‘রাজনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে’

অর্থনীতি সমিতির ওয়েবিনার

‘ধর্মভিত্তিক মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বিষয়ে ওয়েবিনার করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

আজ দুপুরে ঢাকার ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয় থেকে ওয়েব সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আল কাদেরী জয়। সভা সঞ্চালনা করেন অর্থনীতি সমিতির সহসম্পাদক শেখ আলী আহমেদ টুটুল।

অধ্যাপক আবুল বারকাতের সদ্য প্রকাশিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ গবেষণা গ্রন্থটির বিষয়বস্তু ঘিরে ১৩ সিরিজের আলোচনা সভার সপ্তম পর্ব ছিল আজ।

‘ধর্মভিত্তিক মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি: শোভন সমাজের অশোভন প্রতিপক্ষ’ শীর্ষক আজকের ওয়েবিনারে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘অধ্যাপক বারকাতের এই বই অনেক তথ্যসমৃদ্ধ, তার উপস্থাপিত তথ্য ও ব্যাখ্যা আমি সমর্থন করি। তিনি ঠিকই বলেছেন যে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় মানুষ ধর্মান্ধ হয়ে পড়ে... রাজনীতির মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে মৌলবাদ ব্যবহৃত হয়।’

অধ্যাপক আবুল বারকাতের বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ইনু বলেন, ‘৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ বিনির্মাণ উল্টোপথে হাঁটা শুরু করে। বর্তমানে মূলধারার রাজনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থায় মৌলবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে মৌলবাদীদের ঔদ্ধত্যে একটা হুমকির মুখে আমরা পড়ে গেছি। করোনাভাইরাস মহামারিতে হতাশাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করতে পারে মৌলবাদীরা।’

ইনু বলেন, ‘সংবিধানের চার নীতি যারা মানে না তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ফুলের বাগানে শুকরকে ঢুকতে দিলে তছনছ করে দেবে। তেমনই গণতন্ত্রে জঙ্গিবাদী মৌলবাদীদের আশ্রয় দিলে সব তছনছ হয়ে যাবে। এখানে মাঝামাঝি কোনো তত্ত্ব নেই, একাত্তরে যেমন পাকিস্তানিদের আমরা পরাজিত করেছি, তেমনি এখন জঙ্গি ও মৌলবাদীদের তাড়াতে হবে।’

‘অধ্যাপক বারকাতের প্রস্তাবিত ‘শোভন সমাজ’ এর যাত্রা শুরু হতে পারে একটি সমান্তরাল লড়াইয়ের মাধ্যমে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই ও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে।’

আওয়ামী লীগের ভেতরে ধর্ম ব্যবসায়ী ও মৌলবাদীদের প্রবেশ ঘটেছে অভিযোগ করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও বড় কোনো বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবীদের রক্ষা করা হয়নি, কারণ প্রতিবিপ্লবীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা হয়নি। মৌলবাদীদের উত্থানের বড় কারণ হলো আর্থিক সাহায্য। এটা শুরু করেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, এখনও বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আর্থিক সহায়তা আসে পাকিস্তান ও তার দোসরদের কাছ থেকে।’ 

আল কাদেরী জয় বলেন, ‘মৌলবাদী শক্তি ও পুঁজিবাদী শক্তি হাত ধরাধরি করে চলছে। অধ্যাপক আবুল বারকাত তার বইয়ে রেন্ট-সিকার, লুটেরা শক্তিকে মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষক বলেছেন।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘হেফাজত ২০১১ এর নারী নীতিমালার বিরোধিতা করেছিল। সেই হেফাজতের সঙ্গে আমাদের শাসকগোষ্ঠী অতীতের শাসকগোষ্ঠীর মতো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। হেফাজতের দাবি মেনে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এনেছে। হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমিসের ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান দেওয়া হয়েছে। কৃষক-শ্রমিক-ছাত্রদের তাদের অধিকার থেকে দূরে সরিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

জয় বলেন, ‘অধ্যাপক আবুল বারকাত যে শোভন সমাজের কথা বলেছেন তাকে আমরা আমাদের প্রত্যাশার জায়গা থেকে দেখি, আর তা পূরণের সামাজিক ভিত্তি উপাদান হতে পারে মৌলবাদী শক্তিকে মোকাবেলা করা, শোষণ মুক্তির লড়াই করা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের ২০ বছরের গবেষণার ফসল ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা। ১২ অধ্যায়ে বিন্যাস্ত ৭১৬ পৃষ্ঠার এ বইটি সম্পর্কে অভিনন্দনবাণী দিয়েছেন ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও সমাজ সমালোচক অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি।

Comments

The Daily Star  | English
rally demanding ban on awami league in Dhaka

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

4h ago