মহামারির মধ্যেও বরাদ্দের মাত্র ২১ শতাংশ ব্যয় করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ

করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় দেওয়া বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মাত্র ২১ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

একই সময়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে গড়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৪১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা মাত্র দুই হাজার ৫১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। যেটা সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। এ ছাড়া, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও খুবই অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এডিপির প্রকল্প সহায়তার আওতায় ছয় হাজার ৪৪৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পেয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এর মধ্য থেকে তারা মাত্র ৬৬৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছে, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ।

সরকারের ৪৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দেওয়া প্রকল্প সহায়তার মধ্যে এখানেও সবচেয়ে কম অর্থ ব্যয় করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

এ ছাড়া, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব ফান্ড থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে পাঁচ হাজার ৫৩১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়। যেখানে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৮৫০ কেটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এখানেও বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

দেশের করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য খাতের চরম সংকটের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অদক্ষতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় যে বিভাগটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা, সেটিই সবচেয়ে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হিসেবে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন করেছে, এটা স্বাস্থ্যখাতের জন্য খুবই লজ্জার বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘শতবছর পর স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মধ্যে যে মন্ত্রণালয়কে সম্মুখ সারিতে থাকার কথা, অথচ তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে সামর্থ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রুপক্ষ যখন ভয়ংকর আক্রমণের পরিকল্পনা করছে, সেনাপতি তখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন।’

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. তৌফিক জোয়ারদার বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাদের অদক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঠিক জায়গায় সঠিক লোকের নিয়োগ না হওয়ায় ধারাবাহিকভাবে তারা অদক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে খুব অল্প কিছু নীতি-নির্ধারকের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান আছে।’

‘অন্যদিকে, আমাদের নিয়োগ ও পদায়ন ব্যবস্থাও খুবই ত্রুটিপূর্ণ। বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমেই শুধু চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, হেলথ ইকোনমিস্টস, বায়োস্ট্যাটিসিয়ান, এপিডেমিওলোজিস্ট ও হেলথ কমিউনিকেশন এক্সপার্ট ছাড়া একটি দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সম্ভব না’, বলেন তৌফিক জোয়ারদার।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘ধীরগতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ এই নয় যে, সেখানে কোনো কাজ হচ্ছে না। অনেক সময় কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেটা পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন শেষে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হয়। এসব কারণে প্রকল্প ব্যয় দেখাতে দেরি হতে পারে।’

‘দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিয়েছি, একজন প্রকল্প পরিচালককে একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব না দিতে এবং ঘনঘন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন না করতে। এ ছাড়া, যদি সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমন্বয় করে কাজ করে, তাহলে আমরা আমাদের দক্ষতা বাড়াতে সফল হব’, যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

US bomber jets leave UK base; Iran launches 'Fattah-1 missiles' towards Israel

Israel and Iran attacked each other for a sixth straight day on Wednesday, and Israeli air power reigns over Iran, but needs US for deeper impact

9h ago