কুয়াকাটা সৈকতের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ কর্মহীন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে চলমান বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ আছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এতে সৈকত কেন্দ্রিক প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের আগে কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল মালিক সমিতিসহ অন্যরা।
কুয়াকাটা গেস্ট হাউসের মালিক ও কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব শরীফ বলেন, ‘আমার ১০ জন কর্মচারীর দু’জন ছাড়া সবাইকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে, সবাইকে বেতন-ভাতা দিতে হবে। কিন্তু, করোনার কারণে হোটেল বন্ধ থাকায় কীভাবে বেতন-ভাতা পরিশোধ করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
তিনি আরও জানান, ‘কুয়াকাটার শতাধিক হোটেলে কর্মরত অন্তত দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এই মুহূর্তে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কিন্তু, কোটি কোটি টাকার বেতন-ভাতা গুনতে হবে মালিকদের। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পর্যটনকেন্দ্রের এ অচলাবস্থা আরও র্দীঘায়িত হলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
আসছে ঈদুল ফিতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলেও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সৈকতের পর্যটকদের জন্য গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক আবাসিক হোটেল খান প্যালেস। হোটেলটির পরিচালক রাসেল খান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চলমান লকডাউনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ম্যানেজার ও হোটেল বয়সহ ৩০ জন কর্মচারীর মধ্যে ২০ জনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র নিরাপত্তা ও দৈনিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকজনকে কাজে বহাল রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সব স্টাফের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা নিয়ে জটিলতায় পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বেতনভাতা পরিশোধে তাদের গুনতে হবে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা। এদিকে, ব্যবসা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন অন্তত লাখ টাকার কালেকশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তাই ঈদের আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সৈকত খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সমুদ্রবাড়ি রিসোর্টের ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম মিরন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের ছোট হোটেলের চারজন স্টাফকে ছুটি দিয়েছি। তবে, বেতন গুনতে হবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।’
ইলিশ পার্কের সত্ত্বাধিকারী রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, তার দুইটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা স্টাফ ছাড়া বাকি ১০ জনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।
আবাসিক হোটেল ছাড়াও এখানে আছে অর্ধশতাধিক খাবার হোটেল। যেসব হোটেলে কাজ করতেন প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক। রাখাইনদের তাঁতশিল্প কেন্দ্রিক শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০০ শ্রমিক, সৈকতের প্রায় দেড়শ বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার, ৪০ জন ছাতা-বেঞ্চ ব্যবসায়ী, ফিশ ফ্রাই, চটপটিসহ ক্ষুদে দোকানি আছেন প্রায় আরও দেড়শ জন। টুরিস্ট বোট মালিকসহ কর্মচারীর সংখ্যাও দেড়শ। এছাড়াও, ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক, অটোবাইক, ভ্যান-টমটমচালক দুই শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
কুয়াকাটায় সাগরের অগভীর এলাকায় মাছ ধরা জেলেদের সংগঠন আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের দুই হাজার চারশ জেলে পরিবার সম্পূর্ণভাবে বেকার হয়ে আছে। কারণ তারাও সৈকতে নামতে পারছে না। মানবেতরভাবে দিন কাটছে তাদের। সৈকত না খুললে বিপদ আরও বাড়বে।’
এভাবে হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসাকেন্দ্রিক কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মজীবী করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে তাদের পরিবারকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হবে।
এ ব্যাপারে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে মানবিক সহায়তা হিসেবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ বরাদ্দ প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
Comments