বাংলাদেশের শেষটা হলো না শুরুর মতো, পাঁচশর পথে শ্রীলঙ্কা
আলো স্বল্পতা আর বৃষ্টির কারণে খেলা শেষ হলো আগেভাগে। ঘাটতি তৈরি হলো প্রায় ২৪ ওভারের। তার আগে যে ৬৫.৫ ওভার বোলিং করল বাংলাদেশ, সেখানে শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেট হারিয়ে তুলল ১৭৮ রান। প্রথম দিনে ৯০ ওভারে মাত্র ১ উইকেট নিতে পারা সফরকারীদের জন্য নিঃসন্দেহে এই পারফরম্যান্স স্বস্তির। তবে তার মাত্রাটা আরও বেশি হতে পারত। নজরকাড়া বোলিং করা তাসকিন আহমেদের বলে নাজমুল হোসেন শান্ত শেষ বিকালে ক্যাচ না ফেললে লঙ্কানদের আরও চেপে ধরতে পারত বাংলাদেশ।
শুক্রবার পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ৪৬৯। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রান বাড়িয়ে চলেছেন নিরোশান ডিকভেলা। তার সংগ্রহ ৬৪ বলে ৬৪। তৃতীয় সেশনে স্লিপে জীবন পাওয়া রমেশ মেন্ডিস উইকেটে আছেন ৫৫ বলে ২২ রানে। তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটির সংগ্রহ ১১৭ বলে ৮৭ রান। এই জুটি কল্যাণে ম্যাচে ফের স্বাগতিকদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর ডানহাতি পেসার তাসকিন এদিন নেন ৩ উইকেট। বাকি ২ উইকেট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করেন দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। উইকেট যথারীতি ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো। তবে পরের দিনগুলোতে স্পিনারদের সুবিধা পাওয়ার আভাস মেলে। টার্ন আর বাউন্স পান স্পিনাররা।
দিনের শুরুতে বল হাতে পান দুই পেসার তাসকিন ও শরিফুল ইসলাম। তারা দুজনই করেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। পরে আবু জায়েদ চৌধুরী আক্রমণে গিয়েও লাইন-লেংথে গড়বড় করেননি। দুই-একটা আলগা বলে তারা বাউন্ডারি হজম করেন ঠিকই। কিন্তু রানের জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয় লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের।
মাটি কামড়ে থেকে দিনের প্রথম ঘণ্টা পার করেন শ্রীলঙ্কার প্রথম দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান লাহিরু থিরিমান্নে ও ওশাদা ফার্নান্দো। বাংলাদেশের উল্লাসের মুহূর্ত আসে দিনের ১৫তম ওভারে। তাসকিনের লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের তালুবন্দি হন থিরিমান্নে। তিনি ২৯৮ বলে করেন ১৪০ রান। তার ইনিংসে ছিল ১৫টি চার।
থিরিমান্নের বিদায়ে ভাঙে ২৪৬ বলে ১০৪ রানের জুটি। এই জুটির সেঞ্চুরি পূরণ হয়েছিল পানি পানের বিরতির আগে। আবু জায়েদকে চার মেরে তখন ১৩২ ডেলিভারিতে ফিফটিতেও পৌঁছে যান ওশাদা।
একই ওভারে দুই বল পরই আবার উইকেট পেতে পারতেন তাসকিন। তার অফ স্টাম্পের বাইরের ভালো লেংথের বল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ব্যাট আলতো ছুঁয়ে জমা হয় লিটনের হাতে। কিন্তু বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা বুঝতেই পারেননি! তারা আবেদনও করেননি।
সৌভাগ্যক্রমে এই ভুলের মাশুল দিতে হয়নি বাংলাদেশকে। তিন ওভার পর ম্যাথিউসকে ফেরান সেই তাসকিনই। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ একটি ক্যাচ ধরেন উইকেটরক্ষক লিটন। ম্যাথিউস ১৫ বলে করেন ৫ রান।
১৫ রানের ব্যবধানে ফের উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। আগের বলেই পরাস্ত হতে পারতেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। শেষ মুহূর্তে তিনি সরিয়ে নিয়েছিলেন ব্যাট। কিন্তু পরেরবার আর রক্ষা পাননি। তাইজুলের ডেলিভারি তার ব্যাটে লেগে লিটনের গ্লাভস ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। স্লিপে দুইবারের চেষ্টায় বল মুঠোয় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ধনঞ্জয়ার সংগ্রহ ৯ বলে ২ রান।
দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টা অবিচ্ছিন্ন থেকে কাটিয়ে দেন ওশাদা ও পাথুম নিসানকা। পানি পানের বিরতির পরপর তাদের ষষ্ঠ উইকেট জুটি ছুঁয়ে ফেলে ফিফটি। ১৪৩ বলে ৫৪ রানের এই জুটি ভাঙার কাজটিও করেন ডানহাতি গতি তারকা তাসকিন। তার নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন নিসানকা। ৮৪ বলে তার সংগ্রহ ৩০ রান।
তিনে নামা ওশাদা এক প্রান্ত আগলে ব্যাটিং করছিলেন। পরের ওভারে তাকে বিদায় করেন অফ স্পিনার মিরাজ। সুইপ করতে গিয়েছিলেন তিনি। বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে প্যাডে লেগে তারপর ব্যাট স্পর্শ করে যায় পেছনে। ততক্ষণে বাঁ দিকে সরে গিয়ে তৈরি ছিলেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। অনায়াসে বল লুফে নেন তিনি। ওশাদা আউট হন ৮১ রানে। তার ২২১ বলের ইনিংসে ছিল ৮ চার।
লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত ২৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে লঙ্কানরা যোগ করেছিল মাত্র ৪৩ রান। দ্বিতীয় সেশনে বাড়ে রান তোলার গতি। ৩০ ওভারে ২ উইকেটের পতন হলেও তারা তোলে ৯১ রান। চা বিরতির পর রানের চাকায় আরও দম দেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ডিকভেলা। ফলে মাত্র ৯.৫ ওভারে আসে ৪৪ রান। রমেশও বড় শট খেলেন ঝুঁকি না নিয়ে।
তৃতীয় সেশনের তৃতীয় ওভার শেষে বৃষ্টির কারণে প্রথম দফায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ২৫ মিনিট বিরতি দিয়ে আম্পায়াররা মাঠে ফেরার নির্দেশ দেন ক্রিকেটারদের। এরপর উইকেট নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেন তাসকিন। কিন্তু সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন শান্ত। আগের দিনও তাসকিনের বলে তিনি ছেড়েছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের ক্যাচ।
রমেশ তখন ছিলেন ১২ রানে। তার আগেই ফিফটি তুলে নেন ডিকভেলা। মাত্র ৪৮ বলে হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছান তিনি। এই বাঁহাতির ইনিংসে চার ৭টি। সাত ওভারের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বন্ধ হওয়ার পর আর মাঠে গড়ায়নি খেলা। আগামীকাল তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হবে নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(দ্বিতীয় দিন শেষে)
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ২৯১/১) ১৫৫.৫ ওভারে ৪৬৯/৬ (থিরিমান্নে ১৪০, ওশাদা ৮১, ম্যাথিউস ৫, ধনঞ্জয়া ২, নিসানকা ৩০, ডিকভেলা ৬৪*, রমেশ ২২*; আবু জায়েদ ০/৬৯, তাসকিন ৩/১১৯, মিরাজ ১/১০২, শরিফুল ১/৯১, তাইজুল ১/৮৩)।
Comments