কুষ্টিয়া-হরিপুর সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধে ধস, মেরামত হয়নি ৭ মাসেও
গত বর্ষার শেষ দিকে গড়াই নদীর ওপর ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধে বড় ধরনের ধসের ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে ৭ মাস। ধসে যাওয়া বাঁধটি মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেই। এ অবস্থায় সামনের বর্ষায় ভাঙা বাঁধে আবার ভাঙনের ফলে মূল সেতুটিই হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ বাঁধের ধসের ৯০ মিটারের মধ্যেই মূল সেতু।
কুষ্টিয়া এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে ধস দেখা দেয় সেতুটির ১৫০ মিটার উজান ও ১০০ মিটার ভাটির প্রতিরক্ষা বাঁধের হরিপুর অংশে। এলজিইডি এই ধসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল অদূরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের ড্রেজার কাজ করার ফলে পানির নিচে ঘূর্ণি (স্কাউরিং) সৃষ্টি হওয়াকে। ড্রেজারের কাজ সেখান থকে সরিয়ে নিলেও সৃষ্ট ধস থামে না এবং বর্ষা শেষে দেখা যায় বাঁধের প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি ব্লক চলে গেছে নদী গর্ভে।
ঘটনার পরই ধস এলাকা পরিদর্শন করেন এলজিইডির ঢাকা ও কুষ্টিয়া অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা অভিমত দেন বর্ষা শেষে ব্লকগুলো পুনস্থাপন করলে সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু নির্মাণ উপযোগী সময় দ্রুত পেরিয়ে গেলেও ব্লক পুনস্থাপনে কোনো উদ্যোগ নেই। কর্মকর্তারা বলছেন সার্ভে শেষ হয়েছে। প্রাক্কলনও তৈরি হয়েছে। চিঠিপত্র চালাচালিও সম্পন্ন হয়েছে। তবে কবে থেকে কাজ শুরু হতে পারে এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা কিছু বলতে পারছেন না।
সেতু নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবির প্ররিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে সেতু স্থাপনে উদ্যোগ নেয়া হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ৬০৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৬ দশমিক ১ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মিত হয় ২০১৭ সালে। এলজিইডি সেতুর রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে আছে।
দীর্ঘ সময় ধরে সেতু নির্মাণ কাজ চললেও সেতু প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে তেমন সময় দেয়া হয়নি বলছেন নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা। অনেক সময় নিয়ে বাঁধের নদী শাসন প্রয়োজন ছিল বলছেন তারা।
গড়াই নদীতে এই সেতু নির্মাণ আন্দোলনে ছিলেন প্রকৌশলী এম এ হাফিজ অভি। পেশায় প্রকৌশলী অভি জানান বাঁধ নির্মাণের সময় ব্লকগুলো সঠিকভাবে প্রতিস্থাপন হয়নি। ধসে যাওয়া ব্লকের নিচে কোনো জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়নি। শুধু বালুর ওপর সিনথেটিক অ্যাপ্রোন দিয়ে ব্লক বসানো হয়েছিল। এ কারণে বাঁধের যে জায়গাটিতে প্রবল স্রোতের আঘাত সৃস্টি হয়েছে সেখানেই ব্লক উপড়ে উঠে গেছে। এত অল্প সময়ে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না বলে মনে করেন তিনি।
এলজিইডির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও এই অভিযোগের সাথে দ্বিমত করেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহকারী প্রকৌশলী জানান ব্লকগুলো একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। একজায়গায় ধসের কারণে এগুলোর বন্ধন এখন শিথিল হয়ে পড়েছে। দ্রুত এগুলো পুনস্থাপিত না হলে সামনের যে কোনো ভারী বর্ষণেই আবার ধস সৃষ্টি হতে পারে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন এ অবস্থাতে বর্ষা এলে বিপর্যয় রোধ করা মুশকিল হবে।
এদিকে বর্ষা আসছে। তাই আশঙ্কা বাড়ছে। কারণ এখন কাজ শুরু করলেও কাজ শেষ করা কঠিন হবে। জুনের আগেই বর্ষা দেখা দেবে।
প্রতিরক্ষা বাঁধের এই ধস উজানে হলেও সেতুর দিকে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন অনেকে।
তবে এলজিইডির কুষ্টিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মন্ডল ব্লকের একটি অংশে ধসের কারনে মূল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন সেতু এক নিয়মে তৈরি আর প্রতিরক্ষা বাঁধ আরেক নিয়মে করা হয়ে থাকে। তিনি জানান হয়তো বাঁধের মাটি শাসন সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। তাই এই ধসের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি জানান তারা কাজ গুছিয়ে এনেছেন। ঢাকা অফিস থেকে ডিজাইন সেলের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মেরামত প্রকল্পের প্রাক্কলন (ইস্টিমেট) ঢাকাতে পাঠানো হয়েছে। সেটি এখন হেড অফিসের ডিজাইন সেলে রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন হলেই বাজেট তৈরি হবে।
বর্ষার আগেই কাজ শেষ করতে হবে বলে তিনি জানান।
Comments