কড়াইল বস্তিতে কেজিতে নয়, ১০ টাকার প্যাকেটে পণ্য বিক্রি

রাজধানীর কড়াইল বস্তির বৌবাজারের একটি দোকানে ১০ টাকার মসুরি ডালের প্যাকেট কিনতে গিয়েছিলেন তাসমিন বেগম (৪০)। ডাল কেনার পর মন খারাপ করে দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন, এই ডালে তার চার সদস্যের পরিবারের দুই বেলা চালাতে হবে। এক লিটার পানিতে সামান্য একটু তেল আর হলুদ দিয়ে এই ডাল রান্না হবে।
Karail slum
কড়াইল বস্তিতে নানা পণ্যের ১০ টাকার প্যাকেট হাতে ক্রেতা তাসমিন বেগম। ছবি: শাহীন মোল্লা

রাজধানীর কড়াইল বস্তির বৌবাজারের একটি দোকানে ১০ টাকার মসুরি ডালের প্যাকেট কিনতে গিয়েছিলেন তাসমিন বেগম (৪০)। ডাল কেনার পর মন খারাপ করে দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন, এই ডালে তার চার সদস্যের পরিবারের দুই বেলা চালাতে হবে। এক লিটার পানিতে সামান্য একটু তেল আর হলুদ দিয়ে এই ডাল রান্না হবে।

গত ২৫ বছর ধরে এ বস্তিতে বসবাস তাসমিন বেগমের। তিনি জানান, গত বছর লকডাউনের আগে এই ১০ টাকা প্যাকেটের পণ্য তেমন দেখা যেত না। এখন বস্তির মহল্লার বেশিরভাগ দোকানদাররাই বিভিন্ন প্রকারের ডাল, চিনি, কালিজিরা, মসলাসহ অন্যান্য মুদি পণ্য ১০ টাকার প্যাকেট করে রাখে।

তাসমিন আরও জানান, এত অল্প পরিমাণে তাদের আগে কখনও কিছু কিনতে হতো না। টাকার ব্যবস্থা না থাকায় এখন প্রতি বেলার বাজার প্রতি বেলায় করতে হয়। তাই, এই ১০ টাকার প্যাকেট কেনা।

তাসমিন বলেন, ‘আমার স্বামী ফেরি করে চা বিক্রি করে সাধারণত দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করলেও, চলমান লকডাউনে তার ১০০ থেকে ১৫০ টাকার বেশি আয় হচ্ছে না। এই আয় দিয়েই সংসার চালাতে হচ্ছে বলে ১০ টাকার বেশি সদাই কিনতে পারছি না।’

‘গত বছর লকডাউনে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সে ঋণ শোধ করতে না পারায়, নতুন করে ঋণ পাচ্ছি না। এদিকে, দুই মাসের বাসা ভাড়া বাকি,’ যোগ করেন তিনি।

১০ টাকা প্যাকেট চিনি কিনতে বস্তির আরেক দোকানে গিয়েছিলেন নুরজাহান বেগম (২০)। তিনি ডেইলি স্টারকে জানালেন, বাসায় চা বানানোর জন্য চিনি কিনছেন। চা বানিয়ে কিছু চিনি থাকলে ইফতারের সময় শরবত বানানো হবে।

বস্তির দোকানদার আজিজুল হোসেন (৫০) গত ছয় বছর ধরে এখানে দোকান করছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আয় কমে যাওয়ায় ক্রেতারা বেশিরভাগই এখন সবকিছু ওজনে না চেয়ে ১০ টাকার চায়। তাই আমরা অনেক পণ্যই ১০ টাকার প্যাকেট করে রাখি। ক্রেতাদের চাহিদায় এখন পাঁচ টাকারও জিনিস বিক্রি করতে হচ্ছে।’

প্রথম চার বছর দোকান চালিয়ে ভালোই চলছিল আজিজুলের। কিন্তু, গত বছর লকডাউনের সময় দোকানে বেচাকেনা কমতে থাকে। এতে তাকে ব্যক্তি ও বিভিন্ন এনজিও’র কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছে। সে টাকা তিনি এখনও ফেরত দিতে পারেননি। বাকিতে যাদের কাছে মুদি পণ্য বিক্রি করেছিলেন, তাদের অনেকেই টাকা না দিয়েই চলে গেছেন কিংবা বাকি শোধ করতে পারছেন না।

চলতি সপ্তাহে কড়াইল বস্তিতে সরেজমিনে দেখা যায়, অন্তত ২৫টি দোকানে বিক্রেতারা বিভিন্ন পণ্যের ১০ টাকার প্যাকেট সাজিয়ে রেখেছেন।

Karail slum
কড়াইল বস্তিতে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি নানা পণ্যের ১০ টাকার প্যাকেট। ছবি: শাহীন মোল্লা

একাধিক দোকানদার জানিয়েছেন, বস্তিবাসীর অনেকেরই এখন আর আগের মতো ক্রয়ক্ষমতা নেই। তারা দিনের প্রয়োজনীয় জিনিস দিনেই কিনছেন। বেচাকেনা আগের চেয়ে অর্ধেক কমে গেছে। ১০ টাকার প্যাকেট বিক্রি করেও আশানুরূপ আয় হচ্ছে না।

কড়াইল বস্তির বৌবাজার ইউনিটের উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুস সোবহান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বস্তিতে নিম্নআয়ের লোকজন থাকেন। দোকানে ১০ টাকার প্যাকেট আগেও ছিল। কিন্তু, তা এতটা দেখা যেত না। বর্তমানে মানুষের আয় কমে যাওয়ায়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে বিভিন্ন পণ্যের ১০ টাকার প্যাকেট জনপ্রিয় হয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago