অনিশ্চয়তা, তবুও গ্রামে ছুঁটছেন তারা

কোনো একটি যানবাহনের জন্য গাবতলী ব্রিজের ওপর অপেক্ষায় হামিদুল ইসলামের মতো অনেকেই। ২৯ এপ্রিল ২০২১। ছবি: শাহীন মোল্লা

কুমিল্লা শহরে দিনমজুরের কাজ করতেন রংপুর মিঠাপুকুরের হামিদুল ইসলাম (৩৫)। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা থেকে একটি পিকআপ ভ্যানে ঢাকার গাবতলী এসে পৌঁছান তিনি। উদ্দেশ্য গ্রামের বাড়ি মিঠাপুকুর।

এই লকডাউনে কীভাবে বাড়ি যাবেন জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কীভাবে যাবো জানি না। গাবতলী ব্রিজের ওপর ঘণ্টাখানেক ধরে দাঁড়িয়ে আছি। হয়তো ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।’

তিনি জানান, কুমিল্লায় নিয়মিত কাজ পাচ্ছিলেন না। গ্রামে এখন ধান কাটার মৌসুম। সেখানে গেলে হয়তো কাজ পাবেন। অনিশ্চয়তার মধ্যেই তাই রওনা হয়েছেন গ্রামের উদ্দেশে।

হামিদুলের মতো আরও অনেককে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাবতলী ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের বেশিরভাগই পাবনা, বগুড়া, রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাবেন। আবার ফরিদপুর, রাজবাড়িও যাবেন অনেকে।

এ সময় ব্রিজের ওপরে এবং ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বেশকিছু মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায়। তারা যাত্রীদের তাদের গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকছেন।

জানা গেল, এসব যানবাহনগুলোতে করেই গ্রামের উদ্দেশে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। এর কোনোটি যাবে সাভার পর্যন্ত, কোনোটি মানিকগঞ্জ আবার কোনোটি হয়তো যাবে কালিয়াকৈর পর্যন্ত। 

পিকআপ ভ্যানে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। গাবতলী ব্রিজ। ২৯ এপ্রিল ২০২১। ছবি: শাহীন মোল্লা

রবি চাঁদের (২৫) গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদরে। জানালেন, মানিকগঞ্জ পর্যন্ত হিউম্যান হলারে করে যাওয়ার পর সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা, হিউম্যান হলার বা মোটরসাইকেলে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত যাবেন। পদ্মা নদী পার হতে ট্রলার পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। নদীর ওপারে গিয়েও হয়তো কিছু একটা পেয়ে যাবেন, এই ভরসায় রওনা হয়েছেন।

কথা হয় হিউম্যান হলার চালক সাহেব আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, তার বাহনে আট জনকে নিতে পারবেন। সিংগাইর হয়ে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত যাবেন তিনি। প্রতি যাত্রীর কাছে ভাড়া পাবেন ১০০ টাকা।

সাহেব আলী আরও জানান, তার গাড়ি হেমায়েতপুর-কেরানীগঞ্জ রুটের। গত দুদিন ধরে গাবতলী ব্রিজ এলাকায় অনেক যাত্রী আছে শুনে এখানে এসেছেন এবং যাত্রীদের মানিকগঞ্জ পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া, কয়েকটি মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সকে দেখা গেল সিরাজগঞ্জ-বগুড়ার যাত্রীদের ডাকছেন। চালকরা জানালেন প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। গাড়ি ভরে গেলেই রওনা দেবেন গন্তব্যে।

যোগাযোগ করা হলে গতকাল সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে এভাবে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আমাদের সন্দেহভাজন গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছি, গাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছি। প্রয়োজনে মামলাও করছি।’

‘এভাবে যাত্রী পরিবহনের জন্য আজ (শুক্রবার) সাতটি মাইক্রোবাসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

'We know how to fight through adversity': Women footballers eye world stage

Captain Afeida Khandakar, her voice steady with emotion, said: “This is a moment we will never forget."

2h ago