পটুয়াখালীতে সৌন্দর্যবর্ধনে লেক খনন, ঝুঁকিতে বেড়িবাঁধ

নেই কোনো প্রকল্প, নেই বরাদ্দ। জমি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের। অনুমোদন না নিয়েই লেক খনন কাজ শুরু করেছে কুয়াকাটা পৌরসভা। অপরিকল্পিতভাবে নেওয়া এই উদ্যোগে ঝুঁকিতে পড়েছে ৫৩ বছরের পুরনো বেড়িবাঁধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ ঘেঁষে জিরো পয়েন্টের পাশে একটি পুরনো ডোবা প্রায় পাঁচ মিটার গভীর করে তৈরি করা হচ্ছে লেক। লেকের দুপাশে দুটি ঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে দুপাশে দুটি পাবলিক টয়লেটের নির্মাণকাজ। লেক খনন করায় প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বাঁধটি ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

বন্যা থেকে ঘর-বাড়ি ও কৃষি জমি রক্ষা করতে ১৯৬৮ সালে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।

সূত্র জানায়, পাবলিক টয়লেট নির্মাণে পৌরসভা প্রায় ১৯ লাখ টাকার প্রকল্প নিলেও, সৌন্দর্যবর্ধনে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। নেই কোনো অর্থ বরাদ্দ। পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে লেক খননের কাজ শুরু করেছেন। জমির মালিক জেলা প্রশাসন। তাদের খাস জমিতে পৌরসভা কাজ শুরু করে।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র আ. বারেক মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটি মেয়রের ব্যক্তিগত প্রকল্প। পৌরসভার কোনো উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে হলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে করতে হয়। এ প্রকল্পটির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের খাস জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমির মালিকানা পৌর কর্তৃপক্ষের অনুকূলে আনতে হবে। এখানে আরও একটি অনিয়ম হয়েছে।’

লেক খননের কাজ বন্ধ রাখতে গত ২০ এপ্রিল কুয়াকাটা পৌর মেয়রকে দাপ্তরিক চিঠি দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (কলাপাড়া সার্কেল) শওকত ইকবাল মেহেরাজ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লেকটি খনন করা হলে বঙ্গোপসাগরের বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধটি ধসে এ অঞ্চলের মানুষের জান-মাল ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য লেক খনন বন্ধ রাখতে ২০ এপ্রিল পাউবো থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে ঘাট, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও লেকের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করা হয়েছে। কোনো প্রকল্পের আওতায় এই কাজ করা হচ্ছে না। পুরো কাজের ব্যয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ থেকে সমন্বয় করা হবে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলে লেকের খনন কাজ বিঘ্নিত হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে আগে-ভাগেই মাটি কাটার কাজ শুরু করা হয়েছে। পরে প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি জনস্বার্থে কাজটি করছি, এতে আমার ব্যক্তিগত কোনো লাভ-লোকসান নেই। যদিও, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে।’

তবে এই ঘটনাকে অনিয়ম হিসেবে দেখছে জেলা প্রশাসন। পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জি এম সরফরাজ বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং খননকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। সরকারি জমিতে অনুমোদন না নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো কাজ করতে পারে না। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। পৌর কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Leaked audio reveals Hasina ordered lethal force in deadly crackdown: BBC investigation

In the audio, Hasina is heard saying she authorised security forces to "use lethal weapons" against demonstrators

2h ago