মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বাঁধা সেই সন্তান

ছয়দিন পর মাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে অসুস্থ মাকে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া ঝালকাঠির নলছিটির সেই জিয়াউল হাসান।
ছয় দিন চিকিৎসা শেষে মা সুস্থ হলে বিজয়ের চিহ্ন ‘ভি’ দেখিয়ে সেই মোটরসাইকেলে করে মাকে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন জিয়াউল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

ছয়দিন পর মাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে অসুস্থ মাকে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া ঝালকাঠির নলছিটির সেই জিয়াউল হাসান।

আজ শুক্রবার জিয়াউল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার কাছে এ বিজয় এক জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয়।’

এর আগে, গত ১৭ এপ্রিল পিঠের সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে করোনা আক্রান্ত মাকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান জিয়াউল হাসান। ওইদিন সন্ধ্যায় জিয়াউল হাসান ও তার মায়ের সেই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ নিয়ে গত ১৮ এপ্রিল ‘অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে বেঁধে মাকে নিয়ে হাসপাতালে’ শিরোনামে দ্য ডেইলি স্টারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

জিয়াউল হাসানের সেই চেষ্টা বৃথা যায়নি। তার মা এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

মায়ের সুস্থতায় আপ্লুত হয়ে জিয়াউল বিজয় চিহ্ন ভি দেখিয়ে মাসহ সেই মোটরবাইকে আবার ছবি তোলেন। তারপর তা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘৬ দিন মুমূর্ষু মাকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রেখে পুরোপুরি সুস্থ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ! অক্সিজেন সেচুরেশন ৭০ অবস্থায় মাকে বাঁচাতে নিজ শরীরে আট লিটার মাত্রার চলমান ২০ কেজি ওজনের সিলিন্ডার বেধে যে বাইকে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম, আজ মমতাময়ী মা তার ফুসফুসে অক্সিজেন সেচুরেশন ৯৬ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে সেই বাইকে করেই। এ যেন আল্লাহর নেয়ামত। সমগ্র দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা, যাদের আন্তরিক দোয়ায় আমার মাকে মহান আল্লাহ এ যাত্রায় সুস্থ করে দিলেন।’

জিয়াউল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ১০ এপ্রিল নলছিটির নমুনা দিয়ে রিপোর্ট না পেলেও তার মা রেহানা বেগম নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন। তার মা নলছিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এরপর, ১৫ এপ্রিল পুনরায় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার পরীক্ষার নমুনা দিলেও ১৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তির আগে রেজাল্ট জানতে পারেননি। হাসপাতালে ভর্তির পর রাতে তার করোনার নমুনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।

তিনি বলেন, ‘করোনার নমুনা পরীক্ষার রেজাল্ট সময়মতো পেলে হয়তো আমি সঠিক সময়ে মাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে পারতাম।’

ঝালকাঠি কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘১৭ এপ্রিল মায়ের সেচুরেশন (শরীরের অক্সিজেন প্রবাহের মাত্রা) দ্রুত কমছিল। এসময় নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে ডাক্তার মেহেদী দ্রুত বরিশাল শের-ই-বাংলা হাসপাতালে নেওয়ার কথা জানান। আমি তখন অ্যাম্বুলেন্স এমনকী কোনো থ্রি হুইলার পাচ্ছিলাম না। লকডাউনের মধ্যে কোনো যান খুঁজে না পেয়ে নিজ শরীরে গামছা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেধে নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে নেওয়ার পরে মায়ের অবস্থার উন্নতি হলে ছয় দিনের চিকিৎসা শেষে মাকে নিয়ে ফিরছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মা প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ। তাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। বাড়িতে তিনি কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।’

শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও করোনা ওয়ার্ডের ইনচার্জ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জিয়উল হাসানের মা রেহেনা বেগম করোনা ওয়ার্ডের দোতলায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ হলেও দ্বিতীয়বারের মতো তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। কিন্তু, তার পরিবারের আবেদনে তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। তার তবে, অক্সিজেন সেচুরেশন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।’

আরও পড়ুন:

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago