ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সিলগালা, ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকায় গ্যাস বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত তিন তলা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সিলগালা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে এই ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে পশ্চিম তল্লা জামাইবাজার এলাকার ওই ভবনটি পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ এ নির্দেশ দেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে ভবনের বাসিন্দাদের আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার পর ভবনটিকে সিলগালা করে দেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে, প্রকৃত কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোসাম্মৎ রহিমা আক্তারকে আহবায়ক ও ইউএনও আরিফা জহুরাকে সদস্য সচিব এবং ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, তিতাসসহ সবার সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, তাই ভবনটি সিলগালা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।’
ইউএনও আরিফা জহুরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাড়িটির গ্যাস লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বাসিন্দারা তাদের আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, আল আমিন নামে এক ব্যক্তি ভবনটি আট বছর আগে নির্মাণ করেন। তবে ভবনটির পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। এরমধ্যেই গত তিন বছর ধরে ১২টি ফ্ল্যাটে ১৩টি পরিবার বসবাস করছে। যার মধ্যে বিস্ফোরিত ফ্ল্যাটে একসঙ্গে দুটি পরিবার থাকতেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের এক পাশের দেওয়াল ভেঙে নিচে পড়ে আছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জানালার ভাঙা কাঁচের টুকরা ও অ্যালুমিনিয়াম। ভবনটির নিচ তলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ১২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৮টির দরজা ও জানালা ভেঙে গেছে। এলোমেলোভাবে পড়ে আছে আসবাবপত্র। মেঝেতে আগুনে পোড়া কাপড়ের অংশবিশেষ পড়ে আছে। দেওয়ালে লেগে আছে শরীরের পোড়া চামড়ার অংশ। ভবনটির বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।
ভবনের ভাড়াটিয়া আরমান হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সেহেরি করে আর ঘুম আসেনি। তাই মোবাইলে মায়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ছয়টার দিকে বিকট শব্দে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠল। জানালার কাঁচ বৃষ্টির মতো নিচে পড়ছে। দৌড়ে বের হতে গিয়ে দেখি দরজার সামনে আগুন। পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া শরীরে আগুন নিয়ে চিৎকার করছে। পানি দিয়ে নিভিয়ে নিচে নামতেই দেখি গেটের সামনে উপর থেকে দেওয়ালের অংশ ভেঙে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর তাদের ভবনের পেছন দিক দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
এ বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবনের দুই পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন- হাবিবুর রহমান (৫০), লিমন (২০), সাথি (২০), মিম (২০), মাহিরা (৩ মাস), আলেয়া (৫০), সোনাহার মিয়া (৪০), শান্তি (৩২), সামিউল (২০) ও মনোয়ারা (২২)। একজনের নাম জানা যায়নি। এদের ছয় জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। পাঁচ জনকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ বাসায় গ্যাসের চুলা আছে। এতে লিকেজ হয় কিংবা রান্নার চুলা ঠিকমতো বন্ধ না করায় গ্যাস বের হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নার চুলা জ্বালাতে গেলে বিস্ফোরণ হয়।’
Comments