পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন: সপ্তম ধাপে ফ্যাক্টর মুসলিম ভোট

নজর থাকবে মমতার ভবানীপুর আসনেও
তৃণমূল কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টির পতাকা হাতে সমর্থকরা। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আজ সোমবার বিধানসভা নির্বাচনের সপ্তম ধাপের ভোট গ্রহণ চলছে। তৃণমূল কংগ্রেস বনাম ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লড়াইয়ে আজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় মুসলিম ভোটাররা।

তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন হাই প্রোফাইল মন্ত্রী আজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কলকাতা থেকে। ফলে সবার দৃষ্টি সেখানেও থাকবে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুর্শিদাবাদের শমসের নগর ও জঙ্গিপুরের দুই প্রার্থী মারা যাওয়ায় সপ্তম ধাপে ৩৬ আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ভোট নেওয়া হচ্ছে ৩৪টিতে।

মুর্শিদাবাদ ও মালদা জেলাকে বলা হয় মুসলিম ভোটারদের ঘাঁটি। এই দুই জেলায় তৃণমূল তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারবে বলেই মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রথাগতভাবে এই দুই জেলা কংগ্রেসের ঘাটি বলেই বিবেচিত।

অপরদিকে ভবানীপুর, রাশবিহারী, কলকাতা বন্দর এবং বালীগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনে জয়লাভের চেষ্টা করছে বিজেপি। এসব আসনে তৃণমূলের কয়েকজন প্রবীণ মন্ত্রী প্রার্থী হয়েছেন।

২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের জনসংখ্যার ৬৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং মালদার ৫১ দশমিক দুই শতাংশ মুসলিম।

নির্বাচন সূচি অনুযায়ী, এই ধাপে দক্ষিণ দিনাজপুরের ছয়টি, মালদার ছয়টি, মুর্শিদাবাদের ১১টি, পশ্চিম বর্ধমানের নয়টি এবং কলকাতার চারটি আসনে ভোট গ্রহণ হবে।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন চান এবং ভোটে কোনো ধরনের বিভাজন না করার অনুরোধ জানান। অপরদিকে বিজেপি হিন্দু ভোটারদের সমর্থন পেতে তৃণমূল ও কংগ্রেস মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করে বলে প্রচার চালায়।

২০১৬ সালের নির্বাচনে তৃণমূল ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৪টি আসনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে বাম ও কংগ্রেস জোট ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ২২টি আসনে জয় পায়। তবে, বিজেপি কোনো আসনে জিততে পারেনি।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রেক্ষাপট বদলে যায়। বিজেপি ৩৭ শতাংশ ভোট পায় যা তৃণমূলের ৩৯ শতাংশের খুব কাছাকাছি।

লোকসভা নির্বাচনের ভোটের অনুপাতে বিজেপি এবার ১৬টি, তৃণমূল ১৬টি এবং বাকী চারটি আসন কংগ্রেস এগিয়ে আছে।

এই ধাপের নির্বাচনে সবার চোখ থাকছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর নিজ এলাকা ভবানীপুরে।

তবে এবার মমতা ব্যানার্জী নন্দীগ্রাম থেকে লড়ছেন এবং তার দলের প্রবীণ নেতা, সংসদ সদস্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে ভবানীপুরে প্রার্থী করেছেন। অপর দিকে, কিছুদিন আগে তৃণমূল ছেড়ে আসা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে এই আসনে প্রার্থী করেছে বিজেপি।

২০১১ সালের উপনির্বাচনে ভবানীপুরে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন।

মমতা এবার লড়ছেন তার সাবেক বিশ্বস্ত সহযোগী শুভেন্দু অধিকারীর বিপরীতে নন্দীগ্রাম থেকে।

এর আগে ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে সিদ্ধার্থ শংকর ভবানীপুর আসনে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।

কলকাতা বন্দর আসন তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। এখানে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন নগর উন্নয়ন মন্ত্রী, কলকাতার সাবেক মেয়র, মমতার অত্যন্ত বিশ্বস্ত ফিরহাদ হাকিম। ২০১১ সালের পর থেকে তিনি দুবার এই আসনে জয়লাভ করেছেন।

বাল্লীগাংয়ে প্রার্থী হয়েছেন অভিজ্ঞ মন্ত্রী ও প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখার্জী, সিপিআইএম-এর ডা. ফিরহাদ হাকিম এবং বিজেপির লোকনাথ চ্যাটার্জি।

রাশবিহারী আসনে বিজেপির হাই প্রোফাইল প্রার্থী ভারতের সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সুব্রত সাহা। বিপরীতে তৃণমূলের প্রার্থী এবং কলকাতার নাগরিক কমিটির নেতা দেবাশীস কুমার।

ভারতজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশন রাজ্যে সব ধরনের রোড শো ও গাড়ির র‌্যালি নিষিদ্ধ করেছে। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় কোভিডের বিধি-নিষেধ ভাঙতেও দেখা গেছে।

জনসভায় ৫০০ জনের বেশি মানুষের সমাগম না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিআইএমের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা কোনো ধরনের বড় র‌্যালি এবং জনসমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এই ধাপে ৮৬ লাখ ৭৮ হাজার ২২১ জন ভোটার ২৮৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৬৫৩টি কোম্পানি ১২ হাজার ৬৮টি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

নির্বাচন সূচি অনুযায়ী, সর্বশেষ অষ্টম ধাপের ভোট গ্রহণ আগামী ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে এবং ২ মে ভোট গণনা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

17h ago