বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা শোনেনি ভারত সরকার

ভারতে করোনাভাইরাসের একটি নতুন অতি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে জানিয়ে মার্চের শুরুর দিকেই সরকারকে সতর্ক করেছিলেন দেশটির বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত ফোরামের এই বিজ্ঞানীদের অভিযোগ, সরকার তখন তাদের সতর্কবার্তায় কান দেয়নি।
ভারতের নয়াদিল্লিতে একটি হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের সঙ্গে লড়ছেন করোনা আক্রান্ত এক নারী। ছবি: রয়টার্স

ভারতে করোনাভাইরাসের একটি নতুন অতি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে জানিয়ে মার্চের শুরুর দিকেই সরকারকে সতর্ক করেছিলেন দেশটির বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত ফোরামের এই বিজ্ঞানীদের অভিযোগ, সরকার তখন তাদের সতর্কবার্তায় কান দেয়নি।

করোনাভাইরাস বিষয়ক বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা ওই ফোরামের চার জন সদস্য রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সতর্ক করা সত্ত্বেও ভারত সরকার ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো এ সময় লাখ লাখ মানুষ মাস্ক ছাড়াই কুম্ভ মেলার মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিজেপি এবং বিরোধী দলের নেতারা রাজনৈতিক সমাবেশ করেছেন। মোদির কৃষি নীতির বিরোধিতা করে দিল্লির প্রবেশ মুখগুলোতে হাজার হাজার কৃষকও বিক্ষোভ করেছেন এ সময়।

ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশটিকে এখন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। করোনা আক্রান্তদের জায়গা দিতে গিয়ে ভারতের হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। দেখা দিয়েছে তীব্র আক্সিজেন সংকট। নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণেই পরিস্থিতি এতো খারাপের দিকে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

রয়টার্স জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ভারত সরকার সার্স-কোভি-২ জেনেটিকস কনসোর্টিয়াম বা আইএনএসএসিওজি নামে একটি বিজ্ঞানীদের ফোরাম গঠন করে। এটি গঠন করা হয় ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কাজ করতে সক্ষম ১০টি জাতীয় গবেষণাগারের সমন্বয়ে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে ওঠতে পারে, এমন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করাই মূলত এই ফোরামের কাজ।

আইএনএসএসিওজির সদস্য এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ইনস্টিটিউট অব লাইফ সায়েন্সের পরিচালক অজয় পারিদা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতেই বিজ্ঞানীরা প্রথম করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭) শনাক্ত করতে সক্ষম হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর ভারতের একটি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক রয়টার্সকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি বার্তা পৌঁছে দেন, এমন একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে মার্চের শুরুতেই বিষয়টি অবহিত করা হয়েছিল। এ শীর্ষ কর্মকর্তা ভারতের জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিক এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাজিব গুবে। তবে আইএনএসএসিওজি’র সেই সতর্কবার্তা মোদির কাছে পৌঁছেছিল কি না, তা নিশ্চিত নয়। রয়টার্স এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মোদির অফিস বা রাজিব গুবে সাড়া দেননি।

সরকারি নথিপত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ১০ মার্চের আগেই আইএনএসএসিওজি তাদের উদ্ভাবন ও সুপারিশ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলে (এনসিডিসি) পৌঁছে দেয়। এতে বলা হয়, এ ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের কথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়। যদিও এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পায়নি রয়টার্স।

এদিকে, একই সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হয়ে একটি খসড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে আইএনএসএসিওজি। রয়টার্সের হাতে ওই বিজ্ঞপ্তির একটি কপি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মহারাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নমুনায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মিউটেশনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই মিউটেশন দুটি ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’। এর মধ্যে এল৪৫২আর নামের একটি মিউটিশেন সংক্রমণ বাড়াতে এবং মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।

এর দুই সপ্তাহ পর, গত ২৪ মার্চ ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে। তবে সরকারি বিবৃতিতে ‘উচ্চ উদ্বেগের’ বিষয়টি বলা হয়নি। যদিও পরীক্ষা বাড়ানো ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয় সরকার।

সরকার এ সতর্কবার্তাকে আরও গুরুত্ব দিয়ে জনসমাগম নিষিদ্ধ করার মতো ব্যবস্থা কেন নেয়নি— জানতে চাইলে আইএনএসএসিওজির বিজ্ঞান পরামর্শক গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহিদ জামিল বলেন, ‘তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে নীতি নির্ধারণ করা উচিত। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওই সময় বিজ্ঞানকে গ্রাহ্য করা হয়নি বলে আমি মনে করি। বিজ্ঞানী হিসেবে আমরা তো শুধু তথ্য-প্রমাণ দিতে পারি। নীতি নির্ধারণের কাজটি সরকারের।’ 

তবে কয়েকজন বিজ্ঞানী বলছেন, সংক্রমণ যে হারে ছড়াচ্ছে, তা অনেক বিজ্ঞানীও অনুমান করতে পারেননি এবং এ বিষয়ে শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল জেনোমিক্সের পরিচালক সৌমিত্র দাস বলেন, ‘সরকারকে দোষ দেওয়ার কোনো মানে নেই এখানে।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এনসিডিসি’র পরিচালক সুজিত কুমার সিংহ সম্প্রতি এক অনলাইন বৈঠকে বলেছেন, এপ্রিলের শুরু থেকেই ভারতে কঠোর লকডাউন শুরু করা উচিত ছিল। রয়টার্সের কাছে ওই বৈঠকের রেকর্ডিং আছে।

১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সুজিত কুমার বলেন, ‘আমাদের মতে এর জন্য (লকডাউন) সঠিক সময় ছিল আরও ১৫ দিন আগে।’

আরও পড়ুন:

মহামারিতে ভারতের অসহায় আত্মসমর্পণ ও কেরালার সাফল্য

যে কারণে ভারতের করোনা সংকটে উদ্বিগ্ন বিশ্ব

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago