শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা

নদীতে নামতে প্রস্তুতি নিয়েছেন বরিশাল বিভাগের প্রায় তিন লক্ষাধিক জেলে। ছবি: টিটু দাস

আগামীকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ইলিশের ছয় অভয়াশ্রমে দুই মাসের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নামতে প্রস্তুতি নিয়েছেন বরিশাল বিভাগের প্রায় তিন লক্ষাধিক জেলে।

এর আগে, গত ১ মার্চ থেকে বরিশাল বিভাগের তিনটি অভয়াশ্রমের ২৭২ কিমিসহ মোট ছয়টি অভয়াশ্রমের ৪৩২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, চাঁদপুরের ষাটনল পয়েন্ট থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত একশ কিমি, ভোলা জেলার চরইলিশা থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিমি, ভোলা জেলার চরভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চররুস্তম একশ কিমি, বরিশাল জেলার সদর, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ৮২ কিমি, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদেরগঞ্জ জেলার ২০ কিমি ও পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিমি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় গত দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ ছিল।

ছবি: টিটু দাস

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাসুদ আরা মমি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ২০০৫ সাল থেকে চারটি অভয়াশ্রমের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু হয়েছিল। বর্তমানে বরিশাল বিভাগের তিন জেলা ছাড়াও চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুরের নদ-নদীতে কার্যকর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এবারে অভিযানের সংখ্যা যেমন বাড়ছে একইভাবে লকডাউনের কারণে জেলেদের নদীতে নামার প্রবণতাও আগের চেয়ে কম ছিল। তাই আমরা মনে করছি নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। তবে, মাছের বৃদ্ধি ঠিক কতটুকু বেড়েছে তা এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না। খরা পরিস্থিতির কারণে নদ-নদীতে পানি প্রবাহ কম ও লবণাক্ত হয়ে উঠেছে, এটি দীর্ঘ সময়ে থাকলে মাছের ওপরে প্রভাব পড়তে পারে। আগামী জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত বেশি হলে হয়তো এবারও ঝাঁকে ঝাঁকে মাছের দেখা পাওয়া যাবে।’

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিস জানায়, বরিশাল বিভাগে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা তিন লাখ ৬৩ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে ৬০ ভাগের কম জেলেকে, যার পরিমাণ দুই লাখ এক হাজার ৯৭৯ জনকে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত কার্ডধারী জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। ইতোমধ্যে তারা মার্চ মাস পর্যন্ত পেয়েছে।

মৎস্য বিভাগের মতে, জাটকা সংরক্ষণ ও মৎস্য আইন প্রতিপালনে এই খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।

তবে, দীর্ঘদিন ধরে অভয়াশ্রমের জেলেরা তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি ইসরাইল পণ্ডিত।

তিনি জানান, এবারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে লকডাউনে জেলে পরিবারগুলো কঠিন সময় পার করছে। তাদের দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার সময়ে চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদী তীরের লোহালিয়া ও রাজগুরু গ্রামের জেলে পল্লীতে সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানকার জেলেদের অর্ধেক এই কার্ড পেয়েছে। তাদের মধ্যে সবাই খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন না।

লোহালিয়া গ্রামের প্রবীণ জেলে শাহ আলম জানান, এই গ্রামে জেলেদের সংখ্যা প্রায় চারশ হলেও কার্ড পেয়েছে মাত্র ৫৫ জন। এভাবে রাজগুরু গ্রামে সাতশ জেলে থাকলেও জেলে কার্ড আছে মাত্র দুইশ জনের।

তিনি জানান, বয়স্ক ভাতা পাওয়ায় তার নাম জেলে কার্ড থেকে বাদ গেছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইদুজামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই উপজেলায় তিন হাজার ২৭৫ জন জেলে কার্ড পেয়েছেন। দীর্ঘদিন নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ ছিল, তবে সম্প্রতি তা হালনাগাদ করার নির্দেশ এসেছে। সেই অনুযায়ী জেলে কার্ডের জন্য আরও ছয়শ আবেদন আছে।

বরিশাল জেলার মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, বিভাগে জেলেদের বর্তমান সংখ্যার চেয়ে ১০ ভাগ জেলে তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। জেলায় ৩০ হাজার জেলে নাম যুক্ত হতে পারে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের উপপরিচালক জানান, অভিযান সফল হয়েছে। আশাকরি মাছের উৎপাদন বাড়বে। গত বছরে বরিশাল বিভাগে মৎস্য উৎপাদন ছিল ৩.৫ লাখ মেট্রিক টন যা এবারে ৩.৬ লাখ টন হবে বলে আশা করছি।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago