লকডাউন: ঢাকার সড়কে যান ও মানুষ বেড়েছে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে রাশ টানতে দেওয়া ‘লকডাউনে’ ১৩ দফা বিধি-নিষেধ থাকলেও ঢাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল বেড়েছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক বেশি।
Lockdown_Road_Transport_21A.jpg
ঢাকার রাস্তায় আজ বুধবার সকালে বাস ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। ছবি: মুনতাকিম সাদ/স্টার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে রাশ টানতে দেওয়া ‘লকডাউনে’ ১৩ দফা বিধি-নিষেধ থাকলেও ঢাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল বেড়েছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক বেশি।

আজ বুধবার রাজধানীর শ্যামলী, আসাদ গেট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ধানমন্ডি এবং ফার্মগেট এলাকা ঘুরে দ্য ডেইলি স্টার’র সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কেবলমাত্র বাস ছাড়া রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যবেক্ষণও ছিল শিথিল। কিছু কিছু চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের অলস বসে থাকতে দেখা গেছে।

শ্যামলীতে একাধিক হাসপাতাল থাকায় অনেকেই করোনার পরীক্ষা করাতে এবং টিকা নিতে এসেছিলেন। তবে এসব এলাকার কাঁচাবাজারের চিত্রও ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। রাস্তায় পাশে অনেক দোকানের শাটার অর্ধেকটা খুলে চলছে বেচা-কেনা।

আসাদগেট চেকপোস্টে পুলিশের এক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সকালের দিকে অফিস থাকায় রাস্তায় যান চলাচল কিছুটা বাড়তি থাকে।’

মুভমেন্ট পাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সবাইকে চেক করা সম্ভব না হলেও, যাদের প্রয়োজন মনে হচ্ছে তাদের চেক করা হচ্ছে।’

গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। চলতি মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা শতকের ঘর পার হলে চলমান লকডাউনের মেয়াদ তৃতীয় দফায় আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিধি-নিষেধ

লকডাউনে সার্বিক কার্যক্রম ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গত ১২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন দেয় সরকার। এই সময়ে কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না, তা উল্লেখ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনেও সেই প্রজ্ঞাপনে দেওয়া বিধি-নিষেধগুলোই কার্যকর থাকবে। বিধি-নিষেধগুলো হলো—

১. সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বা আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে এবং সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে, বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।

৩. সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে, পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।

৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে, শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

৫. আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, যেমন: কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকাদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্র) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে, টিকা-কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা নেওয়ার জন্যে যাতায়াত করা যাবে।

৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রি বা সরবরাহ করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে।

৮. কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা ও বিক্রি করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষিশ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে।

১০. সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ নেবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। 

১১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।

১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবি নামাজের জমায়েত বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

১৩. উপযুক্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা দিতে পারবে।

আরও পড়ুন

২২-২৮ এপ্রিল ‘কঠোর’ লকডাউন

Comments

The Daily Star  | English

Deeper crisis feared as 219 factories shut

With 219 garment factories shut amid worker unrest along the industrial belts yesterday, Bangladesh’s apparel sector is feared to get into a deeper crisis if production does not resume on Saturday after the weekend.  

13m ago