তারা ঘুরে বেড়ান গরুর পাল নিয়ে

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার হাজারবিঘী গ্রামে ৫৫টি গরু নিয়ে চরাতে বের হয়েছেন মোহাম্মদ মোমিন। প্রাকৃতিকভাবে গরু মোটা-তাজা করে ভাদ্র মাসে অন্তত ১৫টি গরু বিক্রি করা তার লক্ষ্য। মোমিন বলেন, সাধারণত ভাদ্র মাসে গরুগুলোর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়।
Nababganj_Cow_23Apr21.jpg
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাকৃতিকভাবে গরু পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। ছবি: স্টার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার হাজারবিঘী গ্রামে ৫৫টি গরু নিয়ে চরাতে বের হয়েছেন মোহাম্মদ মোমিন। প্রাকৃতিকভাবে গরু মোটা-তাজা করে ভাদ্র মাসে অন্তত ১৫টি গরু বিক্রি করা তার লক্ষ্য। মোমিন বলেন, সাধারণত ভাদ্র মাসে গরুগুলোর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়।

বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই আদি পেশা এখনো ধরে রেখেছেন অনেকেই। লাভজনক হওয়ায় নতুন করেও অনেকে যুক্ত হয়েছেন। মোমিন আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে গরুর পাল নিয়ে বের হই। এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যাই। যেখানে গরুর খাবার পাওয়া যায়, সেখানেই যাই। কখনো কখনো রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর উপজেলাতেও যাই আমরা। এক জায়গায় ১৫ থেকে ২০ দিন অবস্থান করি। তারপর পালা করে একেক জন বাড়ি আসি। একসঙ্গে কয়েক জনের গরু এভাবে পালন করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকার দুধ বিক্রি হয়। এ ছাড়া, প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০টি গরু বিক্রি করে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা আয় হয়।’

‘আমরা দেশি জাতের গরু পালন করি। এগুলো অত্যন্ত সহনশীল, সব পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অসুখ হয় কম। যখন যেখানে থাকি সেখানে গোয়ালা ঠিক করা হয়, তারা এসে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়’, বলেন মোহাম্মদ মোমিন।

একই উপজেলার উমরপুর গ্রামের রেজাউল করিম গত প্রায় ১০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। বর্তমানে তার ৩৫টি গরু রয়েছে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতি মাসে দুধ বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা এবং গরু বিক্রি করে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়।’

কালুপুর গ্রামের মোহাম্মদ জেন্টু বর্তমানে ২২টি গরুর মালিক। তিনি বলেন, ‘গরু নিয়ে আমরা সব উপজেলায় যাই। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলাতেও যাই। অনেকে বেতন দিয়ে রাখাল রেখে দেয়। সাধারণত এক জায়গায় আমরা ১০ থেকে ১৫ দিন থাকি। রাতে কোনো একটা গাছের নিচে পলিথিন দিয়ে তাঁবু টানিয়ে পালা করে ঘুমাই। গরুগুলো এক জায়গায় থাকে। দুধ বিক্রির টাকায় আমাদের দৈনন্দিন খরচ চলে। বাড়ির চাহিদাও পূরণ হয়। আর গরু বিক্রির টাকা জমানো চেষ্টা করি। সাংসারিক কাজেও ব্যয় হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাকার জন্য কখনো ভাবতে হয় না। চিকিৎসার খরচ, বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে টাকার প্রয়োজন হলে একটা গরু বিক্রি করে দিই। ভাদ্র মাসে গরুর দাম বেশি থাকে। অনেক সময় পালে গরুর সংখ্যা বেড়ে গেলেও বিক্রি করে দেওয়া হয়। বর্ষায় টানা বৃষ্টি বা বন্যা হলে একটু সমস্যায় পড়তে হয়। বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়, গরুর খাবার পাওয়া যায় না। তখন কিনে খাওয়াতে হয়।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার হোসেনডাইং গ্রামের আবুল হোসেন শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। একটি গাভি থেকে এখন গরুর সংখ্যা বেড়ে ২৫টি হয়েছে। দূর-দূরান্তে না গেলেও বাড়ির কাছাকাছি প্রাকৃতিকভাবে তিনি গরু পালন করছেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অন্যের অধীনে কাজ করার চেয়ে নিজে কিছু করছি এটাই ভালো। আয়ও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই জেলায় চারণভূমি থাকায় গরুর সংখ্যা অনেক। যেহেতু খরচ খুব কম হয়, তাই দেশি গরু পালন করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার লাখ ৮২ হাজার ৫০২টি গরু আছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago