গত জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে বিলবাওয়ের কাছে ৩-২ গোলে হেরে শিরোপা খুইয়েছিল তারা। ওই ম্যাচে মেসি তার বার্সা ক্যারিয়ারের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র লাল কার্ডটি দেখেন।
শুরু থেকে বিলবাওকে চেপে ধরে বার্সেলোনা। প্রথমার্ধের ৮৪ শতাংশ সময়ে বল পায়ে রাখে তারা। বিরতির আগে গোলমুখে তারা শট নেয় সাতটি। বিপরীতে, বিলবাও নিতে পারে কেবল একটি শট।
পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বার্সা। অধিনায়ক মেসি ডি-বক্সে খুঁজে নিয়েছিলেন ডি ইয়ংকে। নেদারল্যান্ডসের এই মিডফিল্ডারের গড়ানো শট দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাধা পায় দূরের পোস্টে। সপ্তম মিনিটে সার্জিনো দেস্তের প্রচেষ্টা লক্ষ্যে থাকেনি।
চার মিনিট পর আবারও সুযোগ আসে বার্সেলোনার সামনে। ডি-বক্সে গ্রিজমানের কাছ থেকে ফিরতি বল পেয়ে শট নেন আর্জেন্টাইন তারকা মেসি। তবে তা আটকে যায় প্রতিপক্ষের রক্ষণে। পরের মিনিটে বিলবাও ওঠে আক্রমণে। সতীর্থের ফ্রি-কিকে ইনিগো মার্তিনেজ পা ছোঁয়ালেও বার্সার জন্য তা বিপদের কারণ হয়নি।
২১তম মিনিটে মেসির বাঁকানো শট সহজেই লুফে নেন বিলবাও গোলরক্ষক উনাই সিমোনকে। পাঁচ মিনিট পর তার আরেকটি শট ব্লকড হয়। ৪০তম মিনিটে রেকর্ড ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ফরোয়ার্ড বাজে ফ্রি-কিকে সুযোগ হাতছাড়া করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম আট মিনিটের মধ্যে তিন দফা বেঁচে যায় বিলবাও। এতে সিমোনের যেমন কৃতিত্ব আছে, তেমনি বার্সা খেলোয়াড়দের দায়ও কম নয়। ৪৮তম মিনিটে ছয় গজের বক্সের ভেতরে ফাঁকায় বল পেয়েও জাল খুঁজে নিতে ব্যর্থ হন গ্রিজমান।
৫৩তম মিনিটে সার্জিও বুসকেতস অবিশ্বাস্যভাবে লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। বিলবাওয়ের রক্ষণভাগ বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে গোলপোস্টের একেবারে সামনে পেয়ে যান তিনি। কিন্তু সিমোন আবির্ভূত হন চীনের প্রাচীর হয়ে। মাঝে পেদ্রির দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে ফেরান তিনি।
নান্দনিক আক্রমণে ৬০তম মিনিটে দেখা মেলে কাঙ্ক্ষিত গোলের। মেসি ডান প্রান্তে খুঁজে নেন ডি ইয়ংকে। তিনি ক্রস করেন বিপজ্জনক জায়গায়। এবারে ভুল না করে আলতো টোকায় নিশানা ভেদ করেন বিশ্বকাপ জয়ী ফরাসি ফরোয়ার্ড গ্রিজমান।
উজ্জীবিত হয়ে ওঠা বার্সা তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করে। বাম প্রান্ত থেকে আলবার নিখুঁত ক্রসে হেড করে সিমোনকে পরাস্ত করেন ডি ইয়ং। ৬৮তম মিনিটে ডি ইয়ংয়ের পাসে গোল পেয়ে যান মেসি। বাঁ পায়ের মাপা শটে দূরের পোস্টে বল পাঠান তিনি।
চার মিনিট পর স্কোরলাইন ৪-০ করেন ৩৪ বছর ছুঁইছুঁই মেসি। আলবা ও তার জুটিতে আগেও অনেক ট্রেডমার্ক গোলের দেখা মিলেছে। এটি যেন উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বাম প্রান্ত থেকে ডি-বক্সের ভেতরের প্রান্তে বল ফেলেন আলবা। এরপর বাঁ পায়ের শটে সিমোনকে ঘোল খাওয়ান মেসি।
দ্বিতীয়ার্ধে বিলবাও বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও কাজে আসেনি। উল্টো তাদের হারের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। ৮৬তম মিনিটে গ্রিজমান জাল কাঁপিয়েছিলেন। কিন্তু গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে।
Comments