চাকরি গেছে, সঙ্গে বকেয়া পাওনাও

মহামারির কারণে গত বছর ঢাকায় ড্রাগন সোয়েটার্সের কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে চাকরিচ্যুত করা হয় তৈরি পোশাককর্মী আবদুল কুদ্দুসকে। এরপর তাকে পাওনা টাকার অর্ধেকের দাবিও ছেড়ে দিতে হয়। গত নয় মাসে আর কোনো বেতন পাননি, এ কারণে তার কাছে মনে হয়েছে একেবারেই কিছু না পাওয়ার চেয়ে যা পেয়েছেন, সেটাই ভালো।

মহামারির কারণে গত বছর ঢাকায় ড্রাগন সোয়েটার্সের কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে চাকরিচ্যুত করা হয় তৈরি পোশাককর্মী আবদুল কুদ্দুসকে। এরপর তাকে পাওনা টাকার অর্ধেকের দাবিও ছেড়ে দিতে হয়। গত নয় মাসে আর কোনো বেতন পাননি, এ কারণে তার কাছে মনে হয়েছে একেবারেই কিছু না পাওয়ার চেয়ে যা পেয়েছেন, সেটাই ভালো।

আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘গত বছরের ২৬ মার্চ আমাদের কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এপ্রিল থেকে অন্য অনেক কারখানা আবার চালু হলেও আমাদেরটা আর হয়নি। কাজে যোগ দিতে গেলে জানানো হয়, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে।’

এরপর একটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিচ্যুত কর্মীদের কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর দেওয়া হয়নি।

টানা নয় মাসের বিক্ষোভ, কারখানা ও শ্রম ভবনের পার্কিং এলাকায় অবস্থান কর্মসূচির পরে অবশেষে গত ডিসেম্বরে আইনগতভাবে শ্রমিকদের পাওনা টাকার আংশিক পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তবে সে সময় অনেক শ্রমিকের হাতে সেই আংশিক অর্থটুকুও পৌঁছায়নি।

দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, নিয়োগদাতা চাইলে মহামারির সময়ে কাজ বন্ধ করে দিতে পারেন এবং ব্যয় সংকোচনের উদ্দেশ্যে কর্মীদের অব্যাহতি দিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে কর্মীদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যত বছর ধরে কর্মী সেই কারখানায় কর্মরত ছিলেন, এই এককালীন অর্থের পরিমাণ তার প্রতিবছরের জন্য এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ হতে হবে। এটি তার প্রভিডেন্ট ফান্ডের সঙ্গে অতিরিক্ত পরিমাণ হিসেবে যোগ হবে।

আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে বসে আমাদের বাধ্য করা হয়েছিল নতুন একটি চুক্তিতে সই করতে। যেখানে লেখা ছিল, আমরা ৩০ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিনের বেতন (প্রতি বছরের জন্য) এবং মাসিক বেতন থেকে প্রতিমাসে প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য যে টাকা কেটে রাখা হতো, তা পাব। আমাদের হাতে কোনো বিকল্প ছিল না। শ্রমিকদেরও জরুরিভাবে টাকার প্রয়োজন ছিল। যেকোনো পরিমাণ টাকা।’

এই ব্যবস্থাটি করা হয়েছে শুধু ৮৯ জন শ্রমিকের জন্য। যারা সরকারি ওয়েজ বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আলোচনায় বসে। তাদের মতে, নতুন চুক্তি অনুযায়ী ২৬৯ জন শ্রমিক, যারা তাদের উৎপাদন অনুযায়ী বা পিস রেটে বেতন পেয়ে থাকেন, তারা কোনো সুবিধা পাবেন না। ৭৫ জন স্টাফ সদস্যও শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ড পাবেন। 

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) ঢাকা অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক এ কে এম সালাউদ্দিন এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের কিছু অধিকারের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হয়েছে, আর কারখানা মালিককেও তার অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়েছে। উভয় পক্ষের সম্মতিতে চুক্তি সই হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে সেক্ষেত্রে সরকারের কোনো আপত্তি জানানোর সুযোগ নেই।’

ইতোমধ্যে, টাকা দেওয়ার জন্য চারটি তারিখ ঠিক করা হলেও তা পার হয়ে গেছে। কিন্তু আব্দুল কুদ্দুস এখনো কোনো টাকা পাননি। তিনি ওই কারখানায় ১৮ মাস কাজ করেছেন এবং তাদের দাবি সংক্রান্ত সব আলোচনায় শ্রমিকদের পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য আমার বেতন থেকে প্রতি মাসে যে টাকাটা কেটে রাখা হতো, সেটাও আমি এখনো পাইনি। এ কারণে আমি শ্রম আদালতে একটি মামলা করেছি।’

মামলার বিবরণে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, কারখানার কাছে তিনি সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা পাবেন। যার এক তৃতীয়াংশ টাকা তিনি নিজের বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য জমিয়েছেন। এ যাবৎ আরও ২৫ জন শ্রমিকও শ্রম আদালতে নিয়োগদাতার বিরুদ্ধে বেতন বঞ্চনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন।

এমনকি যারা কিছু টাকা পেয়েছেন, তারাও তাদের প্রাপ্য টাকার চেয়ে অনেক কম পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

১৯৯৭ সালে ওই কারখানায় কাজ করা রোমেসা খাতুন জানান, তিনি মাত্র ২৮ হাজার টাকা পেয়েছেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমি আট হাজার ৬০০ টাকা বেতন থেকে প্রতিমাসে ২০০ টাকা করে প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা দিয়েছি। আমার কি আরও বেশি টাকা পাওয়ার কথা না?’

তিনি তার ২৩ বছরের কর্মজীবনে সঞ্চয়ের অর্ধেকেরও কম টাকা পেয়েছেন। এছাড়া তিনি এটাও জানতেন না যে, প্রতি বছরের জন্য ১৫ দিনের করে বেতন বকেয়া রয়েছে।

দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়াম (ডব্লিউআরসি) ‘ফায়ার্ড দেন রবড’ নামের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ড্রাগন সোয়েটারের শ্রমিকদের আরও এক লাখ ৩৩ হাজার ২০০ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা।

ক্ষতিপূরণ আইন মানছে না কারখানাগুলো

২০২০ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরের মাঝামাঝিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ৬১০টি ছোট থেকে মাঝারি কারখানার ওপর সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছে, ৯৬ দশমিক চার শতাংশ কারখানায় শ্রমিক সংকোচনের সময় ক্ষতিপূরণের আইনগুলো ঠিক মতো মানা হয় না। সিপিডি এ বছরের শুরুর দিকে এই তথ্যগুলো প্রকাশ করে।

প্রতিষ্ঠানটির পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, বড় কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির সুবিধাগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। 

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া শ্রমিকদের মাঝে অর্ধেক মধ্যম ও বড় কারখানায় কাজ করেন। ৫০০ থেকে আড়াই হাজার শ্রমিকের কারখানাকে মধ্যম এবং দুই হাজার ৫০০’র চেয়ে বেশি শ্রমিকের কারখানাকে বড় কারখানা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গবেষণাটিতে দেখা গেছে, মধ্যম আকারের কারখানাগুলোর মাঝে ৮৪ শতাংশ এবং সব বড় কারখানাগুলোতে শুধু শ্রমিকদের মাসিক বেতন দেওয়া হয়। তাদের বকেয়াগুলো এবং আইন অনুযায়ী কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া কারখানাগুলোর ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৩ জন শ্রমিকের মধ্যে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৪৫০ জন শ্রমিক ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন। যা মোট চাকরির প্রায় ১৪ শতাংশ।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রায় ষাট শতাংশ কারখানা তাদের শ্রমিক সংকোচন করেছে (৬১০টির মধ্যে ৩৬৪টি)। বাকি কারখানাগুলো শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, অথবা তাদের শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ায়নি।’

সংস্থাটি জানতে পেরেছে, বেশিরভাগ কারখানা কর্মীদের ছাঁটাই ও চাকরিচ্যুত করার নিয়মগুলো সঠিকভাবে মানছে না।

মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ডিআইএফই-এর দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী কোনো কারখানা যদি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ভর্তুকিসহ ঋণ সুবিধা নিয়ে থাকে, তাহলে তারা কর্মী সংকোচন বা ছাঁটাই করতে পারবে না। তবে বেশিরভাগ কারখানা এই নির্দেশটি মানছে না।’ 

ব্র্যান্ডগুলো হিসেব করছে মুনাফার, আর কর্মীরা হচ্ছেন বেতন বঞ্চনার শিকার।

২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ১৬টি আন্তর্জাতিক পোশাক নির্মাতা ব্র্যান্ড প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের মুনাফা অর্জন করে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এসব ব্র্যান্ডের পোশাক নির্মাণকারী ১০ হাজার শ্রমিক বেতন বঞ্চনার শিকার হয়েছেন।

বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টার একটি সংস্থার নাম। যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় অনিয়ম খুঁজে বের করে। সংস্থাটি সম্প্রতি একটি গবেষণায় উপরের তথ্যটি প্রকাশ করেছে।

‘ওয়েজ থেফট অ্যান্ড প্যান্ডামিক প্রফিটস: দ্য রাইট টু অ্যা লিভিং ওয়েজ ফর গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স’ নামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, একবছর ধরে মহামারি চলছে, আর বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো মুনাফার মাঝে থাকলেও তাদের গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন, আনুষঙ্গিক সুবিধা এবং চাকরিচ্যুতির টাকা বকেয়া রয়েছে।

সংস্থাটির গবেষণার আওতায় থাকা ব্র্যান্ডগুলোর মাঝে রয়েছে কার্টার্স, হ্যানেসব্র্যান্ডস, এইচঅ্যান্ডএম, লেভি স্ট্রস অ্যান্ড কোম্পানি, লিডল, এল ব্র্যান্ডস, মাটালান, মার্কস, নেক্সট, নিউ লুক, নাইকি, পিভিএইচ, রিভার আইল্যান্ড, সেইন্সবারি’স, এস অলিভার এবং দ্য চিল্ড্রেন্সস প্লেইস।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের দাবি, লিডল, নিউ ইয়র্কার ও উলসওয়ার্থস নামের ব্র্যান্ডগুলোকে ড্রাগন সোয়েটার্স পণ্য সরবরাহ করতো।

গবেষক দলটি গাজীপুরের স্টাইলক্র্যাফট লিমিটেড নামের বাংলাদেশি কারখানার ওপর নজর রাখে। এই কারখানাটির ক্রেতাদের মাঝে রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম, নিউ লুক ও রিভার আইল্যান্ড।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ’২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর স্টাইলক্র্যাফটের প্রায় তিন-চার হাজারের মতো শ্রমিক বকেয়া বেতন ও সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন’

‘বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের বকেয়া বেতনের ৩৫ শতাংশ, নভেম্বরের পুরো বেতন এবং ওভারটাইম ও অন্যান্য প্রাপ্য টাকার দাবি জানান।’

স্টাইলক্র্যাফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস আলমাস রহমান বলেন, ‘তারা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার পর কীভাবে তাদের বকেয়াগুলো পরিশোধ করা হবে, সে ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।‘

তিনি আরও বলেন, ‘তারা কয়েক কিস্তিতে বকেয়া টাকা পরিশোধের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। আমরা আগামী কয়েক মাস ধরে তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করবো।’

মহামারির সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড স্টাইলক্রাফটের কাছে দেওয়া প্রায় পাঁচ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্ডার বাতিল কিংবা বিলম্বিত করেছে।

শামস বলেন, ‘তারা আমাদের জানিয়েছে, মহামারির সময়ে তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না, কী পরিমাণ ক্রেতা তাদের দোকানগুলোতে আসবেন এবং পরে আবারও অর্ডার দেবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রেতারা অর্ডার দিয়েছেন এবং আমি কাঁচামালও কিনেছি, কিন্তু তখন হঠাৎ করে ওই অর্ডারগুলো বাতিল হয়ে যায়।’ তবে কতজন ক্রেতা অর্ডার বাতিল করেছেন, সে সংখ্যাটি জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

গবেষক দলের প্রশ্নের জবাবে ব্র্যান্ডগুলো জানিয়েছে, তারা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন নিশ্চিত করতে সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এখন ডিসেম্বর ও জানুয়ারির পুরো বেতন পরিশোধ করা হয়েছে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের বকেয়া বেতনের ১৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ আগামী কয়েক মাস ধরে পরিশোধ করা হবে। তবে তা শ্রমিকদের প্রত্যাশিত ৩৫ শতাংশের চেয়ে অনেকটাই কম।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৬টি ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের মাঝে অন্তত দুই তৃতীয়াংশ মহামারির কারণে শুরুতে ঝামেলায় পড়লেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং মুনাফা করছে।

‘তবে, আশ্চর্যজনকভাবে, এদের মাঝে এক তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান এখনো সব অর্ডারের টাকা প্রদান করার জন্য প্রস্তুত নয়।’ 

ডব্লিউআরসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো নিয়োগদাতা যদি নাও চায় যে, তারা তাদের শ্রমিকদেরকে বকেয়া বেতন থেকে বঞ্চিত করবেন না। তবুও তারা ব্র্যান্ডদের অবস্থানের কারণে বাধ্য হতে পারেন।’

এ ওয়ান বাংলাদেশ লিমিটেড-এর কর্মীরা চাকরিচ্যুত হবার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো টাকা পাননি। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ সাভারের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় (ইপিজেড) অবস্থিত এ কারখানাটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় এক হাজার ১০০ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন।

ডব্লিউআরসি এবং দ্য ডেইলি স্টারের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়া একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন, বন্ধ হওয়ার আগে বেনেটন ও নেক্সট, এই কারখানাটির পণ্যের অন্যতম ক্রেতা ছিল। ডব্লিউআরসি তার ‘ফায়ার্ড অ্যান্ড রবড’ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কারখানাটি এখনো শ্রমিকদের প্রায় পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ ডলারের বকেয়া পরিশোধ করেনি।

ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করতে থাকায় এবং তাদের ইতালিয় অংশীদার আলেসান্দ্রো ফেররো দেশ ছেড়ে চলে গেলে কারখানাটি বিপদে পড়ে যায়।

বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (বেপজা) মহাব্যবস্থাপক নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, মহামারির কারণে অর্ডার আসা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে কারখানাটি আর্থিক সমস্যা পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফেররোকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিতে ইতালির রাষ্ট্রদূত আমাদের অনুরোধ করেন, যাতে তিনি ইতালিতে ফিরে গিয়ে তার কারখানার জন্য ব্যবসার ব্যবস্থা করতে পারেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেন, কারখানাটি প্রকৃতপক্ষেই কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েছে এবং অর্ডার না পাওয়ার কারণেই তাদের এই অবস্থা হয়েছে।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস কর্মী সংহতির হিসেব অনুযায়ী, শ্রমিকদের বকেয়া বুঝে পাওয়ার জন্য ২২ বার সময় দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি তারিখ পার হয়ে গেছে কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা কোনো টাকা পাননি।

নাজমা আরও বলেন, ‘আমরা ভাবছি কারখানাটি এবং তার সব সম্পত্তি নিলামে তুলে সেখান থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করবো। তবে এ প্রক্রিয়াটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। সম্পন্ন হলে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বুঝে পাবেন।’

শ্রমিকরা টাকা পাওয়ার আশায় ফেব্রুয়ারিতে বেপজায় গিয়েছিলেন, কিন্তু তাদেরকে বলা হয়েছে, কারখানা বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছুই পাবেন না।

কারখানাটির একজন সাবেক শ্রমিক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কীভাবে আমরা টাকার জন্য এতদিন অপেক্ষা করবো? আমি বর্তমানে বেকার অবস্থায় আছি এবং গত একবছর ধরে চেষ্টা করেও কোনো চাকরি পাইনি। বাসার সব আসবাবপত্র বিক্রি করে বেঁচে আছি। এখন আর বিক্রি করার মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই’-বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Badiul Alam Majumder

Elections won’t be unacceptable without AL: Badiul Alam

Dr Badiul Alam Majumdar, secretary of 'Citizens for Good Governance' (SHUJAN), has said elections will "not be unacceptable" without Awami League's participation..AL has completely destroyed the electoral system in this country by conducting "dummy, one-sided and midnight" elections, he sa

1h ago